স্বামী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় হন খালেদা জিয়া। হয়েছিলেন দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীও। রাজনীতিতে প্রবেশর পর নিতান্ত এই গৃহবধূর জীবনধারাও পাল্টে যায়। পাল্টে যায় তার ঈদ উদযাপনের চিরাচরিত নিয়মও।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর ঈদকে মোটামুটি তিনটি অধ্যায়ে ভাগ করা যায়। তার মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে ঈদ উদযাপন, এই দুইটি পরিচয়ের বাইরে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশের অন্যতম একটি দলের প্রধান হিসেবে ঈদ উদযাপন, কারাগারে ঈদ উদযাপন। তবে, ২০২০ সালের পর থেকে রাজনীতির বাইরে থাকা এক সময়ের প্রভাবশালী এই রাজনীতিবিদ অনেকটাই একাকীত্বে ঈদ উৎযাপন করে আসছেন। 

বিএনপির মিডিয়া সেলের সূত্র বলছেন, গত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য়  ঈদ উৎযাপন করবেন খালেদা জিয়া। তবে এবারের ঈদে তার একাকিত্ব কিছুটা লাঘব হচ্ছে। কারণ সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে দেশে এসেছেন ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলী রহমান সিঁথি ও তাদের দুই মেয়ে। ফলে, ছেলের বউ ও নাতনিদের নিয়ে এবার ঈদ উদযাপন করবেন তিনি। এছাড়া ঈদের দিন বোন সেলিমা ইসলাম ও ভাই শামীম এস্কান্দারসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্যও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন। আর ওইদিন সন্ধ্যায় বিএনপির মহাসচিবসহ দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা তার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে বাসায় যাবেন।

আরও পড়ুন- ঈদের ছুটি কাজে লাগাতে চায় বিএনপি

বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ঈদের দিন রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করতেন। আর বিরোধী দলীয় নেতা থাকার সময় একইভাবে রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। তারপর দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মাজার জিয়ারত ও ফাতেহা পাঠ করতেন। সন্ধ্যায় নিজ বাসভবনে বিশিষ্টজন ও পারিবারিক সদস্যদের নিয়ে ঈদের মিষ্টিমুখ করতেন। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়কের আমলে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেলে এই নিয়মের কিছুটা ব্যত্যয় ঘটে। তখন ঈদের সময় সংসদ ভবনের অস্থায়ী সাবজেলে তার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান এবং তাদের স্ত্রী ও সন্তানরা। আর ২০১৮ সালে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকার সময় ঈদের দিন পরিবারের সদস্যরা ফুল, মিষ্টি ও রান্না করা খাবার নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। তখন থেকে বিএনপির ঈদের দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান হয় না।

২০১৭ সালে খালেদা জিয়ার ঈদ উদযাপন

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, তিনি জাতীয় নেতা, সব সময় দলের নেতাকর্মীদের উৎসাহ দিয়ে রাখছেন। ঈদের দিন বা পরের দিন যখনি দেখা হয়েছে, হাসি মুখে সালাম বিনিময় হয়েছে। আমরা তার মধ্যে কোনও পরিবর্তন লক্ষ্য করিনি। কখনও তার মধ্যে কোনো হতাশা কিংবা অনুশোচনা দেখিনি।

বিরোধী দলীয় নেতারা কে কোথায় ঈদ করবেন

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ঢাকায় ঈদ করবেন। ঈদের পর তার নিজ এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান ঢাকায় থাকবেন। তবে, স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কুমিল্লার দাউদকান্দিতে এবং আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামের নিজ এলাকায় ঈদ করবেন। আর স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ঈদের দিন সকালে নিজ এলাকা নরসিংদীতে যাবেন। এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর এবং অনুপ্রবেশের দায় থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন আহমেদ ভারতে আছেন। তার সঙ্গে ঈদ করতে ইতোমধ্যে ভারতে গিয়েছেন তার স্ত্রী হাসিনা কাদের।

আরও পড়ুন- নাতনির সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন খালেদা জিয়া

অন্যদিকে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, বরকতউল্লাহ বুলু নোয়াখালীতে, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোর ঈদ করবেন। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ময়মনসিংহ, আব্দুস সালাম আজাদ নিজ এলাকা মুন্সীগঞ্জে ঈদের পরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় গুলশানের বাসায় তিনি ঈদ করবেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের ঢাকায় ঈদ করবেন। ওইদিন বেলা ১১টা থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা এবং সুশীল সমাজের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি।

এছাড়া গণফোরামের ড.কামাল হোসেন ঢাকায়, বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট  বি. চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জেএসডির সভাপতি আ.স.ম আব্দুর রব, জাসদের হাসানুল হক ইনু ঢাকায় ঈদ করবেন বলে জানা গেছে।

এএইচআর/এমজে