>> মনোনয়ন লড়াইয়ে হাজি সেলিম পরিবার ও অন্যরা
>> নিজের আসন ফেরত চান ডা. মোস্তফা জালাল
>> মনোনয়ন প্রত্যাশী মহানগর দক্ষিণ আ.লীগের সাধারণ সম্পাদকও

ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয়ার্ধে অথবা জানুয়ারির শুরুতে অনুষ্ঠিত হতে পারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন থেকে সক্রিয় বিভিন্ন আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। কোনো বিশেষ দিন আসলে ব্যানার-পোস্টার টাঙাচ্ছেন আর নিজ এলাকার ভোটারদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন তারা।

এ বছরের ঈদুল ফিতরের পর থেকে ঢাকা-৭ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য হাজি সেলিমসহ অন্তত হাফ ডজন নেতা এখানে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তারা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত।

আরও পড়ুন : আগস্টে শত্রুর ‘ডালপালা’ নিয়ে সতর্ক আ.লীগ 

পুরান ঢাকার লালবাগ, চকবাজার, বংশাল ও কোতোয়ালি থানার একাংশ নিয়ে ঢাকা-৭ আসন গঠিত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৫ এবং ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড এ আসনে পড়েছে। নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে এই আসনের সীমানা চূড়ান্ত করেছে। আগের এলাকাগুলোই এ আসনের সীমানা, কোনো পরিবর্তন আসেনি।

২০১৮ সালের নির্বাচনের তথ্য অনুযায়ী, এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৮ হাজার ২৬৯ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ২৫০ জন আর নারী ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫৩ হাজার ১৯ জন। এবার ভোটার সংখ্যা কিছুটা কম-বেশি হতে পারে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব প্রার্থী ঢাকা-৭ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন তাদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য হাজি সেলিম অন্যতম। এছাড়া হাজি মো. সেলিমের বড় ছেলে মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আইন বিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরও রয়েছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শরফুদ্দিন আহমেদ সেন্টু ও সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেনের নামও আলোচনায় রয়েছে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে বর্তমান সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

তার ব্যক্তিগত সচিব মহিউদ্দিন মাহমুদ বেলাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‌‘এ বিষয়ে কথা বলার জন্য এখনও সময় হয়নি, সময় আসলে তিনি কথা বলবেন’।

হাজি সেলিম আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মহিউদ্দিন মাহমুদ বেলাল বলেন, ‘তিনি (হাজি সেলিম) বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনি কেন নির্বাচন করবেন না? তিনি অবশ্যই নির্বাচন করবেন।’

রাজধানীর পুরান ঢাকার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা-৭ আসন। আসনটিতে আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বসবাস। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে দুই ধারায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। সেই মামলায় বর্তমানে জামিনে রয়েছেন তিনি। আগামী নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন কি না তা নিয়ে আইনের দিক থেকে সংশয় রয়েছে।

আরও পড়ুন : যাকে মনোনয়ন দিই, তাকেই জয়ী করবেন

হাজি সেলিম নির্বাচন করতে না পারলে বিকল্প হিসেবে তার বড় ছেলে মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিমকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। হাজি সেলিমের অনুসারীরা আগামী নির্বাচনে বাবা-ছেলের মধ্য থেকে যেকোনো একজনের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। 

অন্যদিকে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের অনুসারীরা নিজেদের হারানো আসন ফিরে পেতে চান।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি মনোনয়ন চাইব। সিদ্ধান্তের মালিক উপরওয়ালা আর প্রধানমন্ত্রী। ওনারা মনোনয়ন দেবেন। আমাকে নৌকার প্রতীক দিলে আমি মাঠে নামব। নির্বাচনের প্রস্তুতি ও নির্বাচনের বিষয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা আগামী মাস থেকে শুরু করব।’

নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, অবশ্যই নির্বাচন করব। আমি দীর্ঘদিন এই আসন থেকে রাজনীতি করে আসছি, এই এলাকার মানুষের সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক, সেই সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য হলেও আমার নির্বাচন করা প্রয়োজন।

ঢাকা-৭ আসনের বর্তমান এমপি হাজি মোহাম্মদ সেলিম দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। কণ্ঠের সমস্যার কারণে তিনি ঠিকভাবে কথা বলতে পারেন না। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে মামলাও চলমান আছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে তার প্রার্থিতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে বড় ছেলেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে পেতে শেষমেশ তিনি নিজে সরে যেতে পারেন।

২০১৪ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন-বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেন হাজি সেলিম। বিএনপিবিহীন ভোটের লড়াইয়ে সেবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে হারিয়ে চমক দেখান তিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে পুনরায় সংসদ সদস্য হন সেলিম। সেই সময় তার বিপরীতে নির্বাচন করেছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ধানের শীষের প্রার্থী মোস্তফা মোহসীন মন্টু।

আরও পড়ুন : ঢাকা-৫ : দলের ‘ঘাঁটি’তে বিভক্ত আওয়ামী লীগ

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-৭ আসনের বর্তমান এমপি হাজি মোহাম্মদ সেলিম দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। কণ্ঠের সমস্যার কারণে তিনি ঠিকভাবে কথা বলতে পারেন না। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে মামলাও চলমান আছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে তার প্রার্থিতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে বড় ছেলেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে পেতে শেষমেশ তিনি নিজে সরে যেতে পারেন।

হাজি সেলিমের বাইরে অন্য প্রার্থীদের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ হসিাব-নিকাশ করছে বলে জানা গেছে।

গত ৩ জুন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এমপি হাজি সেলিমের পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কে নেতাদের কাছে জানতে চান। এ সময় কাদের হাজি সেলিমের বড় ছেলের নামও নিয়েছিলেন বলে উপস্থিত একাধিক নেতা ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন।

আরও পড়ুন : ‘হারলে সুষ্ঠু, জিতলে কারচুপি’— বিব্রত আ. লীগ

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশ না নেয় তাহলে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকবেন। তাদের একসঙ্গে করাটা চ্যালেঞ্জ। নতুন কোনো নেতাকে দলীয় মনোনয়ন দিলে আসনটিতে আওয়ামী লীগের ক্ষতি হতে পারে।

ঢাকা-৭ আসনের অন্তর্গত পুরান ঢাকার লালবাগের স্থানীয় ভোটার আমজাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুরান ঢাকাবাসী সবসময় অবহেলিত। প্রত্যেকটা দিন আমাদের আগুনের ঝুঁকিতে কাটাতে হয়। ঢাকা শহরের মধ্যে সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ঢাকা-৭। এ আসনে আমরা উন্নয়ন চাই। পুরান ঢাকার স্থানীয় কোনো নেতাকে যদি মনোনয়ন দেওয়া যায় তাহলে তিনি আমাদের ঐতিহ্যের বিষয়টি মাথায় রেখে উন্নয়নে অবদান রাখবেন বলে আমরা মনে করি।

এমএসআই/এসকেডি