দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতা ও ওলামায়ে কেরামের মুক্তি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে আজ ঢাকায় সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

শনিবার (১০ জুন) দুপুর ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তবে অনুষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়ে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সকল মানুষের কল্যাণের জন্য আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন কায়েম করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী লোক তৈরি ও জনমত গঠন করে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পথে দেশ পরিচালনা করতে চায়। নবী-রসূলসহ অতীতে যারাই আল্লাহর আইনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালনা করে গেছেন তাদের সকলকেই দুঃখ-কষ্ট জেল জুলুম অত্যাচার নির্যাতন এমনকি জীবনের শেষ রক্তবিন্দু বিলিয়ে দিয়ে শাহাদাতের জান্নাতি পথে পাড়ি দিয়েছেন। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী সেই মহান পথে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের সকল নারী পুরুষ কৃষক শ্রমিক ছাত্র জনতার কাছে আমরা সেই কোরআন সুন্নাহর আইনের মহান দাওয়াতই পেশ করছি।

আমরা সরকারকে বলব এ দেশের মানুষ স্বৈরাচারকে ভালোবাসে না আর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন মানবে না। তাই শুভ বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে, এর বিকল্প কিছু নেই। সরকার যত দ্রুত এই কথাটি বুঝবেন তত দ্রুত দেশের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। এই একটি দাবি পূরণের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহ্বান জানাই।

১০ দফা দাবি

১. কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবিলম্বে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

২. অবিলম্বে আটক জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীসহ সকল নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাকে মুক্তি দিতে হবে।

৩. উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর মুক্তি না দিয়ে জেলখানায় আটক রাখার বেআইনি, অসাংবিধানিক ও মানবাধিকার পরিপন্থি কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে আটক নেতৃবৃন্দের মুক্তির পরিবর্তে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা ও বন্দি থাকাবস্থায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪. অবিলম্বে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ জেলা-মহানগরীর সকল কার্যালয় খুলে দিতে হবে।

৫. সংবিধান স্বীকৃত মিছিল-মিটিং ও সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

৬. সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আরমান আহমদ বিন কাসেম, হাফেজ জাকির হোসাইন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা আল মোকাদ্দাস ও মোহাম্মদ ওলিউল্লাহসহ নিখোঁজ ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।

৭. সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

৮. দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি রোধ করে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার আওতায় আনতে হবে।

৯. বিদেশে পাচারকৃত সকল অর্থ ফেরত এনে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১০. বন্ধ সকল চ্যানেল, জাতীয় দৈনিক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালু ও সাংবাদিক দমন-পীড়ন বন্ধ করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।

জেইউ/এসকেডি