ভোট দিতে ‘অনীহা’ আওয়ামী লীগের সমর্থকদের
• প্রতিযোগিতা নেই বলে অনেকে যান না কেন্দ্রে
• জয় নিশ্চিত জেনে এমন অনীহা
• এই প্রতিক্রিয়া জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে
• বিএনপি আসলে আ.লীগের ভোটাররাও আসবেন
টানা ১৪ বছর ক্ষমতায়। এ কারণে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মাঝে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে অনীহা তৈরি হয়েছে। বিগত বেশ কয়েকটি উপনির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কম। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেকেই ভোটকেন্দ্রে যাননি। ফলে আশানুরূপ ভোট পাচ্ছেন না প্রার্থীরা।
বিজ্ঞাপন
তবে, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা মনে করছেন নির্বাচনে শক্তিশালী বিরোধী প্রার্থী না থাকায় এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। আসন্ন চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের পাশাপাশি নিজ দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভোট দিতে তাগাদা দিচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। এরই মধ্যে নির্বাচন পরিচালনার জন্য কেন্দ্র, মহানগর, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি গঠন করেছে তারা। তবে, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে কাউন্সিল প্রার্থীদের কারণে ভোটার উপস্থিতি অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় ভালো ছিল। গাজীপুরে হারলেও বাকি চার সিটিতে নৌকার পক্ষে ভোটার উপস্থিতির টার্গেট নিয়ে মাঠে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন দলের সিনিয়র নেতারা।
আরও পড়ুন >> দল নাকি বিনোদন জগৎ, কোথা থেকে প্রার্থী নেবে আওয়ামী লীগ
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়া, যারা ম্যান্ডেট নিতে ভয় পান অথবা নির্বাচন থেকে দূরে থাকেন, জনগণের ম্যান্ডেট পাবেন না— এমন ভয়ে নির্বাচন করেন না। এসব কারণে আওয়ামী লীগের ভোটার ও সমর্থকরা মনে করেন যে নির্বাচনে তো আমরা জিতেই যাচ্ছি, কিছু ভোটার কেন্দ্রে গেলেই হবে। এজন্য নেতাকর্মীদের আগ্রহ কমে যায়, তারা ভোটকেন্দ্রে আসেন না।’
‘যারা আমাদের সমর্থন দেন, তারা সেটা প্রত্যাহার করেছেন, দূরে সরে গেছেন— ব্যাপারটা তো তেমন নয়। নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল যখন আসবে, তখন প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি হবে। তখন আওয়ামী লীগের ভোটাররাও আসবেন। তারা নিজেরা তো আসবেনই, অন্যান্য ভোটারদেরও ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসবেন, ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।’
জানা গেছে, বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করায় শূন্য হওয়া ছয়টি আসনের উপনির্বাচনে নিজেদের জন্য তিনটি রেখে বাকি তিন আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দুটি আসন শরিক দলের জন্য এবং একটি উন্মুক্ত রাখা হয়। আসনগুলো হলো- ঠাকুরগাঁও- ৩, বগুড়া- ৪ ও ৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ- ২ ও ৩ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ২ আসন। এছাড়া চট্টগ্রাম- ৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব আসনে আশানুরূপ ভোটার কেন্দ্রে যাননি। এসব উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৫০ শতাংশের কম। প্রতিটি আসনেই আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ছিল। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে করা হয় শতাধিক কমিটি। এসব কমিটি ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগ, মহানগর আওয়ামী লীগ, উপজেলা আওয়ামী লীগ, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি সক্রিয় করা হয়। এসব কমিটির সঙ্গে আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও মৎস্যজীবী লীগ পৃথক পৃথক ভাবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করে। এত কমিটি গঠনের পর ক্ষমতাসীনরা আশানুরূপ ভোটার কেন্দ্রে আনতে পারেনি।
বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করায় শূন্য হওয়া ছয়টি আসনের উপনির্বাচনে নিজেদের জন্য তিনটি রেখে বাকি তিন আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দুটি আসন শরিক দলের জন্য এবং একটি উন্মুক্ত রাখা হয়। আসনগুলো হলো- ঠাকুরগাঁও- ৩, বগুড়া- ৪ ও ৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ- ২ ও ৩ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ২ আসন। এছাড়া চট্টগ্রাম- ৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব আসনে আশানুরূপ ভোটার কেন্দ্রে যাননি
দলের সিনিয়র নেতাদের মতে, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে তৃণমূলে একচেটিয়া ক্ষমতার অধিকারী হন অনেকে। এটা রাজনৈতিক অথবা পারিবারিক ভাবে হয়ে থাকে। তৃণমূলের একচেটিয়া দাপটের কাছে অনেক সময় দলও জিম্মি হয়ে পড়ে। দলের হাইকমান্ড অনেক নির্দেশনা দেন কিন্তু ক্ষমতাধর ওই ব্যক্তিরা তা মানেন না। এমনকি নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করতেও পিছ-পা হন না। সে কারণে অনেক সময় ভোটাররাও ভোটকেন্দ্রে যান না। এটা একটা কারণ।
আরও পড়ুন >> তৃণমূলে ‘দুর্বৃত্তের হামলা’, ষড়যন্ত্র খুঁজছে আ. লীগ
অপর কারণ হচ্ছে- প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন। আওয়ামী লীগ আসন ছেড়ে দিলেও অন্যান্য দল নির্বাচন জমাতে পারে না। জোটের প্রার্থী হলেই মানুষ মনে করেন তিনি বিজয়ী হবেন। সে কারণে উপনির্বাচনগুলো প্রতিযোগিতামূলক হয় না। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভোট দেওয়া নিয়েও একটা অনীহা চলে এসেছে।
দলীয় সূত্র মতে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এখন থেকে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে, প্রতিটি আসনেই একাধিক প্রার্থী রয়েছে। দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন অনেকেই। ফলে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে প্রতিটি আসনেই। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে চেষ্টা চালাচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের তাগাদা দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে, এতে বিএনপি সাড়া দিচ্ছে না। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে উপনির্বাচনের মতো ভোটারদের মনে অনীহা দেখা যাবে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতারা।
এদিকে, আসন্ন চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো থাকবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। উপনির্বাচনের ছাপ পড়বে সিটি নির্বাচনগুলোতে। এই নির্বাচনে কাউন্সিলররা নিজেদের স্বার্থে ভোটারদের কাছে যান এবং কেন্দ্রে ভোটার আনতে চেষ্টা করবেন বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬। ৪৮০ কেন্দ্রে মোট ভোট পড়ে পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার ২৫৬টি। অর্থাৎ ৪৮.৭৫ শতাংশ ভোট পড়ে সেখানে।
এই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন পরাজিত করেন। নির্বাচনে কাউন্সিলরদের কারণে ভোটার উপস্থিতি ছিল বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ৪৮০ কেন্দ্রে নৌকার পক্ষে কাজ করতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি শাখার কমিটি করা হয়। কমিটির তুলনায় ভোটার উপস্থিতি কম ছিল বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন >> সিটি নির্বাচনেও ‘ঘুম হারাম’ আওয়ামী লীগের
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘যেকোনো জিনিসে যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে, টানটান প্রতিযোগিতা থাকে তাহলে সবাই ভোটারদের কাছে টানেন, তাদের ভোটকেন্দ্রে যেতে উৎসাহ দেন। কিন্তু উপনির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে না। সেখানে প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। সেই কারণে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসেন না।’
‘আওয়ামী লীগ যারা করেন, তারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন— এটা ঠিক আছে। আওয়ামী লীগের ৪৩ শতাংশ ভোট ব্যাংক রয়েছে। যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন না হয়, বিকল্প প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দুর্বল হয়, তিনি পাঁচ হাজার ভোট পাবেন, দুই হাজার ভোট পাবেন— এটাই তো গণতন্ত্র। এক ভোট বেশি পেলেই পাস। এজন্য টাকা খরচ করে কেউ আর ভোটকেন্দ্রে যান না। যদি টানটান উত্তেজনা থাকত, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকত তাহলে প্রতিযোগিতা বেশি হতো, ভোট কাস্ট বেশি হতো। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তো ভোট কাস্ট বেশি হচ্ছ। সেখানে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। সব প্রার্থীই ভোটারদের কেন্দ্রে আসার জন্য চেষ্টা করেন। প্রতিযোগিতা না থাকলে টাকা খরচ করেও ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানো যায় না।’
এমএসআই/