আ.লীগ বাহিনী-রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে নিজেদের লোক বসাচ্ছে
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিভিন্ন বাহিনী, সরকারি ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে বেছে-বেছে নিজেদের লোক বসাচ্ছে বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। তিনি বলেন, মানুষ মনে করছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজ হচ্ছে সরকারি দলের দুর্নীতিবাজদের সার্টিফিকেট দেওয়া যে, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। সব জায়গায় বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে, এটাই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী। ফলে গরিব আরও গরিব হচ্ছে, ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
জিএম কাদের বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের নামে দেশে লুটপাট চলছে। দেশের মানুষের খোঁজ রাখা হচ্ছে না। বর্তমান সরকার স্বাধীনতার পক্ষে হতে পারে কিন্তু তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তি নয়।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, রাষ্ট্রপতির আহ্বানে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন, তখন যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা ব্যতীত দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলসহ সাধারণ মানুষ স্বাগত জানিয়েছিলেন বাংলার এ পল্লীবন্ধুকে। বর্তমান সরকার প্রধান তখন বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, এর ব্যতীত আর কোনো উপায় ছিল না। সাধারণ মানুষ এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণ জণকল্যাণমূলক মনে করেছেন। ১৯৯০ সালের পর থেকে পল্লীবন্ধু আইনের শাসন ও ন্যায় বিচারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বৈষম্যবিহীন একটি সমাজ গঠন করেছিলেন। আইন সবার জন্য সমান ছিল। রাষ্ট্রীয় সম্পদ বা সুযোগ-সুবিধা সবার জন্য সমান ছিল।
১৯৯১ সালের পর থেকে দলীয়করণ চলছে বলে দাবি করে জিএম কাদের বলেন, দলের লোককে বেশি সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। টেন্ডারবাজী চলেছে, দলীয় লোকেরা ফুটপাত থেকে চাঁদা তুলছেন। আওয়ামী লীগ কর্মীরা অন্ধ ভিক্ষুকের কাছ থেকেও চাঁদা নেন। চাঁদার জন্য রাস্তাগুলোকে বিপণণকেন্দ্র করে ফেলেছেন। কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলে আবার বণ্টন হয়, এরশাদের সময় এগুলো ছিল না।
১৯৭১ সালে বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতেই স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল বলে উল্লেখ করে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, আমরা কী বৈষম্য থেকে মুক্তি পেয়েছি? এখন আওয়ামী লীগ ও নন আওয়ামী লীগের বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বা বাবা-চাচা’রা আওয়ামী লীগ না করলে চাকরি পাওয়া যায় না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ আর মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ভাগ করে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। কোনো মানুষই মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিলেন না। আবার, স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ সৃষ্টি করে বৈষম্য করা হচ্ছে। স্বাধীনতার বিপক্ষে কিছু লোক ছিলেন। তাদের সংখ্যা খুবই কম। অনেকে মারা গেছেন, অনেকের ফাঁসি হয়েছে আর যারা বেঁচে আছেন তারা চলাফেরা করতে পারেন না। তাহলে, তরুণ সমাজের মাঝে স্বাধীনতার পক্ষ আর বিপক্ষ করা হচ্ছে কেন?
তিনি আরও বলেন, ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত আন্দোলন করেছিল। ১৯৯৬ সালে আবার বিএনপির বিরুদ্ধে তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী। আরেকটি তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন এখন চলছে। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে একটি নির্বাচন হবার কথা ছিল, তখন তত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে আরেকটি আন্দোলন হয়েছিল। সেই সময়ে ওয়ান ইলেভেন এসেছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালে বলেছিলেন, আমরা চিরস্থায়ীভাবে তত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চাই। এখন তারা সংবিধানের দোহাই দিয়ে নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। ১৯৯১ সালে তত্বাবধায়ক সরকার গঠন সংবিধান সম্মত ছিল না। পরবর্তীতে সংসদে এর বৈধতা দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় অনির্দিষ্টকালের জন্য নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাও সংবিধান সম্মত ছিল না। আবারও নবম সংশোধনীর মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- নির্বাচন করতে হবে নির্বাচিত সরকারের অধীনে, আমরাও তা চাই। কিন্তু নির্বাচিত সরকার যদি নির্বাচন কমিশনসহ সব কিছু প্রভাবিত করতে পারে তাকে সমর্থন করা যায় না।
আওয়ামী লীগ নামে ও বেনামে সরকার হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করে জিএম কাদের বলেন, তারা তাদের সরকারের জন্য কাজ করছেন। তাদের কিছু মানুষ প্রশাসনসহ সরকারি বিভিন্ন বিভাগে আছেন। তারা আগ বাড়িয়ে বলেন- আমরা আওয়ামী পরিবার। আমরা ছাত্রলীগ-যুবলীগ করেছি। তারা আওয়ামী লীগের সভায় যান, শ্লোগান দেন। এরা হচ্ছে বেনামে আওয়ামী লীগ। এখন ডেমক্রেসির বিপক্ষে আওয়ামী ক্রেসি চলছে। যেখানে গর্ভমেন্ট অব দ্যা আওয়ামী লীগ, গর্ভমেন্ট বাই দ্যা আওয়ামী লীগ এবং গর্ভমেন্ট ফর দ্যা আওয়ামী লীগ। এটা কখনও ডেমেক্রেসি হতে পারে না।
এএইচআর/এফকে