শিগগিরই আ. লীগের উপকমিটি, ‘তদবিরে’ ব্যস্ত পদপ্রত্যাশীরা
• কার্যালয়ে পদপ্রত্যাশীদের হাজিরা
• তদবিরে নেমেছেন সিনিয়র নেতারাও
• ত্যাগীদের মূল্যায়ন করার প্রত্যাশা
আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গঠন করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ছাড়া সম্মেলনের মাধ্যমে সম্পাদকমণ্ডলীর সব পদই পূরণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এবার দলের উপকমিটি পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে উপকমিটির চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিবদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি আছে উপকমিটির সদস্য নির্বাচন। সেগুলো নির্ধারণ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকমান্ড।
কেউ সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের বাসায়, কেউ অফিসে, কেউ দলীয় কর্মসূচিতে সাক্ষাৎ করে পদ প্রত্যাশার কথা বলছেন। অনেকে আবার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢুঁ মারছেন। তবে প্রটোকল নয়, যারা কমিটমেন্ট নিয়ে রাজনীতি করেন তাদের নিয়ে কমিটি করা হবে বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য
উপকমিটিগুলো পুনর্গঠন করতে বেশ কয়েকবার সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও তাগিদ দিয়েছেন। তিনি আসন্ন রমজান মাসের আগে উপকমিটি গঠ্ন করা নির্দেশ দিয়েছেন। তার ওই নির্দেশনার পর পদপ্রত্যাশীরা তদবিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
আরও পড়ুন >> দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন : দলীয় কৌশলে ‘কূটকচাল’
জানা গেছে, কেউ সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের বাসায়, কেউ অফিসে, কেউ দলীয় কর্মসূচিতে সাক্ষাৎ করে পদ প্রত্যাশার কথা বলছেন। অনেকে আবার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢুঁ মারছেন। তবে প্রটোকল নয়, যারা কমিটমেন্ট নিয়ে রাজনীতি করেন তাদের নিয়ে কমিটি করা হবে বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য।
বর্তমানে আওয়ামী লীগের ১৯টি সম্পাদক পদ রয়েছে। তার মধ্যে শ্রম বিষয়ক সম্পাদক পদটি এখনও শূন্য। এ পদে এখনও কাউকে চূড়ান্ত করেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি। তবে ১৮টি সম্পাদকীয় বিভাগের একটি করে উপকমিটি রমজানের আগেই গঠন করতে হবে। সেজন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছেন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা একাধিকবার যৌথসভা করেছেন। সেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘উপকমিটির চেয়ারম্যান-সদস্য সচিবের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কাজেই উপকমিটিগুলো পুনর্গঠন করতে হবে। সে প্রক্রিয়ায় যার যার সীমানা থেকে উদ্যোগ নেবেন। এ বিষয়ে আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’
দলীয় সূত্র মতে, বর্তমানে আওয়ামী লীগের ১৯টি সম্পাদক পদ রয়েছে। তার মধ্যে শ্রম বিষয়ক সম্পাদক পদটি এখনও শূন্য। এ পদে এখনও কাউকে চূড়ান্ত করেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি। তবে ১৮টি সম্পাদকীয় বিভাগের একটি করে উপকমিটি রমজানের আগেই গঠন করতে হবে। সেজন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছেন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা। ক্ষমতাসীন দলের উপকমিটিগুলো কত সদস্য বিশিষ্ট হবে তা গঠনতন্ত্রে উল্লেখ না থাকলেও দলের সাধারণ সম্পাদক বিগত সময়ে এগুলো ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু অনেকেই সেই পরামর্শ মানেননি। কেউ ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করলেও অনেকে ১০১ থেকে ১৫০ সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছি। কাজ চলমান রয়েছে। আসলে কমিটি তৈরির কাজ বেশ কঠিন। এটি করার ক্ষেত্রে দলের হাইকমান্ড কী নির্দেশনা দেন সেটি আগে দেখি। ওই নির্দেশনা অনুসরণ করে কমিটি করে ফেলব।’
আরও পড়ুন >> উঠানেই ‘দুই হাত’ তুলে ভোট চাইবে আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রত্যেক সম্পাদকীয় বিভাগের কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল ও সমন্বিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি সম্পাদকীয় বিভাগে একটি করে উপকমিটি গঠন করা হবে। ওই উপকমিটি একজন চেয়ারম্যান, একজন সম্পাদক, প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষজ্ঞ সদস্য, সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে। জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সদস্য, যারা বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, তারা পদাধিকার বলে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত উপকমিটির সদস্য হবেন। সংগঠনের সভাপতির মাধ্যমে উপকমিটির সদস্য সংখ্যা নির্ধারিত হবে এবং তিনি উপকমিটিগুলো গঠন করে দেবেন। সভাপতি সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলী, উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের মধ্য থেকে উপকমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত করবেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সম্পাদক সংশ্লিষ্ট উপকমিটির সদস্য সচিব হবেন। উপকমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগের কার্যক্রম জোরদারে সহায়তা করবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘উপকমিটি গঠনের প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। আগের একটা কমিটি ছিল, আমরা ওখান থেকে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের নেব। এছাড়া নতুন কিছু সদস্য যুক্ত করা হবে যারা রাজনীতিতে সক্রিয়। দলের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনা অনুযায়ী, যারা চেহারা দেখানোর জন্য থাকেন তারা নয়, যারা কমিটমেন্ট নিয়ে রাজনীতি করেন তাদের মধ্য থেকে সদস্য নিয়ে কমিটি করা হবে।’
‘আমাদের চেয়ারম্যানও দেশে নেই। তিনি ওমরাহ করতে গেছেন। দেশে এলেই ইনশাল্লাহ কমিটি গঠন করে ফেলব। উপকমিটি কত সদস্যের হবে তা গঠনতন্ত্রে বলা নেই। তবে যতটুকু পারি ছোট করব। কমিটির কলেবর বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই। কোয়ান্টিটি বাড়িয়ে কী হবে যদি কোয়ালিটি বাড়াতে না পারি।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উপকমিটি গঠনের আওয়াজে নিষ্ক্রিয় কর্মীরা এখন অনেকটাই সক্রিয়। প্রতিদিন আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের সামনে এসে হাজিরা দিচ্ছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক কার্যালয়ের প্রবেশমুখে সরব উপস্থিতি অনেকের। এছাড়া সম্পাদকমণ্ডলীর কোন সদস্য কখন আসবেন, সেই খোঁজখবর নিয়ে উপকমিটির পদপ্রত্যাশীরা কার্যালয়ে ভিড় করছেন।
আরও পড়ুন >> জনপ্রতিনিধিরাই ‘নৌকা’ ডোবায়, সতর্ক কি আ. লীগ?
দলীয় কার্যালয় ছাড়াও অনেকে সম্পাদকমণ্ডলীর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভিড় করছেন। সেখানে নিজের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন। এছাড়া উপকমিটিতে রাখতে অনেকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের স্বাক্ষরিত চিঠি কিংবা মৌখিক তদবির নিয়েও হাজির হচ্ছেন। সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তাদের ভাষ্য মতে, আমরা উপকমিটির জন্য কাজ করছি। গত কমিটির কিছু সদস্য অবশ্যই থাকবে। নতুন কিছু যুক্ত হবে। সমস্যা হচ্ছে, দলের সিনিয়র অনেক নেতার তদবির থাকে। যা ফেলার মতো নয়। কারণ, সিনিয়র নেতার সুপারিশ না রাখলে মন খারাপ হবে। এখন এত বেশি সুপারিশ আসছে, সব রাখতে গেলে সেই কমিটির সদস্য সংখ্যা শতাধিক হবে।
তারা আরও বলেন, আমাদের কোনো বাহিনী নেই যে তদন্ত করে দেখব কে ভালো, কে মন্দ? বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে উপকমিটি নিয়ে। আপনারা হয়ত জানেন, শাহেদ, হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ অনেকের কারণে সমালোচনায় পড়তে হয়েছে। এবার কমিটি করার ক্ষেত্রে বিষয়টির ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। আমরা সিনিয়র নেতাদের সুপারিশ রাখব। তবে কে কার জন্য সুপারিশ করছেন, সেটা চিরকুট আকারে জমা দেওয়ার সময় লিখে দেব। চোখ-কান খোলা রেখেই কমিটি গঠন করা হবে।
গত ২২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন বিভাগীয় উপকমিটির চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেন সংগঠনটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান করা হয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানকে। এ কমিটির কো-চেয়ারম্যান করা হয় ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে। আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয় অ্যাম্বাসেডর মোহাম্মদ জমিরকে। এছাড়া আইন বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান করা হয় অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ড. মির্জা জলিল, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান এবং কো-চেয়ারম্যান করা হয় অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামকে।
আরও পড়ুন >> আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ‘ট্রাম্প কার্ড’ মেট্রোরেল
দপ্তর উপকমিটির চেয়ারম্যান করা হয় প্রফেসর ড. অনুপম সেনকে। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন এ কে এম রহমত উল্লাহ ও কো-চেয়ারম্যান হন চৌধুরী খালেকুজ্জামান, ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন খন্দকার গোলাম মওলা নকশবন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান হন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন; কো-চেয়ারম্যান হন প্রফেসর ড. সাদেকা হালিম, বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক ড. মো. হোসেন মনসুর, মহিলা বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক ড. সুলতানা শফি; কো-চেয়ারম্যান হন মাজেদা রফিকুন্নেছা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রশিদুল আলম, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন মোজাফফর হোসেন পল্টু; কো-চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক ড. আব্দুল খালেক; কো-চেয়ারম্যান হন নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন কাজী আকরাম উদ্দীন আহমদ, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন আব্দুল হাফিজ মল্লিক; কো-চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সিরাজ, সংস্কৃতি বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন আতাউর রহমান এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক।
এমএসআই/জেডএস/এমএআর/