স্থায়ী বহিষ্কার হতে পারেন জাহাঙ্গীর, শেখ হাসিনা ফিরলে সিদ্ধান্ত
>> আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কারের দাবি একাধিক নেতার
>> প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
>> আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আর ডাকা হবে না জাহাঙ্গীরকে
>> জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারের বিষয়টি আজকেই অবগত করা হবে ওবায়দুল কাদেরকে
>> জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না আওয়ামী লীগ : মায়া
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করায় আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কাছে সাধারণ ক্ষমা প্রার্থনার পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে কয়েকটি শর্তে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দেওয়ায় তাকে নিয়ে ফের শুরু হয়েছে সমালোচনা।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, গঠনতন্ত্র, নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কোনো কার্যকলাপে সম্পৃক্ত না হওয়ার অঙ্গীকারের পরিপ্রেক্ষিতে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু গাজীপুর সিটি নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন, যা তার লিখিত অঙ্গীকারের পরিপন্থি। এ অবস্থায় তাকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে তার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের যোগসূত্র আছে কী না তাও খতিয়ে দেখা দরকার।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (২ মে) আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানের সঙ্গে দলের নির্বাচন পরিচালনা সমন্বয় টিম বৈঠক করে। সেই বৈঠকে এসব দাবি জানান সমন্বয় টিমের সদস্যরা।
আরও পড়ুন : শর্ত সাপেক্ষে মেয়র জাহাঙ্গীরকে ক্ষমা করল আওয়ামী লীগ
বৈঠকে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা টিমের প্রধান সমন্বয়ক ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, সমন্বয়ক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সমন্বয় টিমের উপদেষ্টা ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে কীভাবে জয়ী করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করা হয় বৈঠকে। শুরুতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান তার নির্বাচনী এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তার বক্তব্যের পর সমন্বয় টিমের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সেখানে জাহাঙ্গীর আলম ক্ষমা পাওয়ার পরও কী করে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করেন তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তিনি বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এসব করছে কি না তাও খতিয়ে দেখার দাবি করা হয়। যে ব্যক্তি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নৌকার বিরোধিতা করে তার আওয়ামী লীগ করার কোনো অধিকার থাকে না বলে দাবি করেন নেতারা।
আরও পড়ুন : জাহাঙ্গীর পদত্যাগ করেছেন, তার রিট চলতে পারে না: অ্যাটর্নি জেনারেল
বৈঠক সূত্রটি আরও জানায়, জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় আপিল করতে পারেন। তবে তাকে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানের পক্ষে কাজ করতে বলা হচ্ছে। এটি না করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করলে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হতে পারে জাহাঙ্গীরকে। বিষয়টি নিয়ে আজকের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, গঠনতন্ত্র, নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কোনো কার্যকলাপে সম্পৃক্ত না হওয়ার অঙ্গীকারের পরিপ্রেক্ষিতে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু গাজীপুর সিটি নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন, যা তার লিখিত অঙ্গীকারের পরিপন্থি। এ অবস্থায় তাকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা প্রয়োজন
জাহাঙ্গীর আলমকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের বিষয়টি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে আজকেই জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফিরলেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এছাড়া জাহাঙ্গীর আলমকে ডেকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কিছু বলা হবে না।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকের বৈঠকে আলোচিত বিষয়গুলো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জানানো হবে। জাহাঙ্গীরের বিষয়ে শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই সিদ্ধান্ত হবে।
আরও পড়ুন : সিটি নির্বাচনেও ‘ঘুম হারাম’ আওয়ামী লীগের
জাহাঙ্গীর ইস্যুতে আওয়ামী লীগ মাথা ঘামাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও গাজীপুর নির্বাচন উপলক্ষে গঠিত টিমের প্রধান মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না আওয়ামী লীগ।’
আজকের বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সিমিন হোসেন রিমি, সাংগঠনিক সম্পাদক এস. এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুন নাহার, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নিজ জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে নিয়ে গাজীপুর সিটির তৎকালীন মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিতর্কিত বক্তব্যের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর জেরে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে।
আরও পড়ুন : শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাব : জাহাঙ্গীর
২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ১৭(৬) এবং ৪৭(২) ধারা মোতাবেক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট সাধারণ ক্ষমা প্রার্থনা করেন। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার অঙ্গীকার করেন তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগ।
একই ঘটনায় জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদ থেকেও সাময়িক বরখাস্ত হন, সেই আদেশ এখনও প্রত্যাহার হয়নি। এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার টিকিট পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে (২০১৩ সাল) আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আলোচনায় আসেন জাহাঙ্গীর আলম। তখন নির্বাচনে জয়লাভ করেন বিএনপি (প্রয়াত) নেতা এম এ মান্নান।
এবারের নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এমএসআই/এসকেডি