আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও স্বাধীনতা রক্ষা করার কথা বলতে হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারীরা বাংলাদেশকে কী দিয়েছে? তারা উপহার হিসেবে এ দেশকে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়েছে। এ আইনে তারা বলেছে, যারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছে তাদের বিচার করা যাবে না। তাদের কোনো কোর্ট প্রশ্ন করতে পারবে না কেন হত্যা করেছে?  এ বিষয়টি আপনারা খতিয়ে দেখতে পারেন। আমার জানামতে সারা বিশ্বে এমন আইন বিরল।

বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সম্প্রীতি বাংলাদেশের আয়োজনে ‘আগস্ট ট্রাজেডি : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।

মন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে তারা আরেকটি বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা তার স্বপ্নকে আবার বাঁচিয়ে তুলতে পারত এমন চার নেতাকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হলো। অথচ জেলখানায় বন্দিরা সরকারের নিরাপত্তায় থাকে। সেখানে সুপরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করেছে। আজকে অনেক মানবাধিকার সংগঠন ও এনজিও প্রশ্ন করে জেলখানায় কেন মারা গেলো? কেন চিকিৎসা নিতে গিয়ে মরল? অথচ জাতীয় এ চার নেতাকে জেলখানায় হত্যা করা হলো তা নিয়ে কিন্তু কেউ মুখ খোলে না। সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন জাগ্রত হয় না।

মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে যারা হত্যা করেছিল তাদের সবাইকে বিদেশে যাওয়ার সুবিধা করে দেওয়া হলো। তারা যাতে বিচারের সম্মুখীন না হন সেই সুবিধাই দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতায় বসে জিয়াউর রহমান তার আজ্ঞাবহ সবাইকে পুরস্কৃত করলেন। যদি কেউ পিয়ন হওয়ার ক্ষমতা রাখেন তাকে সচিব বানিয়ে দিলেন, কাউকে অ্যাম্বাসেডর বানিয়ে দিলেন। এভাবেই তাদের প্রতিষ্ঠিত করলেন। পাশাপাশি তিনি একটি বার্তা দিয়ে দিলেন এদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। এরা সরকার দ্বারা নিরাপত্তায় রক্ষিত।

তিনি বলেন, আপনারা সবাই জানেন তিনি (জিয়াউর রহমান) রাজাকার আল-বদরদের নিয়ে সরকার গঠন করলেন। যারা দেশবিরোধী তাদের নিয়েই সরকার গঠন হলো। তারাই ১৯ বার শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা করে। এগুলাই তাদের উপহার। আজ তারা লম্বা লম্বা কথা বলেন। তবে আমি যে তালিকা দিলাম তার উত্তর তারা দিতে পারবে না। তারা সারা দেশের সব কোর্টে একযোগে বোমা হামলা উপহার দিয়েছে, রমনার বটমূল উপহার দিয়েছে।

তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করেছে। এখনো সেটা অব্যাহত আছে। এতে তাদের লাভ ৩০ লাখ শহীদকে অপমান করা। জাতির জনকের নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা। তার আদর্শকে মুছে ফেলা। কিন্তু আমি বলে দিতে চাই, সে দিন গত হয়েছে। আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা একটি সেবামূলক সরকার ব্যবস্থা সফলভাবে পরিচালনা করছেন। তিনি ক্ষমতায় এসেছেন বলেই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী সিকদার বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশের যে ক্ষতি হয়েছে সেটা আমরা এখনো পূরণ করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আজও আমাদের পাকিস্তানের গোলাম হয়ে থাকা লাগত। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রনীতিতে মিল থাকায় তারা মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে ছিল। বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক দর্শন ছিল অভিন্ন।

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, আগস্ট মাস শুধু শোকের মাস নয় বরং অভিশাপের মাস। এ মাসেই অভিশাপের বিষ ঢেলে দেওয়া হয়েছিল। জিয়াউর রহমানই এ বিষ ঢেলে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল চাবিকাঠি নড়িয়েছিলেন খুনি জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাক। মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিলেন। কিন্তু তিনি মারা গেলে চার্জশিট থেকে নাম সরিয়ে দেওয়া হয়। দেশের আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির নাম চার্জশিটে রাখা যায় না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায় যাদের বুকে রক্তক্ষরণ হয়েছিল তারাই আজ জিয়াউর রহমান ও মোশতাকের পক্ষে কথা বলে। জিয়ার রহমান আসলে একজন অনুপ্রবেশকারী ছিলেন।

সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১৯৭১ এর পরাজিত শক্তিই ২০০৪ এ শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করে। এরাই সাম্প্রদায়িক শক্তি, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। এ শক্তি আন্তর্জাতিক মহলে আজও ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি এ দেশ সবার। ধর্ম যার যার কিন্তু দেশ সবার। আমরা কোনো ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ বা লঘিষ্ঠ নীতিতে বিশ্বাস করি না। ১৯৭৬ সালে রেসকোর্স ময়দানে জিয়াউর রহমান ইসলামী জলসার আয়োজন করেছিলেন। সেখানে অতিথি করা হয়েছিল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে। তিনি ছয় দফা ঘোষণা করে দেশের নাম বদলে ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

এমএম/এসকেডি