গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করে আসছে গণতন্ত্র মঞ্চসহ বেশ কয়েকটি জোট। এই আন্দোলনকে আরও কার্যকরভাবে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে বিরোধী জোটের একটি ‘যৌথ ইশতেহার’ ঘোষণার কথা বলে আসছিল উভয় পক্ষ। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন ভিসা নীতি প্রণয়নের পর থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে এই উদ্যোগে ভাটা পড়েছে।

যৌথ ইশতেহার ঘোষণা করা হবে এমন সিদ্ধান্ত থেকে প্রথমে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ে গঠিত ৪ সদস্যের একটি কমিটি ৭ দফার একটি খসড়া তৈরি করে। ওই খসড়ার বেশ কিছু দফা নিয়ে আপত্তি তোলে বিএনপি। এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে ৩১ দফার একটি যৌথ ঘোষণাপত্র তৈরি করা হয়। কিন্তু সেটি গ্রহণ করেনি গণতন্ত্র মঞ্চ। ফলে দুই পক্ষই দাবি-দাওয়া নিয়ে অনড় থাকায় শেষ পর্যন্ত হচ্ছে না বিরোধী জোটের যৌথ ইশতেহার ঘোষণা।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলছেন, বিএনপি হঠাৎ করে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে। এতদিন তারা যৌথ ঘোষণা দেওয়ার কথা বলে আসছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষিত হওয়ার পর থেকে বিএনপি কেমন যেন সুর পাল্টাতে শুরু করেছে। এখন যৌথ ঘোষণার বদলে এক দফার যৌথ ঘোষণা দেওয়ার কথা বলছে। সেখানে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন এবং মঞ্চের পক্ষ থেকে নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারসহ নানা বিষয়ে যে প্রস্তাবনাগুলো দেওয়া হয়েছিল সেগুলো নেই।

তাদের এই নতুন অবস্থানের কারণে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অনেকে ক্ষুব্ধ ও হতাশ। কিন্তু যুগপৎ আন্দোলনের এতদূর এসে যেহেতু পেছনে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই, তাই আমরা ‘সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’ এই তিন দাবিতে তাদের সঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাব। বিএনপি যৌথ ইশতেহার না দিলে মঞ্চের পক্ষ থেকে ৩১ দফা সম্বলিত একটি আন্দোলনের ইশতেহার দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন : বিএনপির ৩১ দফা গ্রহণ করেনি গণতন্ত্র মঞ্চ

এ বিষয়ে ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে আছি। জাতিকে মুক্ত করতে চাই। এখানে ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া বড় কথা নয়। জনগণকে মুক্ত করাটাই মুখ্য বিষয়। গণতন্ত্র মঞ্চ তার আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা দেবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ঢাকা পোস্টকে বলেন, যৌথ ইশতেহার নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আমাদের আলোচনা শেষ হয়নি। তবে আন্দোলনের একটি যৌথ ঘোষণা আসবে। সেখানে বিএনপি তাদের ৩১ দফা দেবে। আমরা আমাদের ৩১ দফা দেব। এই দফাগুলোর মধ্যে কিছু মিল থাকবে, কিছু ভিন্নতা থাকবে।

এক মঞ্চ থেকে কি যৌথ ইশতেহার ঘোষণা দেওয়া হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, এক মঞ্চ থেকে ঘোষণা না আসলেও আশা করছি একই দিন ভিন্ন-ভিন্ন মঞ্চ বা জায়গা থেকে ঘোষণা আসবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ এক নেতা বলেন, তারা (বিএনপি) অতীতে ক্ষমতায় ছিল। আমাদের চেয়ে তারা অনেক চালাক। তাই সংবিধান সংশোধন, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার, নির্বাচন কমিশন গঠনের আইনসহ কিছু বিষয় তারা ওপেন রাখতে চায়। যাতে ভবিষ্যতে কোনো বিপদে না পড়ে। তারা তাদের ৩১ দফার যৌথ ইশতেহারে ‘রেইনবো নেশন’ বা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নিয়ে কথা বলছে। এটা নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। আমরা চাই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন : ‘সরকার-শাসনব্যবস্থা’ বদলের যৌথ রূপরেখা দেবে বিএনপি ও সঙ্গীরা   

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মঞ্চের শরিক একটি দলের শীর্ষ নেতা বলেন, বিএনপি আমাদের কোনো দাবিই মানছে না। তারা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে যেতে চায় না। আসলে তারা এখন লোক দেখানো কিছু কমিটমেন্ট করতে চায়। যেগুলো ক্ষমতায় গেলে মানলে মানল না মানলে নেই, এ রকম কিছু কমিটমেন্ট তারা করতে চায়। তাদের এই অবস্থানটি আমাদের কাছে পরিষ্কার না হওয়ায় মঞ্চের শরিকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। অনেকে বিএনপির নতুন এই অবস্থানের কারণে ক্ষুব্ধ।

এ নেতার দাবি, আগামী নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটে বাধাদানকারীদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। তাদের এখন আন্দোলন-সঙ্গীদের চেয়ে বিদেশিদের প্রতি মনোযোগ বেশি।

বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, যৌথ ইশতেহার ঘোষণা করা হবে না বিষয়টি এমন নয়। এটি নিয়ে কাজ চলছে। অবশ্যই ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। সেটি ৩১ দফা হবে বা কম-বেশি হবে।

এএইচআর/এসকেডি/জেএস