গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল করেনি, কেবল নাম বদলেছে। এসবই করা হয়েছে বিদেশিদের চাপে। এটি একটি আইওয়াশ। অথচ আমরা পুরো আইনের বাতিল চেয়েছিলাম।

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) প্রেস ক্লাবে গণতন্ত্র মঞ্চ কর্তৃক আয়োজিত কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসন-গণজাগরণ-গণঅভ্যুত্থানের পথে বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, একটা ভোট মানে শুধুমাত্র ভোটাধিকার নয়। এর মাধ্যমে জনগণ তাদের সার্বভৌমের শক্তিটা প্রয়োগ করেন। প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা যদি না থাকে, তাহলে শাসন জারি থাকবে না, স্বৈরাচারীতা তৈরি হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চাইলে ভোটাধিকার থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এখন ভোটাধিকার মানে হচ্ছে ভোটের গ্যারান্টি। সেটা কি বর্তমান সরকার দিচ্ছে? উত্তর হচ্ছে না, জনগণের সার্বভৌমত্বকে নস্যাৎ করা হয়েছে। তার প্রমাণ কিন্তু  ১৯৭২ এর পর থেকেই শুরু হয়েছে।

সাকি বলেন, ৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত ফ্যাসিস্টের সমালোচনা চলবে না, সেটা হবে না। কথা বলতেই হবে। গোড়ায় গলদ না ধরলে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। ভোটাধিকার তাই জবাবদিহিতার সঙ্গে সম্পর্কিত। জবাবদিহিতা মানেই ক্ষমতার ভারসাম্য।
৩১ দফা এখন জাতীয় প্রস্তাবনায় রূপান্তরিত হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার সবচেয়ে বড় যে কাজটা করেছে, সেটা হলো দেশের জনগোষ্ঠীকে বিভক্ত করেছে। জাতিবাদের নামে এমন একটি বিভাজন তৈরি করেছে, যা ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আসছে।

তিনি আরও বলেন, মানুষ যখন নিজেদের ভেতর বিভক্ত হয়, তখন তারা সবচেয়ে দুর্বল থাকে। তারা তখন নিজেদের স্বাধীনতা হারায়। আজকের এই সংগ্রাম নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম। ৭২ সাল থেকে যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা চলে আসছে, তা ভেঙ্গে দিতে হবে।

এর আগে আলোচনা সভায় বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন। তাদের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, দেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্র মঞ্চের একটা ইতিবাচক ভূমিকা আছে। দেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন নতুন না। অনেক জোটই এই কাজ করেছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে মঞ্চের পার্থক্যটা হলো, মঞ্চ প্রথম সরকার বদলের বিষয়টি সামনের আনার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে শাসনব্যবস্থা বদলের রাজনীতি যারা করছেন, তারা আমাদের এই কৌশলকে মেনে নিয়েছেন।

তিনি বলেন, দেশের রাজনীতিতে এখন পরিবর্তনটা অনিবার্য। শেখ হাসিনা এবং তার সরকারকে ক্ষমতা থেকে যেতেই হবে। তারা যত দ্রুত এটা বুঝতে পারবে, এটা ততোটাই ইতিবাচক পরিণতি নিয়ে আসবে। যে পরিমাণ অর্থ পাচার তারা করেছে, সে সম্পদ তাদের ভোগে আসবে না।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, দেশের রাজনীতিতে স্বতন্ত্র ও বিকল্প শক্তি হিসেবে গণতন্ত্র মঞ্চ দাঁড়াতে চায়। বর্তমানে যে দুঃশাসন চলছে, এটা ১৯৭২ সাল থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত ছিল। আজ যারা কর্তৃত্ববাদী সরকারের দুঃশাসনের সমর্থন করছেন, জনগণের হাত থেকে তারা রেহাই পাবেন না।

তিনি বলেন, দেশ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে, এতে কারা মদত দিচ্ছেন? তাদেরকে শেষবারের মতো অনুরোধ করছি, আপনারা ফিরে আসুন। জনগণের পক্ষে ফিরে আসুন। এই ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হবেই, লড়াই সংগ্রামে আমরা এক থাকবই।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, দেশে এখন যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে, মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে গণতন্ত্র মঞ্চ ভূমিকা রেখেছে। দেশে ভোটাধিকার গণতন্ত্রের কুলখানি করেছে আওয়ামী লীগ।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ব্যবসায়ীরা বলেছেন তারা আবার তাকে ক্ষমতায় দেখতে চান। এরা কারা? এরা হচ্ছেন ব্যাংক লুটেরা, টাকা পাচারকারী দুর্বৃত্ত।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ব‌লেন, ১ বি‌লিয়ন ডলার সিঙ্গাপু‌রে পাচার ক‌রে‌ছে এস আলম গ্রুপ। এত অল্প সম‌য়ে এত টাকা এস আল‌ম গ্রু‌পের প‌ক্ষে আস‌লে কি আয় করা সম্ভব? এই ঘটনা তদন্ত করার জন্য দুইমাস সময় দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। কেন তদন্ত কর‌তে দুই মাস দরকার। এই দুই মা‌সে কি তাহ‌লে কাগজপত্র তৈ‌রি করা হ‌বে যে ওটা পাচার ছিল না বরং বৈধ ছিল। আস‌লে এই সরকার লু‌টেরা‌দের সব‌চে‌য়ে বড় পৃষ্ঠ‌পোষক।

তিনি বলেন, এই সরকা‌রের টাকা পাচা‌রের কা‌হি‌নী ইউরোপ আমে‌রিকাসহ এখন বি‌শ্বের সবাই জা‌নে। এত‌দিন যে লুটপা‌টের বন্যা চ‌লে‌ছে এখন তা ধীরে ধীরে বে‌রি‌য়ে আস‌ছে।

তি‌নি আরো ব‌লেন, এই সরকার‌ তো ব‌য়ান তৈ‌রি ক‌রে‌ছে গণত‌ন্ত্রের চে‌য়ে উন্নয়ন ভালো। তো সেই উন্নয়ন এখন আমরা চট্টগ্রা‌মের জলাবদ্ধতায় দেখ‌তে পার‌ছি। খা‌লেদা জিয়া, তা‌রেক-জোবা‌য়েদার মামলার রায় হ‌তে সময় লা‌গে না। কিন্তু সাংবা‌দিক সাগর-রু‌নির মামলার তদন্ত প্রতি‌বেদন ১০০ বার পিছি‌য়ে‌ছে পু‌লিশ।

ওএফএ/এমএ