জাতীয় নির্বাচনের আগেই ‘স্মার্ট’ হচ্ছে আওয়ামী লীগ
# প্রতিটি জেলা, মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে প্রযুক্তির ছোঁয়া
# প্রযুক্তির মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে বার্তা যাবে তৃণমূলে
# প্রতিটি কার্যালয়ে তৈরি হবে স্মার্ট কর্নার
# তৃণমূলে দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ
দীর্ঘদিন ধরেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। সভা-সমাবেশেও স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছেন দলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারেও বিষয়টি উল্লেখ করার কথা রয়েছে। দেশকে স্মার্ট করার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজেদেরও স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে চায় আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, দেশের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলাকে কেন্দ্র করে ওই পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ২৩টি সাংগঠনিক জেলাতে পরীক্ষামূলকভাবে স্মার্ট আওয়ামী লীগ গড়ার কাজ শেষ হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত নির্বাচনকে টার্গেট করে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মাস্টার প্লানও তৈরি হয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পুরোদমে কাজও শুরু করেছে আগামী নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেই ৭৮টি সাংগঠনিক জেলাকে স্মার্ট আওয়ামী লীগ প্রকল্পের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে সহজেই তথ্য আদান-প্রদানের জন্য প্রতিটি কার্যালয়কে প্রযুক্তি নির্ভর করতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জি. আব্দুস সবুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সময়ের তাগিদে শেখ হাসিনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাই তিনি আওয়ামী লীগে পরিবর্তন নিয়ে আসছেন। প্রতি জেলা, উপজেলা ও মহানগরের সকল কার্যালয়কে স্মার্ট করতে যাচ্ছেন। কারণ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রয়োজন স্মার্ট দল। সেজন্য তিনি এ সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, মুহূর্তের মধ্যে যে কোনো তথ্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে সংযোগ করার জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা তা করছি। আমাদের কাজও শুরু হয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ইতোমধ্যে ২৩ টি জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে স্মার্ট কর্নার চালু করেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব দল কাউকে না দিলেও অঘোষিতভাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার নির্বাচন পরিচালনার কাজ করছেন। তিনি স্মার্ট কর্নারের সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করছেন।
একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আপাতত প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দলীয় অফিসগুলোতে স্মার্ট আওয়ামী লীগ নামে একটি কর্নার থাকবে। সেখানে দুটি ল্যাপটপ ও কম্পিউটার থাকবে। প্রতিটিতে ইন্টারনেট সংযোগ বাধ্যতামূলক করা হবে। এসব অপারেট করার জন্য দুইজন ছেলে ও দুইজন মেয়ে নিয়োগ দেওয়া হবে। দলের নির্দেশনাগুলো মুহূর্তের মধ্যে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলাতে পৌঁছানো হবে। এই দুই জায়গার নেতারা দলের নির্দেশনাগুলো দ্রুত তৃণমূলের কাছে পৌঁছে দেবেন।
এছাড়া বিভিন্ন বার্তাও স্মার্ট আওয়ামী লীগ কর্নারের মাধ্যমে দেওয়া হবে। যেমন- কেন মানুষ নৌকার পক্ষে ভোট ও সমর্থন দেবে, কেন্দ্র থেকে সেজন্য নানা ধরনের ভিডিও বার্তা ও যুক্তি তুলে ধরে বার্তা দেওয়া হবে। আবার বিরোধীরা আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিরুদ্ধে যেসব অপপ্রচার চালাবে সেসব সম্পর্কেও বার্তা দেওয়া হবে স্মার্ট আওয়ামী লীগ কর্নারের মাধ্যমে।
স্মার্ট আওয়ামী লীগ কর্নারের কাজ কী?
যে কোনো জাতীয় ইস্যুতে দলীয় অবস্থান মুহূর্তের মধ্যে তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হবে স্মার্ট আওয়ামী লীগ কর্নার থেকে। এছাড়া নির্বাচনী প্রচারণা দলীয় প্রার্থীরা তাদের গণসংযোগ ও জনসমাবেশে কোন ধরনের বক্তৃতা দেবেন, সেসব বক্তৃতায় কোন কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে সেসবের একটা নির্দেশনা দেওয়া হবে কেন্দ্র থেকে।
নির্বাচনী প্রচারণা যেন সমন্বিতভাবে করা যায় সে উদ্যোগও নেওয়া হবে স্মার্ট আওয়ামী লীগ কর্নারের মাধ্যমে। এ ধরনের উদ্যোগের ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিষয়টি নিয়ে ‘নীরবে’ কাজ করছে আওয়ামী লীগ
পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, অনেক ধরনের চিন্তা,ভাবনা ও গবেষণা করে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা উদ্যোগের পক্ষে মত দিয়েছেন। দলের বেশ কয়েক সিনিয়র নেতার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাদের কাছ থেকে নানা ধরনের পরামর্শ ও মতামত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দলের বিভিন্ন উইংয়ের সহযোগিতা নেওয়ার কথা তুলে ধরা হবে।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেকটা নীরবে কাজ করেছি। কারণ, আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক দল রয়েছে। আমাদের দেখাদেখি হয়ত তারা এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে। তবে আমরা এগিয়ে থাকতে চায়। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের অংশ হিসেবে দলকেও স্মার্ট বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র কয়েকজন নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ও তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনায় এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দলকে স্মার্ট বানানোর এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করবে বলে আমরা মনে করি। কারণ, দেশ ডিজিটালি এগিয়ে গেছে অনেকদূর। সামনে আরও যাবে। তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নেওয়ার এখনই সময়। আওয়ামী লীগে অনেক তরুণ ভোটার ও সমর্থক রয়েছে। তারা এখন প্রযুক্তির যুগে বসবাস করছে। তাই তাদের স্বার্থে ও দলকে আধুনিক পদ্ধতিতে সুসংগঠিতভাবে পরিচালনা করতে স্মার্ট আওয়ামী লীগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কার্যালয়গুলোতে স্থাপন হচ্ছে স্মার্ট কর্নার, তৃণমূলে চলবে প্রশিক্ষণ
আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) সহায়তায় দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়গুলোতে স্থাপন করা হচ্ছে স্মার্ট কর্নার। সেই সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে ক্ষমতাসীন দলটি।
এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ১৫ জেলার ১০০ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের হলরুমে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, নিউজ পোর্টাল ও পত্রিকার তালিকা করা হবে। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের ভার্চুয়াল যোগাযোগ তৈরি ও অনলাইন প্রচারে স্থানীয়দের সমন্বয় করার কাজটি হবে স্মার্ট কর্নারের মাধ্যমে।
প্রশিক্ষণার্থীরা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েছেন। সে অনুযায়ী স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষিসহ সবক্ষেত্রে রোবোটিকস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হবে। স্মার্ট কর্নারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন, সফলতা তুলে ধরা হবে।
তারা আরও জানান, দেশবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রান্ত ও গুজবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া হবে। সাংগঠনিক জেলার স্মার্ট কর্নার তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া প্রত্যেক কমিটির একজন ফোকাল পয়েন্ট, চারজন স্মার্ট ক্যাম্পেইনার (দুজন নারী, দুজন পুরুষ) কাজ করবেন। এরপর একইভাবে প্রত্যেক উপজেলায় ১০ জন করে (৫ জন নারী, ৫ জন পুরুষ) ক্যাম্পেইনার হিসেবে কাজ করবেন।
এমএসআই/এমজে