জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ
ঢাকা-১৩ : নানক, সাদেক নাকি বজলু?
# এখনো নীরব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা
# এলাকায় আসেন না বর্তমান এমপি
# নির্বাচনের ভালো প্রস্তুতি রয়েছে : সাদেক খান
# মনোনয়ন শেখ হাসিনার হাতে : নানক
মোহাম্মদপুর-আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানার একাংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৩ আসন। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাদেক খান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাহাঙ্গীর কবির নানকের জায়গায় নৌকা প্রতীকে দলের টিকিট পেয়েছিলেন তিনি। যদিও একই আসন থেকে এর আগে পরপর দুই বার এমপি হয়েছিলেন নানক।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা-১৩ জাতীয় সংসদের ১৮৬ নম্বর আসন। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরে বাংলা নগরের একাংশ নিয়ে আসনটি গঠিত। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৪ নং ওয়ার্ড এই সংসদীয় আসনের অন্তর্ভুক্ত। সবশেষ তিন নির্বাচনে এ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
আসনটিতে এরই মধ্যে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রার্থী বাছাইয়ের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। আগামী নির্বাচনে কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তা নিয়ে চলছে চুল-চেরা বিশ্লেষণ।
আরও পড়ুন >> ছেলেকে ‘বিকল্প’ রেখেছেন হাজি সেলিম, আসন ফেরত চান মোস্তফা জালাল
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান এমপি সাদেক খান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। এ তিন হেভিওয়েট প্রার্থী ছাড়াও দু-একজন নেতা দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে প্রার্থিতা নিয়ে এখনই কেউ মুখ খুলছেন না।
জানতে চাইলে বর্তমান সংসদ সদস্য সাদেক খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ নির্বাচনের প্রস্তুতি ভালোই চলছে। সাড়ে চার বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগেও অনেক প্রস্তুতি ছিল। এবার নির্বাচনের জন্য আমার খুব ভালো প্রস্তুতি আছে।
সাংগঠনিকভাবে আপনার শক্তি-সামর্থ্য কেমন আছে বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, আমি মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, বিগত সময়ে সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমি দুর্দিনে মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরে বাংলা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। এলাকার জনগণ আমার সঙ্গে আছে। আমি স্বচ্ছভাবে কাজ করছি। এলাকাতেই বসবাস করছি। দলীয় কোনো প্রোগ্রাম থাকলে অংশগ্রহণ করি। তাছাড়া আমি সবসময় নিজের অফিসে থাকি। জনগণ যেকোনো প্রয়োজনে সবসময় আমাকে পায়। আমার এলাকায় এখন দখলদারি, চাঁদাবাজি, মাস্তানি নেই।
আরও পড়ুন : আগস্টে শত্রুর ‘ডালপালা’ নিয়ে সতর্ক আ.লীগ
সংসদ সদস্য হওয়ার পরে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে- এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে এমপি সাদেক খান বলেন, আমার সঙ্গে নেতাকর্মীদের দূরত্ব বাড়েনি। আমি যে কমিটি দিয়েছিলাম তারাই এখনো কমিটি আছে। এখনো তারা কাজ করছে। প্রত্যেকের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে, প্রত্যেক নেতাকর্মীর সঙ্গে আমার কথা হচ্ছে, যোগাযোগ হচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এই আসনের মোহাম্মদপুর, বসিলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তা-ঘাটের অবস্থা খুবই বেহাল। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট ছাড়াও এই সংসদীয় আসনের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মশা।
এসব বিষয়ে সাদেক খান বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার অনেক রাস্তাঘাট কাঁচা রয়ে গেছে। এগুলো পাকা হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। মশার উপদ্রব বেড়েছে, এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে এ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেন যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক। ঠাঁই হয় মন্ত্রিসভায়, দায়িত্ব পান স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি, তবে মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। ২০১৮ সালে তাকে না দিয়ে সাদেক খানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন : যাকে মনোনয়ন দিই, তাকেই জয়ী করবেন
জানতে চাইলে বর্তমানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল। প্রতিটি নির্বাচনে আমাদের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমরা অংশ নেব। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।
তিনি বলেন, বিগত সময়ে আমি এমপি ও প্রতিমন্ত্রী ছিলাম। আগামী নির্বাচনে আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি একমাত্র শেখ হাসিনা বলতে পারেন। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রসঙ্গে আপনি সাংবাদিক হিসেবে যেটা জানতে চেয়েছেন, আমার নেতাকর্মীরাও সেটা জানতে চায়। তবে তার উত্তর আমার কাছে নেই। ঢাকা-১৩ আসনের জনগণের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের আত্মার সম্পর্ক। আমি এমপি নই, তবে এক মুহূর্তের জন্য তাদের কাছ থেকে দূরে ছিলাম না।
আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, নির্বাচন করতে এখন অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়। সেই টাকা আমার নেই। তবে দলীয় মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করব। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। রাজনীতি করে মানুষের পর্যাপ্ত সেবা করা যায় না। জনপ্রতিনিধি হলে সেবাটা করা যায়। আমি জানি না আগামী নির্বাচনে এ আসনে আমি চূড়ান্ত কি না। নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা আছে। তবে কয়েক বছর ধরেই দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনছি।
বজলুর রহমান বলেন, এলাকার জনপ্রতিনিধি যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন, মানুষের কাছাকাছি থাকতেন, জনগণের কাছাকাছি থাকতেন তাহলে দল-মত-নির্বিশেষে তার প্রতি আস্থা বাড়ত। আর যাই হোক, দলীয়ভাবে হলেও জনসম্পৃক্ততার ব্যাপারটা কিন্তু মানুষ অনুভব করে। বর্তমানে যিনি এমপি তিনি যদি আরেকটু সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিষয়টা এমন হতো না। তিনি নিষ্ক্রিয় হওয়ার কারণেই আমার প্রতি প্রত্যাশা একটু বেড়েছে। সেদিক থেকে আমার একটা সম্ভাবনা আছে।
মোহাম্মদপুর এলাকার স্থানীয় এক চা বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমান এমপির দেখা আমরা পাই না। আমাদের দুঃখ দুর্দশার কথা কেউ শোনার নেই। আমাদের খালগুলোতে মশার আস্তানা। ডেঙ্গু জ্বরে অনেকেই দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এসব দেখার কেউ নেই। তাই প্রধানমন্ত্রী এমন একজনকে প্রার্থী দিক যিনি এসব সমস্যা দেখবেন, সমাধান করবেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা-১৩ আগে ছিল ঢাকা-৯ আসনের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৯১ সালে আসনটিতে জয় পান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মকবুল হোসেন জয় পান। ২০০১ সালে পুনরায় আসনটি দখলে নিয়েছিল বিএনপি। এখন আবার এটি অওয়ামী লীগের দখলে আছে।
এমএসআই/এসকেডি