ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয়ার্ধে অথবা জানুয়ারির শুরুতে অনুষ্ঠিত হতে পারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনা করতে দেশের বিরোধী দল ও বিদেশি কূটনীতিকরা নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন। তবে, নির্বাচনের আগে বিদেশিদের চাপের চেয়েও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বেশি ভাবাচ্ছে ক্ষমতাসীনদের। দ্রুত দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এর প্রভাব ভোটের ফলে পড়তে পারে বলে মনে করছেন দলটির শীর্ষনেতারা। এক্ষেত্রে সরকারকে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। সাধারণ মানুষেরও কষ্ট হচ্ছে। মানুষের যাতে কষ্ট কম হয় সেজন্য সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি চলছে। যার প্রভাব আমাদের দেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চেষ্টা ও তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার। যুদ্ধ যত দ্রুত বন্ধ হবে মানুষের কষ্টও দ্রুত কমবে। দেশের মানুষের অসুবিধা হচ্ছে, এটি দূর হলে আমাদেরও ভালো লাগবে।

২০২৩ সাল নির্বাচনের বছর। আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৪ বছরে দেশের অনেক উন্নয়ন করেছে। এই উন্নয়ন শুধু শহরে নয়, গ্রাম পর্যায়েও পৌঁছে গেছে। তার সঙ্গে আরেকটি বিষয়ও যুক্ত হয়েছে, সেটি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সিন্ডিকেট। যা গত ১৪ বছরে তৈরি হয়েছে। তারা একচেটিয়া ব্যবসা করেছে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাম বাড়িয়েছে। কোনো কারণে বিশ্ববাজারে একটু দাম বাড়লেই তারা দ্বিগুণ, অনেক সময় তিনগুণ বাড়িয়েছে। এখন সময় এসেছে, এসব সিন্ডিকেট ভাঙার।

‘মূল্যস্ফীতির সমস্যা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বের। তারপরও এ সমস্যা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। সিন্ডিকেটের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ব্যবসায়ীরা সৎভাবে ব্যবসা করবে, নিয়ম-কানুন মেনে ব্যবসা করবে, মুনাফা করবে, এটি নিয়ে কোনো কথা নেই। তাদের কাছ থেকে আমরা দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি।

আরও পড়ুন : তৃণমূলেও নির্বাচনী হাওয়া, দৃষ্টি ‘ঢাকা’ 

বাহাউদ্দিন নাছিম আরও বলেন, বড় বড় সিন্ডিকেটের কারণে সাধারণ মানুষের স্বার্থ নষ্ট হচ্ছে। মুষ্টিমেয় সিন্ডিকেটের কারণে দেশের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এসব সিন্ডিকেটকে ধরা দরকার, এসব সিন্ডিকেট ভাঙার দরকার। নিজেদের লাভের জন্য একটি গোষ্ঠী বেআইনিভাবে পণ্য মজুত করে মূল্য বাড়িয়ে দেয়। এদের কঠোর শাস্তির মধ্যে আনা দরকার। সেই সিন্ডিকেটকে ভেঙে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজটা আমরা করব।

আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতার ভাষ্য, ২০২৩ সাল নির্বাচনের বছর। আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৪ বছরে দেশের অনেক উন্নয়ন করেছে। এই উন্নয়ন শুধু শহরে নয়, গ্রাম পর্যায়েও পৌঁছে গেছে। তার সঙ্গে আরেকটি বিষয়ও যুক্ত হয়েছে, সেটি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সিন্ডিকেট। যা গত ১৪ বছরে তৈরি হয়েছে। তারা একচেটিয়া ব্যবসা করেছে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাম বাড়িয়েছে। কোনো কারণে বিশ্ববাজারে একটু দাম বাড়লেই তারা দ্বিগুণ, অনেক সময় তিনগুণ বাড়িয়েছে। এখন সময় এসেছে, এসব সিন্ডিকেট ভাঙার।

আরও পড়ুন : জাতীয় নির্বাচনের আগেই ‘স্মার্ট’ হচ্ছে আওয়ামী লীগ

তবে নির্বাচনের আগে সিন্ডিকেট ভাঙা দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তারা বলছেন, আমাদের এতো উন্নয়ন মুষ্ঠীমেয় ব্যবসায়ীর জন্য ধূলিসাৎ হতে দেওয়া যাবে না। নির্বাচনের পূর্বেই এসব সিন্ডিকেট ভেঙে সাধারণ ভোটারদের মন জয় করতে হবে। ভোটের মাঠে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আওয়ামী লীগের জন্য ‘বিষফোঁড়া’য় রূপ নেবে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এক সংবাদ সম্মেলনে দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ওঠে আসে। সেখানে এক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, সিন্ডিকেটের কথা দায়িত্বশীল মন্ত্রীরাও বলেন। তারা বলেন, সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যায় না। সেখানে হাত দিতে গেলে বিপদ আছে। আমরা মনে করি, সরকার অত্যন্ত শক্তিশালী। সরকার দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে; নিত্যপণ্যের মৌসুমি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে কী না তা জানতে চান তিনি।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘বিপদ আছে কে বলেছে, আমি ঠিক জানি না। আমরা তো সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন? বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধরব তো।’

তিনি বলেন, খাদ্যপণ্য নিয়ে কয়েকটা হাউজ ব্যবসা করে। যখনই তারা দাম বাড়ায় আমরা আমদানি করি, বিকল্প ব্যবস্থা করি। যাতে তারা বাধ্য হয় দাম কমাতে। আমরা তো সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই। কাজেই সিন্ডিকেট থাকলে তা ভাঙা যাবে না, এটি কোনো কথা না। কত শক্তিশালী সিন্ডিকেট আমি জানি না, আমি দেখব কী ব্যবস্থা করা যায়।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সমস্যা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই। আমাদের দেশে কিছু সুবিধাভোগী বড় ব্যবসায়ী রয়েছে, এদের কোনো নীতি-নৈতিকতা নেই, সততা নেই। প্রধানমন্ত্রী এগুলো মনিটরিং করছেন। আশা করছি, সিন্ডিকেটের কবল থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারব।

আরও পড়ুন : ঢাকা-১৩ : নানক, সাদেক নাকি বজলু?

তিনি আরও বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বৈশ্বিকভাবে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফটকা ব্যবসায়ীদের কারণে এটির দায়ভার সরকারে ওপর পড়ে। যারা ব্যবসার নামে রাতারাতি কোটি টাকার মালিক করতে চায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিরোধী দলের চাওয়া-পাওয়া আর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ক্ষমতাসীনদের ভাবাচ্ছে। নির্বাচনের পূর্বে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখার চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ। ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে জিনিসপত্রের যতটুকু দাম বেড়েছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার চিন্তা করছে সরকার। নির্বাচনের আগে সিন্ডিকেট যাতে দাম বাড়াতে না পারে তার জন্য সরকারকে সতর্ক থাকতে বলবেন দলের শীর্ষ নেতারা। প্রয়োজনে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের তালিকা করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলবেন তারা।

আরও পড়ুন : ছেলেকে ‘বিকল্প’ রেখেছেন হাজি সেলিম, আসন ফেরত চান মোস্তফা জালাল

এ প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দ্রব্যমূল্য জনগণের নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা। বাংলাদেশকে জ্বালানিসহ প্রচুর সামগ্রী আমদানি করতে হয়। আবার আমাদের কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতে যা নিজেরা উৎপাদন করি তারও বেশ কিছু কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। স্বল্প আয়তনের ভূমিতে অত্যধিক জনসংখ্যার দেশ হওয়ার কারণে আমাদের আমদানি পণ্যের তালিকা বেশ দীর্ঘ। ফলশ্রুতিতে আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশকে ভুগতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করার পরও আন্তর্জাতিক অস্থিরতা ও মুক্তবাজার নীতির কারণে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশের এক চতুর্থাংশ পরিবারকে টিসিবির মাধ্যমে কমমূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করে গরিবের কল্যাণ এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ করার প্রাণপণ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ভোটের মাঠে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রভাব ফেলবে। কিন্তু আবেগের বশবর্তী হয়ে জনগণ আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য দলকে নির্বাচিত করলে দ্রব্যমূল্য আরও অনেক বেড়ে যাবে। অন্যান্য দলের আওয়ামী লীগের মতো দক্ষতা ও গরিব প্রেম নেই। আমরা জনগণকে রূঢ় সত্য ভালোভাবে বোঝাতে পারলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

এমএসআই/এসকেডি