রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মানুষ আস্থা আনতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস।

তিনি বলেন, যারা ৩১ দফা দিয়েছেন তারা ক্ষমতায় গেলে আসলেই কী তা বাস্তবায়ন করবেন? তত্ত্বাবধায়ক যদি হয়, বিএনপি জোট যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে তারাই কিন্তু এটা বাতিল করে দেবে। আওয়ামী লীগ যেমন করেছে। অনেকগুলো দফা তারা দেয়। পরে তারাই সেটা মানে না। 

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) ‌‘সমঝোতা নাকি সহিংসতা: কোন পথে আমরা?’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এই সভার আয়োজন করে।

ড. রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ক্ষমতার ঝুঁকিই হচ্ছে স্বৈরাচারী হয়ে যাওয়া। এজন্য সবসময় ক্ষমতাকে পাহারা দিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু আমাদের কোথাও এই জায়গা তৈরি হচ্ছে না। নষ্ট হয়ে গেছে। 

কেউই দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না এই বিধান আনা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. সাখাওয়াত হোসেনসহ আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও বিভিন্ন দলের নেতারা বক্তব্য দেন।

সভায় স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, বলা হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে ক্ষমতাসীনরা আর থাকবে না। আর না আসলে যারা ক্ষমতায় আছে তারাই থাকবে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ভোটের তেমন পার্থক্য নেই। কাজেই একটি দলকে বাইরে রেখে শাসনব্যবস্থা চলতে পারে না।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমরা সমঝোতা চাই এই বিষয়ে আগে সমঝোতা হতে হবে। সংঘাতের কথা এখন বলা হচ্ছে দুই বড় দল থেকেই। কেন সমঝোতা হওয়া দরকার দলগুলো নিয়ে ভাবা উচিত। নির্বাচন ব্যবস্থা ধারাবাহিকভাবেই ভেঙেছে। একদিনে তো ভাঙেনি। আমাদের এখন সমঝোতা যেটা হওয়া দরকার প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা। সেখানে কারো হাত দেওয়া উচিত হবে না। ভোটের দিন কারোরই কিছু করার থাকে না, টিএনও, ডিসি নির্বাচন কর্মকর্তা ছাড়া। এজন্য আমূল পরিবর্তন করতে হবে।

তিনি বলেন, যারা সরকারকে উৎখাত করতে চাচ্ছে তাদের বুঝতে হবে এটা এখনই সম্ভব না। তাই বলে কী তারা রাজনীতির করবে না। দু’টি পক্ষই পরস্পরকে পর্যদস্তু করার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বিদেশিরা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে শুদ্ধ করতে পারবে না। আমদানি করা জিনিস দিয়ে গণতন্ত্র শুদ্ধ করা যায়নি কোনো দেশেই। কাজেই সকলের সুবিধা হবে এমন বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। একটা গ্রহণযোগ্য পন্থা বের করতে হবে।

মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, সমাজটাই দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছে। বিভক্ত সমাজে নতুন কিছু আশা করা যায় না। বিয়ের অনুষ্ঠানে বা জানাজাতে অপর পক্ষের কেউ অংশ নেন না।

তিনি বলেন, এই ভূখণ্ডে তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা ছাড়া কোনো আলোচনা হয় না। কেউ হারতেও চায় না। নেতারা চাইলেও পারবেনা না। কারণ দুই দলের দু’টি শক্তিশালী গ্রুপ, কোনো অবস্থাতেই তারা সমঝোতার দিকে নিয়ে যেতে চান না। কারণ তারা চান─ আমরা যেটা চাই সেটাই হোক। এই পরিস্থিতি প্রতিবারই আলোচনা হয়। কোনো লাভ হয় না।

এই খেলাটা কেবল আওয়ামী লীগ, বিএনপির না। এই খেলাটা সুপার পাওয়ারের। সুপার পাওয়ারের একটা নগ্ন লীলাভূমি হয়ে গেলে এই বাংলাদেশ। এই খেলায় আমরা কে জিতবে তা আরও পরে নির্ধারিত হবে। আগামী দিনে কী কোনো রাজনৈতিক পণ্ডিত এ নিয়ে বলতে পারবে না। এজন্য রাজনীতিবিদদের আগে ঠিক হতে হবে। তারা ঠিক না হলে হবে না। তারাই পারেন সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে।

জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করা সংসদ সদস্য বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, সততার কথা এসেছে। আমরা যারা সরকারি দল করছি, তারা কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি যার ভোট সেই দিতে পারবে। আর যেই জিতে আসুক তার হাতেই ক্ষমতা দিতে হবে।

তিনি বলেন, সমঝোতার ন্যূনতম লক্ষণ দেখছি না। রাজপথে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে দাবি আদায় করতে হবে। এতে গৃহযুদ্ধ যদি নাও হয় প্রচুর রক্তপাতের শঙ্কা করছি।

প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, আগামী তিনমাসে সমাধান হওয়ার খুব কঠিন বলে মনে করি। ১৯৯৬ সালে যে ব্যবস্থা হয়েছিল সেটা হওয়ার মতো অবস্থা আছে বলে মনে করি না। একটা সমাধান আসা উচিত। তবে তিন মাসের মধ্যে এটা করা খুবই কঠিন। তবে সরকার যেহেতু বলছে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়, সেহেতু তাদের উচিত বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে আনার ব্যবস্থা করা।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, একটা প্রস্তাব আমরা করব সেটা যেন প্র্যাকটিক্যাল হয়। আমরা নির্বাচন কেন্দ্রিক সমস্যা কি করে সমাধান করা যায়, আমরা সেটা নিয়ে ভাবছি। এখন এটা করতে গেলে আমরা একাডেমিক আলোচনা করতে হবে। এককভাবে কোনো দল এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। সততার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে ক্ষমতায় থাকি, বিরোধী দলের থাকি একমত হতে হবে। একটা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান করার বিষয়ে আমাদের পার্টি হাইকমান্ডের ভেতরেও দেখেছি। এখন একসঙ্গে সব করতে গেলে আবার জগাখিচুড়ি বেঁধে যাবে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কী করে দলগুলোকে দিয়ে আলোচনা করবেন, সেটা বুঝতে পারছি না। দুই মেরুতে দুই দল। এ নিয়ে সমঝোতার বিষয় আছে। কতগুলো বিষয় আরও আগে আমাদের ফোকাস করা উচিত ছিল। সমঝোতার বিষয়টি সংবিধানেও আছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) দলের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় বৈঠকে অন্যদের মধ্যে যুক্ত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।

এসআর/এমএ