রাজধানীর নয়াপল্টনে শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিএনপিকে মহাসমাবেশ করার জন্য ২৩ শর্তে অনুমতি দিয়েছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তবে, এসব শর্তের ১১টিই মানেনি বিএনপির নেতাকর্মীরা।
 
শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও দলটির নেতাকর্মীরা সকাল থেকে আসা শুরু করেন। সমাবেশ শুরুর আগেই বন্ধ হয়ে যায় নয়াপল্টন দিয়ে চলাচলরত সব ধরনের যান।
 
ডিএমপির ২৩ শর্তের ৩ নম্বরে বলা হয়েছে, অনুমোদিত স্থানেই (পুলিশ হাসপাতাল থেকে নাইটিঙ্গেল মোড়ের মধ্যবর্তী স্থান) মহাসমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি। মাইকের ব্যবহার ও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল পুলিশ কর্তৃক নির্ধারিত চৌহদ্দির বাইরে। সেখানে দলীয় কার্যক্রমে ব্যবহৃত বিভিন্ন যানবাহন দেখা যায়।
 
৪নং শর্তে বলা ছিল, কোনো অবস্থাতেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে কোনো ধরনের জনসমাগম করা যাবে না। কিন্তু বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতির কারণে সমাবেশ কাকরাইল মোড় ও নাইটিঙ্গেল মোড় ছড়িয়ে যায়। দুই প্রান্তে দেখা যায়নি পুলিশের কোনো ব্যারিকেড। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সরব উপস্থিতিও সেভাবে লক্ষ করা যায়নি।
 
৫নং শর্তে নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগের কথা বলা হয়। তবে, সেটাও পর্যাপ্ত সংখ্যক দেখা যায়নি। দলটির কিছু নেতাকর্মীকে সমাবেশে শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে দেখা গেছে।
 
৬নং শর্তে ছিল, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মহাসমাবেশস্থলের চারদিকে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। কিন্তু সেটা পুরো এলাকায় সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে দলটি।
 
৭নং শর্তে ছিল, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশে আগতদের হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিং করতে হবে। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, বিএনপির সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের চেকিং করার জন্য কোনো মেটাল ডিটেক্টর রাখা হয়নি।
 
ডিএমপির ৮নং শর্তে বলা হয়েছে, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে। কিন্তু সেখানে কোনো অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দেখা যায়নি।
 
৯নং শর্তে বলা হয়েছে, শব্দদূষণ প্রতিরোধে সীমিত আকারে মাইক/শব্দযন্ত্র  ব্যবহার করতে হবে। কোনোক্রমেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। তবে, অনুমোদিত স্থানের বাইরেও মাইকের ব্যবহার দেখা গেছে।
 
১৪নং শর্তে ছিল, মহাসমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে। তবে, সকাল থেকেই দলে দলে মিছিল আর স্লোগানে নেতাকর্মীদের আসতে দেখা যায়।
 
ডিএমপির ১৫নং শর্তে বলা হয়েছে, অনুমোদিত সময়ের মধ্যে অর্থাৎ দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে মহাসমাবেশ শেষ করেন প্রধান অতিথি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বক্তব্য শুরু করেন নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা পর।


 
ডিএমপির ১৬ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই মূল সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। কিন্তু বিএনপি সমাবেশের মঞ্চ তৈরি করে নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে। ফলে, বেলা ১১টার পর ফকিরাপুল থেকে নাইটিঙ্গেল মোড়গামী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ১টার পর কাকরাইল মোড় ও ফকিরাপুল মোড়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান নিলে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
 
২০নং শর্তে বলা ছিল, কোনো ধরনের লাঠিসোঁটা/ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না। তবে, মহাসমাবেশে ব্যানার, ফেস্টুনের আড়ালে লাঠি, ক্রিকেট স্ট্যান্ড, রড ও বাঁশ বহন করতে দেখা যায় দলীয় নেতাকর্মীদের।
 
এসব বিষয়ে বিএনপির কোনো নেতাই নাম প্রকাশ করে মন্তব্য দিতে রাজি হননি।
 
যে ২৩ শর্তে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়
 
১. এ অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
 
২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রের উল্লিখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
 
৩. অনুমোদিত স্থানেই (দক্ষিণ-পূর্বে মহানগর নাট্যমঞ্চ, দক্ষিণে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স, দক্ষিণ-পশ্চিমে ফুলবাড়িয়া ক্রসিং ও উত্তর-পশ্চিমে মুক্তাঙ্গন পর্যন্ত) সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
 
৪. কোনো অবস্থাতেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে কোনো ধরনের জনসমাগম করা যাবে না। 
 
৫. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।
 
৬. স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী- নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মহাসমাবেশস্থলের (দক্ষিণ-পূর্বে মহানগর নাট্যমঞ্চ, দক্ষিণে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স, দক্ষিণ-পশ্চিমে ফুলবাড়িয়া ক্রসিং ও উত্তর-পশ্চিমে মুক্তাঙ্গন পর্যন্ত) ভেতরে ও চারদিকে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
 
৭. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে আগতদের হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রচিতভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
 
৮. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
 
৯. শব্দদূষণ প্রতিরোধে সীমিত আকারে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে, কোনোভাবেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে (দক্ষিণ-পূর্বে মহানগর নাট্যমঞ্চ, দক্ষিণে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স, দক্ষিণ-পশ্চিমে ফুলবাড়িয়া ক্রসিং ও উত্তর-পশ্চিমে মুক্তাঙ্গন পর্যন্ত) মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
 
১০. অনুমোদিত স্থানের বাইরে (দক্ষিণ-পূর্বে মহানগর নাট্যমঞ্চ, দক্ষিণে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স, দক্ষিণ-পশ্চিমে ফুলবাড়িয়া ক্রসিং ও উত্তর-পশ্চিমে মুক্তাঙ্গন পর্যন্ত) প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না।
 
১১. আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক ব্যবহার করা যাবে না।
 
১২. ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে- এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
 
১৩. মহাসমাবেশের কার্যক্রম ছাড়া মঞ্চকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
 
১৪. মহাসমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে।
 
১৫. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে (দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা) মহাসমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে।
 
১৬. কোনো অবস্থাতেই মূল সড়কে যানবাহন চলাচল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।
 
১৭. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়- এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।
 
১৮. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ বা বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
 
১৯. উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
 
২০. কোনো ধরনের লাঠিসোঁটা/ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না।
 
২১. আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও কোনো বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
 
২২. উল্লিখিত শর্তাবলি পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এ অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।
 
২৩. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ছাড়া এ অনুমতির আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।
 
জেইউ/এমএআর/