অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা কাজী নাঈম (ইনসেটে)/ সংগৃহীত ছবি

পরীক্ষার হলে এক ছাত্রকে দেখে লিখতে না দেওয়ায় চট্টগ্রাম মহসিন কলেজের এক শিক্ষককে মারধর করে কলেজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার (বদলি করার) হুমকি দিয়েছেন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈম। পরে ক্ষমা চাইলেও কলেজের শিক্ষকরা বলছেন এভাবে প্রকাশ্যে শিক্ষক শাসানোর মতো অসদাচরণ ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়মিত ঘটনা।

গত বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) মহসিন কলেজে ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলের শিফটে ওই কেন্দ্রে সরকারি কমার্স কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেন। সেখানে এক শিক্ষার্থী দেখে দেখে লিখছিলেন। তাকে বাধা দেন ওই কক্ষে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষক হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মুজাহিদুল ইসলাম। দেখে লিখতে না পেরে দেড় ঘণ্টা পর হল থেকে বের হয়ে যান ওই পরীক্ষার্থী। এর কিছুক্ষণ পর মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈমকে নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন ওই পরীক্ষার্থী। নাইম শিক্ষক মুজাহিদুল ইসলামকে অন্য সবার সামনে শাসিয়ে যান।

নাইম জিজ্ঞেস করে, আপনি ছেলেটাকে হল থেকে বের করে দিয়েছেন কেন? আমি বললাম, আমি তো বের করে দিইনি, সে নিজে খাতা দিয়ে বের হয়ে গেছে। নাঈম বলে, আপনি তাকে দেখে লিখতে দেননি কেন? আমি বলেছি, আমি তো এভাবে দেখে লিখতে দিতে পারি না। 

প্রত্যক্ষদর্শী আরেক শিক্ষক ঘটনার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।

শিক্ষক মুজাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বের হয়ে যাওয়ার এক ঘণ্টা পর ছাত্রলীগ নেতা নাঈমসহ কয়েকজনকে নিয়ে পরীক্ষার হলে আসে ওই পরীক্ষার্থী। তখনো পরীক্ষা চলছিল। এসেই নাইম জিজ্ঞেস করে, আপনি ছেলেটাকে হল থেকে বের করে দিয়েছেন কেন? আমি বললাম, আমি তো বের করে দিইনি, সে নিজে খাতা দিয়ে বের হয়ে গেছে। নাঈম বলে, আপনি তাকে দেখে লিখতে দেননি কেন? আমি বলেছি, আমি তো এভাবে দেখে লিখতে দিতে পারি না। আমাকে সরকার দায়িত্ব দিয়েছে। আমি দায়িত্ব পালন করছি। তখন সে আমাকে হল থেকে বের হলেই মারবে এবং বদলি করে দেবে বলে হুমকি দেয়।

বিষয়টি আমি কলেজ প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা গতকাল রোববার অভিযুক্তদের ডেকেছে। তারা এসে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। আমিও ক্ষমা করে দিয়েছি। তবে এ ধরনের ঘটনা যাতে সামনে না ঘটে সেজন্য কলেজ প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি— বলেন শিক্ষক মুজাহিদুল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মহসিন কলেজে খুব বাজে অবস্থা চলছে। এ বিষয়ে কলেজ প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দিনের পর দিন শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ করে যাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতারা।

মহসিন কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও গণিত বিভাগের শিক্ষক সুবীর দাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ভুক্তভোগী শিক্ষকের কাছ থেকে ঘটনা শোনার পর ছাত্রলীগ নেতা নাঈমের কাছে বিষয়টি জানতে চাই। সে আমাকে বলে, আপনি কে এসব জিজ্ঞেস করার, ওই শিক্ষক খাতা কেড়ে নিল কেন? আমি তাকে মারব, এ কলেজের সব বিষয় দেখাশোনা করার দায়িত্ব আমার। আমি কলেজের সর্বেসর্বা।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় আজ (সোমবার) শিক্ষক পরিষদ থেকে আমি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাকে ছাত্ররা বলেছিল তাদের খাতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমি তাদের অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ দিতে বলি। আমি কোনো শিক্ষককে হুমকি দিইনি। কলেজে একটি গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে যারা ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করতে চায়, আমরা তাদের প্রত্যাহারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। শিক্ষকের অভিযোগের বিষয়ে আপনি অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলুন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার আমরা অভিযুক্ত নাঈমকে ডেকে এনেছি। বৈঠকে কলেজের সিনিয়র শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনে অভিযুক্ত নাঈম ‘ঘটনার জন্য লজ্জিত’ বলে ক্ষমা চেয়েছেন।

এমআর/এসএসএইচ/জেএস