# দুই নেত্রীই পার করেছেন ২০ বছর
# নেতৃত্ব বাছাইয়ে বয়সসীমা কত?
# নতুন নেতৃত্ব আসবে তো?

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের জাতীয় সম্মেলন আজ। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটির তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সংগঠনের শীর্ষ দুই পদে কারা আসবেন তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা চলছে। বিকল্প নেতৃত্বের কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।

তবে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, সংগঠনের ভেতর থেকে একজন এবং বাইরে থেকে আরেকজনকে শীর্ষ পদ দেওয়া হতে পারে। আবার কারও মতে আগের নেতৃত্ব থেকেই কেউ না কেউ আসতে পারেন শীর্ষ পদে।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, যুব মহিলা লীগের শীর্ষ দুই পদ গত ২০ বছর ধরে আঁকড়ে রেখেছেন বর্তমান সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল। দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ পদে দুই নেত্রী দায়িত্বে থাকায় অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে সহযোগী এ সংগঠনের কার্যক্রম।

অভিযোগ রয়েছে, সাংগঠনিক কাজের চেয়ে টেন্ডারবাজি, তদবির আর লবিংয়ে ব্যস্ত থাকেন যুব মহিলা লীগের নেতারা। গত বছর দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় তুলেছিল শামীমা নূর পাপিয়ার কাণ্ড। পাপিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা অপকীর্তি প্রকাশ হওয়ার পর আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে যুব মহিলা লীগের নেতা-নেত্রীরা একে অন্যকে দোষারোপ করে আসছিলেন। গ্রেপ্তারের পর পাপিয়ার দায় নিতে নারাজ ছিল যুব মহিলা লীগ।

আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা বলেন, আলোচিত পাপিয়া কাণ্ডে যুব মহিলা লীগের ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে। আগামী দিনে যারা নেতৃত্বে আসবেন, তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে সংগঠনের বিষয়ে মানুষের মধ্যে যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়েছে, তার পরিবর্তন।  

তিনি আরও বলেন, যুব মহিলা লীগের বয়সটাও এবার দেখা হবে। ৫০ বছরের নিচে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। বর্তমান কমিটির অনেকের বয়স ৫০ এর বেশি।
 
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেই নেতৃত্ব আসবে। যোগ্য নেতৃত্বই উপহার দেবেন আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনা। আমাদের প্রত্যাশা, আগামীতে যারাই যুব মহিলা লীগের নেতৃত্বে থাকবেন তারা সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন এবং দলের জন্য পরিশ্রম করবেন। আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের সুনাম বয়ে আনবেন।’

জানা গেছে, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় যুব মহিলা লীগের সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন বর্তমান সভাপতি নাজমা আক্তার। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল সম্মেলন পরিচালনা করবেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালের ৬ জুলাই যুব মহিলা লীগ গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালে সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রীদের নিয়ে ১০১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে বর্তমান সভাপতি নাজমা আক্তার আহ্বায়ক ছিলেন। বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। যুব মহিলা লীগের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। ওই সম্মেলনে নাজমা আক্তার সভাপতি ও অপু উকিল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

তিন বছর পরপর সম্মেলনের কথা থাকলেও ১৩ বছর পর সংগঠনের দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালে। এ সম্মেলনে নাজমা আক্তার ও অপু উকিল পুনর্নির্বাচিত হন।

এবারের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ১০-১২ জন নেত্রীর নাম আলোচনায় রয়েছে। শীর্ষ পদের জন্য আলোচনায় আছেন যুব মহিলা নেত্রী অপু উকিল, কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, আদিবা আঞ্জুম মিতা, নাদিরা পারভীন লাকী, ডেইজি সারোয়ার, নার্গিস মাহতাব, পারভিন খায়ের, জেদ্দা পারভীন রিমি ও শাহনাজ পারভীন ডলি, নাজমা আক্তার, শামীমা চৌধুরী বীথি, জাকিয়া মনি, আসরাফুন্নাহার পারুল, শারমীন সুলতানা লিলি, জেসমীন শামীমা নিঝুম, শারমীন মেরী, জাকিয়া সৃজনী শিউলি, শামসুন নাহার রত্না প্রমুখ।

তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, যুব মহিলা লীগের সভাপতি হতে পারেন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। 

এছাড়া কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য মারুফা আক্তার পপির নামও শোনা যাচ্ছে। তবে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে অপু উকিল এবার সভাপতির পদ পেতে চাচ্ছেন। এজন্য তিনি আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে লবিং-তদবির করছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।  

এমএসআই/এসকেডি