১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সেনা বিদ্রোহে কর্নেল নাজমুল হুদা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৪৮ বছর পর তার মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজহার খানের মামলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বরং জিয়াউর রহমানই নাজমুল হুদাকে রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’

রোববার (১৪ মে) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল। কর্নেল নাজমুল হুদা হত্যাকাণ্ডের মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হুকুমের আসামি করায় আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

আরও পড়ুন >> কর্নেল নাজমুল হুদা হত্যা মামলার প্রতিবেদন ১২ জুন

লিখিত বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব উল্লেখ করেন, ‘অত্যন্ত রূঢ় সত্যি হচ্ছে, নাহিদ ইজহার খান সম্ভবত তার নিজের মায়ের লেখা বইটাও পড়ে দেখেননি। যেখানে তার মা নীলুফার হুদা লিখিত গ্রন্থ ‘কর্নেল হুদা ও আমার যুদ্ধ’-তে (১৩৪ পাতা) স্পষ্টভাবেই লিখে গেছেন কর্নেল হুদাকে হত্যার সময় কী পরিস্থিতি ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে উপস্থিত মানুষদের জবানবন্দিই প্রমাণ দেয় সেদিন জিয়াউর রহমান কর্নেল নওয়াজিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা এবং মেজর হায়দারকে রক্ষা করার। দায়ের করা মামলার বাদী নাহিদ ইজাহার খানের মায়ের লিখিত গ্রন্থের ১৩৪ পাতায় সুস্পষ্টভাবে হত্যাকাণ্ডের পেছনে কর্নেল তাহেরের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে উঠে এসেছে।’

১৯৭৫ সালে কর্নেল নাজমুল হুদা রংপুর সেনানিবাসে ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন উল্লেখ বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সংঘটিত সামরিক অভ্যুথানের অন্যতম সহযোগী ছিলেন কর্নেল নাজমুল হুদা। অভ্যুত্থানে সক্রিয় নেতৃত্ব দিতে তিনি ঢাকা আসেন। উল্লেখ্য, খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে তাদের নেতৃত্বে তৎকালীন সেনাপ্রধান (পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি) মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করা হয়। মূলত খালেদ মোশাররফ ও তার সহযোগীদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষির সুযোগে প্রথমত ইতিহাসের নৃশংস জেলহত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।’

ফখরুল বলেন, ‘খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থানের ফলে সেনাছাউনিতে চরম বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। যে সুযোগের অপব্যবহার করে কর্নেল তাহের-ইনু গংয়ের নেতৃত্বে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ও জাসদ গণবাহিনীর নেতৃত্বে পাল্টা-অভ্যুত্থান সংঘটিত করে সেনাবাহিনীতে সেনা অফিসার-সৈনিক বিরোধ সৃষ্টি করে নির্মম সেনা অফিসার হত্যার সুদূরপ্রসারী দেশি-বিদেশি চক্রান্তে শামিল হয়। যার নির্মম শিকার হচ্ছেন খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থানের অন্যতম সহযোগী কর্নেল নাজমুল হুদা।’

তিনি আরও বলেন, ‘বস্তুত নাহিদ ইজাহার খান জিয়াউর রহমানকে তার বাবার হত্যার হুকুমদাতা হিসেবে মামলা দায়ের করেছেন বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী গোষ্ঠীর একজন ক্রীড়ানক হিসেবে মাত্র। এর পেছনে রয়েছে সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। যার প্রধান কারণ হচ্ছে চলমান ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে দেশি-বিদেশি গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে।’

মির্জা ফখরুল আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ‘এই সরকারের মাধ্যমে আগামীতে এ ধরনের যড়যন্ত্র চলমান থাকবে। বিশেষ করে সরকার পতনের সময়কাল যত এগিয়ে আসবে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপির বিরুদ্ধে এধরনের ষড়যন্ত্রের মাত্রা আরো বাড়বে।’

এএইচআর/জেডএস