যুক্তরাষ্ট্র আর ইইউ বিএনপিকে ‘ঘোড়ার ডিম’ দিয়েছে : কাদের
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে ঘোড়ার ডিম দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না। পার্লামেন্ট ভাঙবে না। তত্ত্বাবধায়কও হবে না।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনের রাস্তায় ‘শান্তি ও উন্নয়ন শুভাযাত্রা’র পূর্বে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সমাবেশটির আয়োজন করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।
এ সময় বিএনপির উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের (ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র) কাছে দাবি করে কে? বিএনপি। কী পেয়েছে? বিএনপি মনে করেছিল তারা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা করবে, সংলাপের কথা বলবে কিন্তু তারা তো কিছু বলেনি। তারা আসলেই বিএনপিকে দিয়ে গেছে ঘোড়ার ডিম।
তিনি বলেন, ফখরুল আজকে কী বলেছেন? পদযাত্রা জয়যাত্রা, বিজয় যাত্রা। আসলে পদযাত্রা হলো পরাজয় যাত্রা আর পতন যাত্রা। তাদের পতনযাত্রা শুরু হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সমাবেশে বলেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। এ সন্ত্রাসী দল আজকে সকালে আমাদের মিরপুরে ছাত্রলীগের কর্মীদের ওপর হামলা করেছে। মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। আমরা রাজপথে মোকাবিলা করব।
বিএনপিকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, যদি অবাধ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেন, আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর হামলা করার চেষ্টা করেন তাহলে আপনাদের পরিণাম হবে ভয়াবহ।
সংসদ বিলুপ্তি হবে না এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগের প্রশ্নই উঠে না জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবেন। সংবিধান থেকে এক চুলও নড়বে না সরকার।
তিনি বলেন, বিএনপি মার্কা তত্ত্বাবধায়ক আমরা চাই না। বিএনপি মার্কা নির্বাচনকালীন সরকার আমরা মানি না। সংবিধানে যা আছে, সে অনুযায়ী সব করবো। এর বাইরে আমরা একচুলও নড়ব না। মারামারি হুমকিতেও কাজ হবে না। আওয়ামী লীগ কারও কাছে মাথা নত করবে না।
কাদের বলেন, যতই লাফালাফি করেন কোনো লাভ হবে না। আমরা আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বলেছি, আমরা নির্বাচনের আগে ও পরে শান্তি চাই। তত্ত্বাবধায়ক আমরা চাই না, চায় বিএনপি।
বিএনপি মনে করছে ২০০১ আর ২০০৬ সালের মতো তত্তাবধায়ক সরকার, তাদের ক্ষমতায় দিয়ে যাবে। তাদের আশায় গুঁড়ে বালি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমরা বিলুপ্ত করিনি, উচ্চ আদালত বাতিল করেছেন। তারা আদালত মানে না, তারা আইন মানে না। নিজেদের মতো হলে সব মানে।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক হবে না। সরকারের পদত্যাগ হবে না। শেখ হাসিনা দায়িত্বে থেকে নির্বাচনকালীন সরকারে থাকবেন। মিথ্যাচার করে কোনো লাভ হবে না। আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের আমরা বলেছি, আমরা শান্তি চাই। নির্বাচনের সময়ও শান্তি চাই।
বিএনপি সকল শয়তানের দলের আসল ঠিকানা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, যতই মারামারির চেষ্টা করেন কোনো লাভ হবে না। এই দেশে আওয়ামী লীগের শেকড় অনেক গভীরে। আমরা কারও কাছে মাথা নত করব না। বাংলাদেশে সব শয়তানের দলের আসল ঠিকানা বিএনপি।
বিএনপিকে বিশ্বাস না করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাদের কথার কোনো ঠিক নেই, একবার বলে এক দফা আবার বলে ৩২ দফা। তারা রাষ্ট্র মেরামতের কথা বলে। মেরামত আপনাদের করতে হবে না। বিদ্যুতের নামে খাম্বা দিয়েছেন। মেরামত করেছেন খাম্বা। আপনাদের দেখানোর মত কী আছে?
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দ্রুতই কমে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর ওপর ভরসা রাখুন দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি কমে যাবে। বিএনপির উপর ভরসা করলে লাভ হবে না। তাদের কাছে ঘোড়ার ডিম ছাড়া আর কিছুই পাবেন না।
নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা সতর্ক থাকবেন, ধৈর্য ধরবেন। তারা (বিএনপি) বুঝে গেছে আগামী নির্বাচনে তাদের কোনো সম্ভাবনা নেই। তানা বুঝে গেছে গত নির্বাচনের মতো হবে তাদের অবস্থা।
নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গায়ে পড়ে কারও সঙ্গে গোলমাল করবেন না, আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা বিজয়ী হব, পরিবেশ শান্তিতে রাখতে হবে। প্রোগ্রাম করবেন, আশপাশ দিয়ে কে গেল দেখার দরকার নেই, তারা গায়ে পড়ে ঝগড়া করবে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের ওপর আক্রমণ করলে পরিস্থিতি বলে দেবে কি করব। নিজেরা কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। দেশের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এই অনুরোধ করছি।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। পদযাত্রার নামে মিরপুরে যেভাবে ছাত্রদের ওপর হামলা করেছে, তারা বাংলাদেশকে আবার সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করতে চায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। তাই, সন্ত্রাসের পথে না হেঁটে নির্বাচনের পথে হাঁটুন। অন্যথায় আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, বিএনপি জামায়াত যে নৈরাজ্যের জন্ম দিতে চায় তাদের দাঁত ভাঙা জবাব দিতে হবে। যদি তারা আবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে তাহলে আমরা কিন্তু বসে থাকব না। আমরা দাঁত ভাঙা জবাব দেব। জবাব দিতে গিয়ে যদি কোনো ঘটনা ঘটে তার দায় বিএনপি-জামায়াতকে নিতে হবে। আজ থেকে আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম শুরু হলো। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত যত কর্মসূচি থাকবে আমরা পালন করব।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, দেশে শান্তি ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আমাদের এই বিশাল শান্তি সমাবেশ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করতে হয়েছে। বিএনপি জামায়াতের অপরাজনীতি বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ বিরোধী। ধর্মকে ব্যবহার করে তারা ফায়দা লুটতে চায়, উন্নয়নে আঘাত হানতে চায়, ব্যাহত করতে চায় গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা। গণতন্ত্রকে ওরা হত্যা করতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলছে।
সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, বিএনপি ২০১৪-১৫-১৮ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। বিএনপি আবারও তার পুরনো চরিত্রে ফিরে এসেছে। এজন্য আমাদের শান্তি সমাবেশ করতে হচ্ছে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী।
এমআই/এমএইচএন/এসকেডি