অভ্যন্তরীণ কোন্দল বজায় রেখেই দলের প্রথম সম্মেলন করতে যাচ্ছেন গণঅধিকার পরিষদের একাংশ নুরুল হক নুরপন্থিরা। সম্মেলন প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা কমিটি গঠন করতে যাচ্ছেন দলের আহ্বায়ক পদ থেকে ‘অবৈধভাবে’ অপসারিত হওয়া রেজা কিবরিয়া। এর মাধ্যমে মূলত আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হঠাৎ করে এসেই নানাভাবে আলোচনায় থাকা নতুন দলটি। 

এদিকে দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর সম্মেলনের তোড়জোড়ের মধ্যেই রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন প্রাপ্তির শর্ত পূরণ করেছে কি না সেই তথ্য যাচাই করতে সোমবার গণঅধিকার পরিষদের পল্টনের জামান টাওয়ারের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। সেখানে নিজেদের ‘আসল’ গণঅধিকার পরিষদের দাবিদার হিসেবে উপস্থাপন করতে উভয় পক্ষই (নুর ও রেজা কিবরিয়া) উপস্থিত থাকবে বলে জানা গেছে।  

নুরপন্থিদের একটি সূত্রে জানা গেছে, সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কাউন্সিলে গোপন ভোটে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন। এতে ভোট দিতে পারবেন দলের ৫৫ জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব (দুই জন করে ১১০ জন হওয়ার কথা থাকলেও কোনো কোনো জায়গায় তা পূর্ণ সংখ্যা না হওয়ায় সে সংখ্যা হচ্ছে ৯০)। ভোট দিতে পারবেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ১২৬ সদস্যও। নির্বাচনে মোট ভোটার ২১৬ জন (১২৬+৯০ জন)। 

কাউন্সিলে সভাপতি পদের জন্য চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তারা হলেন- বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুস সাকিব, জাফর মাহমুদ ও বায়জিদ হোসেন। সাধারণ সম্পাদক পদেও চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তারা হলেন- ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মোহাম্মদ রাশেদ খান, যুগ্ম আহ্বায়ক বিপ্লব কুমার পোদ্দার, মাহফুজুর রহমান ও জিলু খান।

জামান টাওয়ারে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে একটি সূত্রে জানা গেছে, জামান টাওয়ারে রেজা কিবরিয়াপন্থিরা কোনো ঝামেলা করলে নুররা বিকল্প ভেন্যুতে সম্মেলন করবেন। এজন্য তারা বিকল্প ভেন্যু হিসেবে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির একটি হল ভাড়া করে রেখেছেন।

সম্মেলন প্রসঙ্গে গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, আমরা সম্মেলন করব। দলের ৮০ শতাংশ নেতাকর্মী আমাদের সঙ্গে আছে। এখন কেউ যদি গণঅধিকার পরিষদের নাম ভাঙিয়ে একই নামে রাজনীতি করতে চায়, তারা করতে পারে, আমাদের কিছু করার নেই। 

তিনি আরও বলেন, সম্মেলনে সারা দেশের জেলা ও মহানগর কমিটির নেতা-কর্মীরা আসবেন। দলের মূল স্রোতের সঙ্গে আমরা আছি। যারা কাউন্সিলে অংশ নেবেন না, আগামীকালের পর তাদের লাফালাফি বন্ধ হয়ে যাবে। 

রাশেদ খান জানান, সকাল ১০টা থেকে কাউন্সিল শুরু হবে। প্রথম ধাপে দলের উচ্চতর পরিষদের নির্বাচন হবে। আর দ্বিতীয় ধাপে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদের নির্বাচন হবে। নির্বাচন হবে গোপন ভোটের মাধ্যমে।    

দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করা হলেও কোনো ফল মেলেনি উল্লেখ করে রাশেদ খান বলেন, নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে কেউ কেউ বিভ্রান্ত হয়েছেন। যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাদের নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা হয়েছে। তাদের কাউন্সিলে অংশ নিতে এবং প্রার্থী হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা বলেছে এখন প্রার্থী হলে তারা জিততে পারবেন না।  

অন্যদিকে রেজা কিবরিয়াপন্থিদের একটি সূত্রে জানা গেছে, নুরুল হক নুর ও রাশেদ খানরা কাউন্সিল করে নতুন কমিটি গঠন করলে সেক্ষেত্রে কিবরিয়াপন্থিরাও আলাদা কমিটি গঠন করে দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে জমা দেবেন। আর কমিটিতে তারা রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক হিসেবে রাখবেন। হাসান আল মামুনকে সদস্য সচিব করার চিন্তা রয়েছে। কমিটির আকার হবে ৬০ থেকে ৮০ সদস্য বিশিষ্ট। কিন্তু হাসান আল মামুনের দোদুল্যমান অবস্থার কারণে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। সবকিছু চূড়ান্ত করতে সোমবার দলের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির অনলাইন মিটিং ডাকা হয়েছে।   

গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক (রেজা কিবরিয়াপন্থি) জাকারিয়া পলাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দলের ৬০ শতাংশ লোক আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা এই কাউন্সিল প্রত্যাখ্যান করেছি। সংগঠন চালিয়ে যাব। আজকে আমরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছি- সেখানে বলা হয়েছে রেজা কিবরিয়া আহ্বায়ক হিসেবে বহাল আছেন। আমাদের কাউন্সিলের কোনো পরিকল্পনা নেই সেটাও ইসিকে জানিয়েছি। এখন কেউ কাউন্সিল করলে তাদেরকে প্রমাণ করতে হবে তারা বৈধ। 

নুরুল হক নুর এবং রাশেদ খানরা গণঅধিকার পরিষদের নতুন কমিটি গঠন করলে আপনাদের অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে পলাশ বলেন, আগামীকাল রাতে আমাদের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির অনলাইন মিটিং ডাকা হয়েছে, সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিবরিয়াপন্থি কমিটির এক যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, কাল তারা কমিটি করলে আমরাও নতুন কমিটি করে ইসিতে জমা দেব। কমিটির আকার হবে ৬০ থেকে ৮০ সদস্যের।

সোমবার গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয় পরিদর্শনে যাবে ইসি

রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের মধ্যকার দ্বন্দ্বে যখন গণঅধিকার পরিষদ দুইভাগে বিভক্ত, সেই সময় দলের নিবন্ধনের জন্য কার্যালয় পরিদর্শনে আসবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেখানে নুর ও রেজা কিবরিয়াপন্থিদের উভয় অংশের নেতারা থাকবেন বলে জানা গেছে। 

দুপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি দল দলীয় কার্যালয় পরিদর্শনে এলে নুরের পক্ষ থেকে নুর এবং রাশেদ খানসহ তাদের অনুসারীরা থাকবেন। রেজা কিবরিয়াকে অপসারণ করা হয়েছে সেটা যে বৈধ তার পক্ষে দালিলিক প্রমাণ তুলে ধরবেন ইসির কাছে। অন্যদিকে রেজা কিবরিয়াপন্থিদের মধ্যে থাকবেন তার অবর্তমানে দায়িত্বে থাকা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিয়া মশিউজ্জামানসহ আরও দুই-একজন নেতা। তারাও রেজা কিবরিয়াকে দলের আহ্বায়ক পদ থেকে অপসারণ যে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হয়নি এবং এই অপসারণ যে অবৈধ তা তুলে ধরবেন ইসির কাছে। উভয় পক্ষই নিজেদেরকে আসল গণঅধিকার পরিষদের দাবিদার প্রমাণ করার স্বপক্ষে ইসির কাছে প্রমাণ ‍ও যুক্তি তুলে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে।   

এদিকে রেজা কিবরিয়া দেশের বাইরে অবস্থান করায় তার অবর্তমানে যুগ্ম আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামানকে দলের দায়িত্ব দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। রোববার এই চিঠি দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে মিয়া মশিউজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্বাচন কমিশন আমাদের কার্যালয়ে এলে রেজা কিবরিয়ার পক্ষে আমি থাকব। তাদেরকে (নুরদের) আশস্ত করতে চাই যে আমি কোনো ঝামেলা করব না। ইসি এলে আমি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে। সরকারি কর্মকর্তাদের সামনে কোনো ঝগড়া করলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। আর এই দল তো আমাদের।

তিনি আরও বলেন, নুরদের এই কাউন্সিল অবৈধ। তার জন্য আমি উকিল নোটিশও পাঠিয়েছি। তাদের সঙ্গে আমরা কোনো ঝগড়া করতে যাব না। কোনো উসকানিও দিতে যাব না।

সোমবার কিবরিয়াপন্থিদের বিক্ষোভ

ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করবেন রেজা কিবরিয়াপন্থিরা। সোমবার (১০ জুলাই) বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি থেকে শুরু হয়ে বিক্ষোভ মিছিল পল্টন জামান টাওয়ার দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হবে। 

এই প্রসঙ্গে যুগ্ম আহ্বায়ক জাকারিয়া পলাশ জানান, আগামীকাল বেলা ১১টায় ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর হামলার প্রতিবাদে আমাদের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

এএইচআর/জেডএস