বিএনপিকে নেতৃত্বহীন করার লক্ষ্যে সরকার আবারও পুরনো খেলায় মেতে উঠেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, ঘরে-ঘরে তল্লাশি এবং নির্যাতন নিপীড়নের মাত্রা বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে নেতাকর্মীদের যে ধরনের নির্যাতন করে, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। 

সোমবার (৬ মার্চ) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মিথ্যা মামলাকে এই সরকার প্রজেক্টের মতো নিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হচ্ছে। নেতারা জামিন নিয়ে যখন বের হবেন, তখনই আবার জেলগেটে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এখানে আছে বাণিজ্যের ব্যাপার। কারণ এখন পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে গেছে। আমাদের প্রথম কারাগারে নেওয়ার পর কনডেম সেলে রাখা হয়েছিল কোয়ারেন্টিনের নামে। যা চরম অমানবিক। এক্ষেত্রে কারাবিধি মানা হয়নি। কারাগারের আচরণ ও নিপীড়ন যেন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। নির্বাচনের আগে সরকার আবারও বিএনপিকে মাঠশূন্য করতে চায়।

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ অনেক সিনিয়র নেতাকে কারাগারে অমানবিক নির্যাতন শুরু করেছে বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় এবং সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বর্তমানে কেরানীগঞ্জ কারাগারে কারান্তরীণ রুহুল কবির রিজভী ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে সুচিকিৎসা প্রদানে সরকার ও কারাকর্তৃপক্ষের অবহেলায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। 

স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বুকে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ রুহুল কবির রিজভী ডায়াবেটিস-উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফুসফুসে জটিলতা ও হার্টের অসুখসহ বিভিন্ন মারাত্মক অসুখে শারীরিকভাবে অসুস্থ তিনি। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার সময় অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না। সবসময় লাঠির ওপর ভর করে চলতে হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে পুরান ঢাকার আদালতে আসার দীর্ঘ পথ প্রিজন ভ্যানে তাকে আনা নেওয়া হচ্ছে। এই প্রিজন ভ্যানগুলোতে বসার কোনও ব্যবস্থা নেই। এমনকি কোনও কিছু ধরে দাঁড়িয়ে থাকারও ব্যবস্থা নেই। যার জন্য অসুস্থ রুহুল কবির রিজভী চরম ঝুঁকি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনেই আদালতে আনা নেওয়া করানো হয়। 

রিজভী মূলত বর্তমান সরকারের চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে একজন সোচ্চার কণ্ঠ বলেই তিনি তাদের রোষানলের শিকার। রিজভী ছাড়াও বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ অসংখ্য নেতাকর্মী বর্তমান সরকারের রোষানলে কারাবন্দি রয়েছেন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্মূল ও পর্যুদস্ত করতে নিষ্ঠুর আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলার মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে সারা দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। কারাগারগুলোতে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, জহির উদ্দিন স্বপন, কামরুজ্জামান রতন, তাইফুল ইসলাম টিপু, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।

এএইচআর/এসএম