সরকার ভয় পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- জনগণ আমাদের সঙ্গে আছেন, সরকারি কর্মকর্তারা ভয় পাবেন না। আমলারা ভয় পাবেন না। তারা ভয় পাচ্ছেন? তাহলে ভয় পাচ্ছেন। জনগণকে অত্যাচার, নির্যাতন গত ১৪ বছর ধরে করেছেন। ছয় শতাধিক মানুষকে গুম করেছেন, বিনা বিচারে হত্যা করেছেন। তারপরও বলি, জনগণের ন্যায়সংগত, সংবিধান সম্মত আন্দোলন, সেটাতে বাধা দেবেন না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাস করি। এভাবে আমরা এগিয়ে যাব। শান্তির মধ্য দিয়ে আমরা জয়যাত্রা করব। অবশ্যই বিজয় অর্জন করব।

সোমবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসমাবেশে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। গত ২৯ জুলাই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখে পুলিশি হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এ জনসমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর বিএনপি।

আজ রাজনৈতিক দলগুলো মিলে জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা আজ ঐক্যবদ্ধ থাকব। আমরা জাতীয় ঐক্য তৈরি করেছি। আজ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে একদিনে ডান, আরেকদিকে বাম এবং অন্য সব রাজনৈতিক দল মিলে একটা ঐক্য তৈরি হয়েছে। এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। এক দফা দাবি, অবিলম্বে এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে হবে।

সরকারের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বারবার একই কথা ও একই কায়দা করবেন আর জনগণকে বোকা বানিয়ে নিয়ে যাবেন, সেটা হবে না। বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এবার আর ধান খাওয়া হবে না। অত্যাচার, নির্যাতন, গ্রেপ্তার ও গুলি করে কোনো লাভ হবে না।

তিনি বলেন, এখন আবার একই কাজ করছে, আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে, তাদের জেলখানায় নিয়ে রেখে দিচ্ছে, গত ডিসেম্বরে যারা আমার সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছে, তারা জানেন সেই সময় কি করছিল। পরিষ্কার করে বলতে চাই কারা কর্তৃপক্ষকে, জেলকোডের বাইরে কোনো বন্দির সঙ্গে যদি অন্যায় ব্যবহার করা হয়, তার সব হিসাবনিকাশ বুঝে নেবে জনগণ।

আমরা নির্বাচন চাই উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তবে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন চাই না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। সোজা কথায় না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে। আমরা বহুদূর এগিয়ে গেছি। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।

মির্জা ফখরুল বলেন, অতি শিগগিরই সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে এক দফা দাবিতে যে আন্দোলন তার নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। তার আগে সরকারকে বলতে চাই, যাদের গ্রেপ্তার করেছেন মুক্তি দিন। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন, গ্রেপ্তার বন্ধ করুন। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে যদি সত্যিকার অর্থে দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চান।

জনসমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সত্যিকারের চরিত্র আবারও জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। কারণ এরা এক দলীয় সরকার। এজন্যই কাউকে কথা বলতে দেওয়া হয় না। মিডিয়াকে কিছুই লিখতে দেয় না। এরা হচ্ছে লগিং বৈঠা ও ধোঁকাবাজির সরকার। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সরকার। সুতরাং এরা গদিতে থাকতে পারে না। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে বিতাড়িত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

জনসমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছে এবং চলবে। প্রয়োজনে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। যারা আমাদের আন্দোলন কর্মসূচিতে বাধা দেবেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ কিন্তু বসে থাকবে না।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানবীর আহমেদ রবিনের যৌথ পরিচালনায় জনসমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নুল আবদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।

এএইচআর/এসএসএইচ/