ভারত সফর নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন জাপা চেয়ারম্যান
জিএম কাদেরের ‘নীরবতা’র অনুবাদ— নির্বাচনকালীন সরকার হবেই!
ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির আমন্ত্রণে ৩ দিনের সফরে সম্প্রতি দেশটিতে গিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। ওই সফরে আলোচনার বিষয়বস্তু কী ছিল তা নিয়ে এখনো মুখ খুলছেন না তিনি। এ অবস্থায় চারদিকে নানা কথা ছড়াচ্ছে, নতুন ‘ইস্যু’ ডালপালা মেলছে। সফরে যাওয়া জাপার অন্য নেতারাও মুখ না খোলায় এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমও খুব একটা তথ্য পাচ্ছে না।
জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা বলছেন, জিএম কাদের ভারত থেকে আসার পর দলের কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। এ মুহূর্তে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে আছেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও। যে কারণে বৈঠক ডাকা সম্ভব নয়। তবে ব্যক্তিগতভাবে দলের প্রেসিডিয়ামের কয়েকজন সদস্য জিএম কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি ভারত সফরে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে তাদের জানিয়েছেন। তবে কী আলোচনা হয়েছে, বিষয়বস্তু কী ছিল, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি। ওই নেতাদের ভাষ্য, একটা বার্তা পরিষ্কার— আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি।
বিজ্ঞাপন
চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে একটা বিষয়ে কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সেটা হচ্ছে— আগামী নির্বাচনের আগে একটা নির্বাচনকালীন সরকার হবে। তবে, সেটার আকার কী হবে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সরকারের প্রধান হবেন নাকি অন্য কেউ হবেন সেটা খোলাসা করেননি চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি যেহেতু ভারত সফরে ছিলাম না সেহেতু সেখানে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা আমার জানা নেই। চেয়ারম্যান সফর থেকে আসার পর তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ভারত এখানে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। জাতীয় পার্টির প্রতি তাদের আস্থা রয়েছে। তাছাড়া জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী একটি দল।
আরও পড়ুন : ভারত সফর নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারব না : জিএম কাদের
জিএম কাদেরের সঙ্গে ভারত সফরে সঙ্গী ছিলেন তার স্ত্রী শরীফা কাদের। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি কিছু বলতে পারব না। কারণ, আমি সবগুলো মিটিংয়ে অংশ নিইনি। গুরুত্বপূর্ণ কিছু মিটিংয়ে উনি (জিএম কাদের) একাই অংশ নিয়েছেন। উনি তো বলেছেন, আলোচনার কথা বাইরে না বলাই ভালো। হয়ত আস্তে-আস্তে বের হবে। দিন-দিন তো অনেক কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। আস্তে-আস্তে সবকিছু জানতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, এই যে আমরা ভারত সফরে গেলাম, আর এখানে (বাংলাদেশে) রওশন এরশাদকে অনেক কিছু করা হয়ে গেল! আমরা চাই সবদিক থেকে দেশের ভালো কিছু হোক।
জিএম কাদের ভারত থেকে আসার পর তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ভারত সফরে আলোচনা ভালো হয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ভালো। এখানে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছে ভারত : দ্য হিন্দু
জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র বলছে, চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে একটা বিষয়ে কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সেটা হচ্ছে— আগামী নির্বাচনের আগে একটা নির্বাচনকালীন সরকার হবে। তবে, সেটার আকার কী হবে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সরকারের প্রধান হবেন নাকি অন্য কেউ হবেন সেটা খোলাসা করেননি চেয়ারম্যান। এছাড়া রওশন এরশাদের বারবার দলের চেয়ারম্যান হওয়া নিয়ে যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে তা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত দেখা গেছে জিএম কাদেরকে। আসলে যখনই তিনি সরকারের বেশি সমালোচনা করেন তখনই তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন রওশন এরশাদ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির এক কো-চেয়ারম্যান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চেয়ারম্যানের কথাবার্তায় নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। দলের বৈঠক হলে সেখানে এই বিষয়টি খোলাসা হবে। আর আমরা এটা বুঝি, সরকারের সমালোচনা করলে তাদের ইন্ধনে রওশন এরশাদ সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এটা আসলে জিএম কাদেরকে চাপে রাখার একটা কৌশল।
আরও পড়ুন : আ.লীগের দোহাইয়ে নোঙর প্রতীকে আপত্তি জাপার
জিএম কাদেরের সঙ্গে ভারত সফরে ছিলেন তার বিশেষ দূত মাসরুর মাওলা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ আছে। তারা চায় এখানে একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তাদের চাওয়া সব দলই যেন নির্বাচনে অংশ নেয়। তারা এখানে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ দেখতে চায়।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টিকে নিয়ে তাদের বিশেষ কোনো বার্তা নেই। জাতীয় পার্টিকে তারা পছন্দ করে, এটাই আরকি। চেয়ারম্যান তো বলেছেন, আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। এখন পর্যন্ত ৩০০ আসনের প্রস্তুতির কথা তিনি জানিয়েছেন।
ভারত সফর শেষে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে নেমে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছিলেন, ভারত এখানে একটি ভালো ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। নির্বাচনের আগে এবং পরে যেন কোনো সহিংসতা না হয় সেটা তারা চায়। কারণ বাংলাদেশে তাদের অনেক বিনিয়োগ আছে।
এএইচআর/এসকেডি