আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত : বিএনপি
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ-লুটপাটের ঘটনা কোনো আকস্মিক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলে মনে করছে বিএনপির তদন্ত প্রতিনিধি দল। তাদের দাবি, এটি রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সুপরিকল্পিত ঘটনা। নির্বাচনের আগে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য, বিশেষ করে শাসক দলের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপির ওপর দোষ চাপিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের পূর্বের খেলা নতুন করে শুরু করেছে।
রোববার (১২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের তদন্ত প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদন তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
বিজ্ঞাপন
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপিকে আতঙ্কের মধ্যে রাখার নীল নকশার অংশ হিসেবে এই ন্যক্কারজনক হামলা করেছে। পুলিশ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ২০টি মামলা দিয়েছে, ১২ হাজারেরও বেশি মানুষকে আসামি করেছে। এখন পর্যন্ত বিএনপির ১৮৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এমনকি পঞ্চগড় থেকে অনেক দূরের উপজেলার নেতাকর্মীদেরও এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আটক করেছে। অভিযান চালিয়ে হয়রানি ও আতঙ্কের সৃষ্টি করছে।
বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা কেউ নিজ বাড়িতে থাকতে পারছেন না দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রকৃত ঘটনা কে বা কারা ঘটিয়েছে পুলিশসহ সবাই জানে, অথচ নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের।
তিনি বলেন, এতে বোঝা যায় পুলিশ এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে পূর্বের ন্যায় ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপিয়ে সারা দেশব্যাপী নেতাকর্মীদের জড়িয়ে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা করে দেশে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টায় নেমেছে। কিন্তু জনগণ সবই বোঝে।
পূর্বপরিকল্পিত হওয়ায় পুলিশ ঘটনার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে নীরব ভূমিকা পালন করে, যাতে আহমদিয়াদের ঘরবাড়িতে দুষ্কৃতিকারীরা অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের সুযোগ পায়— দাবি করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারের পূর্বানুমতি নিয়েই তাদের বার্ষিক জলসার দিন ও স্থান নির্ধারণ করে। এ জলসার বিরোধিতা করে কিছু ধর্মীয় সংগঠনের স্থানীয় লোকজন মিছিল মিটিং করে, যা প্রশাসনের জানা ছিল। জলসা বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনও করে কিছু সংগঠন। তারপরও পুলিশ নিরাপত্তামূলক কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি বলেন, আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের ভিকটিমরা প্রকাশ্যেই বলেছে, আওয়ামী লীগের লোকজন বিশেষ করে পঞ্চগড় সদরের সংসদ সদস্য ও বর্তমান রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনের ঘনিষ্ঠরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার পর রেলমন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এলে ক্ষতিগ্রস্তরা চিৎকার করে বলেছে, ঘটনায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী আব্দুর রহমান ও তার ছেলে মোতাহার মন্ত্রীর আশপাশেই উপস্থিত আছে। এই হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচার করা না হলে তারা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবেন। রেলমন্ত্রীর কোনো সদুত্তর না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা তার সামনেই নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বার্ষিক জলসা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে বলে অনেকে মনে করেন বলেও উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে পঞ্চগড়ের ঘটনা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, এ হামলার সঙ্গে বিএনপির নেতারা জড়িত। অথচ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা যে এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত তা তিনি বেমালুম চেপে গেলেন। বিবেকের তাড়না বলেও কি কিছু নেই এদের। নিজেরা অন্যায় করে বিএনপির ওপর দোষ চাপানো আওয়ামী লীগের পুরোনো অভ্যাস। কিন্তু সত্য কোনোদিন চাপা থাকে না। এ দেশের মানুষকে বোকা ভাবার কোনো কারণ নেই।
বিএনপির তদন্ত প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মো. ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
এএইচআর/এসএসএইচ/