বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার হীন উদ্দেশ্যে আইনের দোহাই দিয়ে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া থেকে খালেদা জিয়াকে বঞ্চিত করছে এবং এভাবে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের আইনমন্ত্রী ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার দোহাই দিয়ে বলছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি দেওয়ার সুযোগ আইনে নেই। যদিও সিনিয়র আইনজীবীরা গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন সরকার চাইলে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে আইনে কোনো বাধা নেই।’

‘ইতোমধ্যে তিনি লিভারের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি দুইটি কিডনি দুর্বল হয়ে পড়েছে। মেডিকেল বোর্ড বারবার বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দিচ্ছে। সবশেষ গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে বেগম জিয়া ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে মাঝে মাঝে সিসিইউতে নেওয়া হচ্ছে। তার অবস্থার একটু উন্নতি হলে আবার কেবিনে ফেরত আনা হয়।’

‘এভারকেয়ার হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের আটজন অধ্যাপকসহ ১৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড সর্বসম্মতভাবে খালেদা জিয়াকে প্রয়োজনীয় যথাযথ চিকিৎসার জন্য বিদেশে কোনো আধুনিক, উন্নত ও বিশেষায়িত হাসপাতালে দ্রুত স্থানান্তরের পরামর্শ দিয়েছেন। এই অবস্থায় ডাক্তাররা পরিবারকে বারবার চাপে রাখছেন বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে শর্তে দেশনেত্রীর দণ্ড স্থগিত করে বাসায় থাকতে দেওয়া হয়েছে তা সরকারের পক্ষে বদলানো সম্ভব নয়। খালেদা জিয়াকে জেলখানায় ফিরিয়ে নিয়ে আদালতে আপিল করলে শুধু আদালতই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন বলে আইনমন্ত্রী বলেছেন। স্মরণ থাকার কথা, এই আইনমন্ত্রীই একসময় বলেছিলেন, যে দণ্ড স্থগিত করে বাসায় থাকতে দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই, এটা পারেন শুধুই আদালত। অথচ তার কিছুদিন পরেই সরকারের নির্বাহী আদেশে দেশনেত্রী বাসায় এসেছিলেন।’

‘এবারও দেশবরেণ্য আইনজ্ঞরা বলেছেন যে, সরকার চাইলেই দণ্ড স্থগিতের নির্বাহী আদেশ সংশোধন করে দেশনেত্রীকে সু-চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪০১ ধারায় কোথাও সরকারের এমন সিদ্ধান্ত দিতে বাধা দেয় না। এজন্য প্রয়োজন শুধু সরকারের সদিচ্ছা। খুব অসুস্থ এবং দেশে চিকিৎসা অসম্ভব হওয়া সত্ত্বেও সিনিয়র সিটিজেন একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসা নিতে বাধা দেওয়া শুধু অমানবিক নয়, সংবিধান লঙ্ঘন ও বেআইনি।’

খালেদা জিয়াকে নিয়ে লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এত অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য যিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন, তিনি দিতে পারেন বলে আমরা কল্পনাও করতে পারি না। তার বক্তব্যে একটা জিনিস প্রমাণিত হয়েছে যে, রাজনৈতিকভাবে এই দেশের মালিক একজনই। দেশে শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ নেই। বিচার বিভাগও তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রশাসনের কোনো আইন-কানুনের তোয়াক্কা তিনি করেন না। যাবতীয় অকর্মের নির্দেশদাতাও তিনি।’ 

‘প্রধানমন্ত্রী গতকাল তার বক্তব্যে বলেছিলেন যে, যেদিন তাকে ক্যান্টনমেন্টে ডুকতে বাধা দেওয়া হয়েছিল... সেদিন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কোনোদিন সুযোগ পেলে খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে দেবেন। তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে, এখানে আদালত ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডে কী হয়েছিল।’ 

খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর বিনিময়ে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রসঙ্গটি এসেছিল— এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) পরিবার থেকে তো পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছে তিনি কোনো শর্তসাপেক্ষে দেশের বাইরে যাবেন না।’

খালেদা জিয়াকে অসুস্থ অবস্থায় রেখে আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়ার সুযোগ আছে কি না? জানতে চাইলে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘প্রশ্নই উঠতে পারে না, শুধু বেগম জিয়াকে এই অবস্থায় রেখে নয়, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। আগেও এটা পরিষ্কার কথা বলেছি, এখন আবার পুনরায় বললাম।’ 

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপির পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী? জানতে চাইলে দলের মহাসচিব বলেন, ‘এখানে চিকিৎসা চলবে। চিকিৎসকরা তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসাটা দেওয়া চেষ্টা করছেন। আমরা তো আর জোর করে উনাকে নিয়ে (বিদেশে) চলে যেতে পারব না। এটা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। যেভাবে এখন আছে সেভাবে চিকিৎসা করব। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে দেশনেত্রীর বিদেশে চিকিৎসা সম্ভব।’ 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।

এএইচআর/কেএ