দায়িত্বে আসার সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের নেতারা। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না করায় হতাশা ও ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে নেতাকর্মীদের মাঝে। এজন্য কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ছাত্রলীগ নেতাদের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন তারা।

পদ প্রত্যাশীদের আশঙ্কা, জুলাই মাসের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি, এর মধ্যে কমিটি না হলে তা পিছিয়ে যেতে পারে কয়েক মাস। কারণ শোকের মাস আগস্ট। এ মাসে কমিটি গঠনের রেওয়াজ নেই ছাত্রলীগে। এরপর জাতীয় নির্বাচনের ব্যস্ততা শুরু হয়ে যাবে।

ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, জুলাই মাসের মধ্যেই কমিটি দিতে তারা প্রস্তুত। কিছু জায়গায় সমন্বয় করে দ্রুত কমিটি ঘোষণার চেষ্টা করছেন তারা। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা নেই বলেও দাবি তাদের।

তবে ছাত্রলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই মাসে কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বৃহৎ একটা পরিসর। এখানে বেশ কিছু সমন্বয়ের বিষয় আছে। সেসব নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। কমিটি সেপ্টেম্বর মাসে ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

এদিকে বিতর্কিতরাও পদ পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে। বিভিন্ন সময় আবাসিক হলে গেস্টরুমে শিক্ষার্থী নির্যাতন, সাংবাদিক হয়রানি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়েছেন অনেকেই। যারা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে রাজনীতি করছেন।

তবে ঢাবি ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, বিতর্কিতদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদায়নের সুযোগ নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী হল ছাত্রলীগের এক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন ধারার স্মার্ট ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্রলীগ দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করবে আমাদের এমন প্রত্যাশাই ছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে সাত মাস পেরিয়ে গেছে, কমিটি হয়নি। গত দুই ঈদে কমিটি ঘোষণার গুঞ্জন থাকলেও হয়নি। যেহেতু কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়ে গেছে এ মাসের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

আরেক পদ প্রত্যাশী বলেন, জুলাই মাসের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি, এর মধ্যে কমিটি হবে কিনা সন্দেহ আছে। না হলে হয়ত কমিটি কয়েকমাস পিছিয়ে যেতে পারে। কারণ আগস্ট মাস শোকের মাস এবং এরপর জাতীয় নির্বাচনের ব্যস্ততা বেড়ে যাবে। এমনটি হলে আমাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, জুলাইয়ের মধ্যে কমিটি ঘোষণার মতো হাইপ এখনো উঠেনি। যতটুকু আলোচনা আছে সেটা সেপ্টেম্বরে কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করা কঠিন।

এ বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের রেওয়াজ আছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর ঢাবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। আমরা এ রেওয়াজ ফলো করছি। কমিটি ঘোষণার জন্য আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিছু জায়গায় সমন্বয় করে কয়েকদিনের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করা হবে।

সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার আগেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রস্তুত করেছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর আমাদের কিছু জায়গায় সমন্বয় করার প্রয়োজন হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ আমরা এগিয়ে নিয়েছি। এ মাসের মধ্যেই কমিটি দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আশা করছি, আমরা পারব।

বিতর্কিতদের বিষয়ে তিনি বলেন, বিতর্কিত কেউ কমিটিতে পদ পাওয়ার সুযোগ নেই। সব ধরনের যাচাই-বাছাই করা হবে। যাতে কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে কিংবা হয়রানির উদ্দেশ্যে অভিযুক্ত করা হয় এমন কেউ বাদ না পড়ে যায়।

এদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার সাংগঠনিক নির্দেশনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তাদেরও প্রত্যাশা দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করতে পারবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের সাংগঠনিক নির্দেশনা রয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করতে হবে। পাশাপাশি ভালো ছাত্র এবং পরিশ্রমী নেতাকর্মীদের পদায়ন করতে হবে। সে অনুযায়ী ঢাবি ছাত্রলীগ কাজ করছে, আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়ে যাবে।

সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ খুবই সুন্দরভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।

এর আগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নামও ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাংগঠনিক জেলার মর্যাদা পায়। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১০ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘জেলা শাখার কার্যকাল এক বছর। সেই হিসেবে চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে বর্তমান কমিটির মেয়াদ।

এইচআর/এসকেডি