মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দাবি, ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের দায় বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। আর এটি বাংলাদেশের জন্য অসম্মানের বলে মনে করছেন তিনি।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকা পোস্টরে সঙ্গে আলাপকালে ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে দলটির অবস্থান তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারি কর্মকর্তা, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও বিচারকমণ্ডলী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সরকারি দলের লোকজনের বিরুদ্ধে ভিসানীতি কার্যকর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসানীতি বাংলাদেশে জন্য সম্মানজনক নয়। কারণ এ ধরনের সমস্যায় বাংলাদেশ পড়ার কথা ছিল না। কেননা, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে, যুদ্ধ করে বাংলাদেশে স্বাধীন হয়েছে।

আরও পড়ুন : ভিসা বিধিনিষেধ আসা নিয়ে সরকার চিন্তিত নয়

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দায়ী উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার, যারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে, তারা গত ১৫ বছর ধরে মানুষের অধিকার হরণ করেছে। তাদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য গুম, খুন, হত্যা, নির্যাতন সবকিছু তারা চালিয়ে গেছে। ফলে আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

মির্জা ফখরুল ২০১৪ ও ১৮ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, গত দুটি নির্বাচনে তারা একই কাজ করেছে। এজন্য বর্তমান সরকারের ওপর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো আস্থা রাখা যায় না। সে কারণে আজ বাংলাদেশের ওপর ভিসা নীতি আরোপ করা হয়েছে। এটার জন্য একমাত্র দায়ী সরকার। অন্য কেউ এ জন্য দায়ী নয়। এমনকি যেসব সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অন্যায় কাজ করেছেন এবং করছেন তারাও সরকারের নির্দেশে এসব করছেন। আমি মনে করি, ভিসা নীতি দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়ুন : ভিসা নীতি ঘোষণার পর পর্যালোচনা করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে : লু

ভিসা বিধিনিষেধে বিরোধী দলের রাজনীতিবিদদেরও নাম এসেছে। এ বিষয়ে বিএনপির মনোভাব কী? এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা কীভাবে তারা মিন করেছে তা আমি জানি না। কারণ ১৫-১৬ বছর ধরে বিরোধী দল তো সরকারের হাতে মার খেয়ে গেছে। আর তো কিছুই হয়নি। বিরোধী দলের তো এখানে অন্য কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই, প্রশ্নই ওঠে না।

বাংলাদেশে অফিসিয়ালি বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, তাহলে কি এখানে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি ভিসা নীতির আওতায় আসছে? এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এ বিষয়ে আমি জানি না। তারা বিরোধী দল বলতে কাকে বুঝিয়েছে আমি সেটাও জানি না। কারণ, নামগুলো তো তারা প্রকাশ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। সুতরাং এখানে বলাটাও মুশকিল আছে।

বিধিনিষেধ আরোপ সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেমন ভূমিকা রাখতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা নিশ্চয়ই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। কারণ, যারা অন্যায়-অত্যাচার করছে, বিশেষ করে আমেরিকাতে যাদের সম্পদ ও পরিবার আছে, ছেলে-মেয়ে আছে, তাদের ওপর তো তার (ভিসা বিধিনিষেধের) একটা প্রভাব পড়বে।

আরও পড়ুন : বাংলাদেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপে আজই ‘পদক্ষেপ’ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ফখরুল বলেন, ডোনাল্ড লু যেটা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ যা চায়, আমেরিকাও তাই চায়। সেটা তো যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই চাইবে। আমরা বারবার বলে এসেছি, বাংলাদেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব দলের অংশগ্রহণের জন্য গণতান্ত্রিক বিশ্বের সমর্থন থাকবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে বলে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে যাচ্ছেন বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলের সদস্যরা। যদিও এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় যারা পড়তে যাচ্ছেন তাদের নাম উল্লেখ করেনি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

এএইচআর/এনআই/এসকেডি