যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের সেলফি নিয়ে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, 'এই জাতির দুর্ভাগ্য কোথায় জানেন, আমরা বেসিক জায়গায় কেউ যাই না। আমরা সেলফির মতো ইস্যুতে যাই। হোয়াট ইজ দ্য এক্চুয়াল ইস্যু?’

তিনি বলেন, ‘দেউলিয়া হয়ে গেছে বলেই জো বাইডেনের সঙ্গে সেলফি তুলে তারা এখন ঢোল পেটাচ্ছে।’

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বিএনপির সাবেক স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য এম সাইফুর রহমানের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যের তিনি এ মন্তব্য করেন।

আরও পড়ুন : ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চরমভাবে ব্যর্থ মন্ত্রী-দুই মেয়র : মির্জা ফখরুল

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি বলি আমার, পরামর্শটা নেবেন— এই ছবিটা বাঁধিয়ে গলার মধ্যে নিয়ে ঘুরে বেড়ান। এটা আপনাদের যথেষ্ট সাহায্য করবে। আপনারা জনগণকে বুঝানোর চেষ্টা করেন, আমেরিকার বাইডেন এখন আমার সঙ্গে আছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনার এই প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগে তিনি কি বললেন! তিনি বললেন যে, আমেরিকা এখন বলছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নাকি তাকে দিয়ে দেওয়ার জন্য। যেহেতু সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দিচ্ছে না, সেজন্য আমেরিকা নাকি তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়, উনি নিজে বলেছেন। তাহলে এখন কি বুঝবো আমরা, আপনি সেন্ট মার্টিন দ্বীপটা দিয়ে দিয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘কয়দিন আগে আবার উনি আরেকটা কথা বলেছেন— এই এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে আমেরিকা চায় সেখানে বেস করবে এবং গোটা এই এলাকাতে সেই প্রভুত্ব করবে, দেশগুলো দখল করবে আক্রমণ করবে এভাবে কথা বলেছেন। এটা আমেরিকা আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশ নয়, তার যে চিন্তা-ভাবনা গ্লোবাল স্ট্রাটেজি সবকিছু তাকে তার মতো করে করে। তাতে করে র‍্যাবের ওপর থেকে স্যাংশন উঠে যায়নি, সেলফির জন্য। ভিসা নীতির পরিবর্তন হয়নি। তার জন্য নতুন ডেমোক্রেসি কনভেনশন ডেকে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ‌সুতরাং ভেবেচিন্তে কথা বলবেন। কথাগুলো আপনারা বলেন, কিন্তু ভেবে চিন্তে বলেন না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এত দেউলিয়া, এত নিঃস্ব হয়ে গেছে যে বাইডেনের সঙ্গে একটা সেলফি তুলে এখন আপনি ঢোল পেটাচ্ছেন, যে হ্যাঁ- আমরা জিতে গেছি। জেতাবে তো বাংলাদেশের মানুষ। ভোটের মাধ্যমে সেই ভোটটা ঠিকমতো হওয়ার ব্যবস্থা করেন। তা না হলে কোনো বাইডেনই আপনাদের রক্ষা করতে পারবে না। সেলফি রক্ষা করতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘পরিষ্কার কথা— ভারতে গিয়ে যে ধরনের কথাবার্তা বলছেন, যেখানে যান যত ছবি দেখাতে চান, কিন্তু যদি জনগণ ভোট দিতে না পারে তারা নিজের ভোটটা নিজেরা দিতে না পারে তাহলে জনগণ কখন আপনাদের ক্ষমা করবে না। আপনারা ক্ষমতায় ঠিক থাকতে পারবেন না। খুবই পরিষ্কার কথা।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাইরের বা আমেরিকা তারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি খুব পরিষ্কার করে বলেছে, তারা বলেছে, আমরা বাংলাদেশের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চাই। ‌ তারা বলেছে, আমরা এখানে সব দলের অংশগ্রহণ একটা ভালো নির্বাচন দেখতে চাই। যেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এটা শুধু আমেরিকান নয়, সমস্ত গণতান্ত্রিক বিশ্ব তাই বলছে।‌’ 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আমাদের জনগণের মতামত কি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই। সেই জনগণ পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছে যথেষ্ট হয়েছে, অনেক লুট করেছ, অনেক নির্যাতন করেছো, নিপীড়ন করেছ, অনেক ধ্বংস করেছ, মানুষকে হত্যা করেছ, খালেদা জিয়াকে বিনা দোষে আটক রেখে আজকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তারেক রহমানকে সাধারণ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসিত করেছ তোমরা। সুতরাং অনেক হয়ে গেছে, দয়া করে এখন বিদায় হও। তা নাহলে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল এক হয়েছে। তারা বলেছে সংসদ বিলুপ্ত করুন, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে নির্বাচন করে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে দিন।’

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে এত ভয় কেন? কেয়ার টেকার সরকারের নির্বাচন করতে এত ভয় কেন? আমরাও তো দিয়েছি, ম্যাডাম তো দিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ আপনারা জানেন যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তাহলে ১০টা আসনও পাবেন না। পরিষ্কার করে বলছি আমি, এই দেশের মানুষ এখন আপনাদের আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’

প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের ছেলে নাসির রহমানের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জীবন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু প্রমুখ।

এমএইচএন/এসএম