ছয় বছরেও ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি গঠিত হয়নি। দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছেন নেতাকর্মীরা।

বর্তমান সময়ের জাতীয় রাজনীতিবিদদের অনেকের হাতেখড়ি হয়েছিল ঢাকা কলেজ থেকে। দেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগকে। তবে এত ত্যাগ-তিতিক্ষার পরও বরাবরই বঞ্চিত হয়েছেন এখানকার নেতাকর্মীরা। এই ইউনিটের কমিটি গঠনে বরাবরই পিছু হটেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। গত দুই যুগে ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছে মাত্র চারটি। এর মধ্যে একটি আবার আহ্বায়ক কমিটি।

দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা যেমন রাজনীতিবিমুখ হচ্ছেন, তেমনি হতাশায় ভুগছেন কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

তাদের ভাষ্য, এভাবে চলতে থাকলে ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের অবস্থান হারাতে হবে। তৈরি হবে নেতাকর্মী সংকট। আর ছাত্রলীগ অস্তিত্ব হারালে সেখানে শুরু হবে স্বাধীনতা বিরোধীদের কার্যক্রম। কমিটি ছাড়া এমন ছন্নছাড়া পরিস্থিতিতে নতুন করে আর কোনো শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হবে না।

দীর্ঘদিনেও কমিটি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বর্তমানে রাজনীতিতে জড়িত কর্মীরাও। তারা জানান, দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় মানসিক হতাশায় ভুগছেন সবাই। অনেকে রাজনীতিতে সময় দিয়ে এখন আর চাকরিতে ঢুকতে পারছেন না। দীর্ঘদিনের রাজনীতিতে প্রাপ্তির খাতা যেন শুধুই শূন্য। তবে ঠিক কী কারণে কলেজের কমিটি আলোর মুখ দেখছে না সে বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারছেন না কেউ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছিল ২০১৩ সালে। ওই বছর ২৯ নভেম্বর রাতে কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়। এ ঘটনার জেরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ৩০ নভেম্বর স্থগিত করা হয় ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের তৎকালীন কমিটি। তখন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন ফুয়াদ হাসান পল্লব ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাকিব হাসান সুইম।

আরও পড়ুন : ১০ বছরেও অনার্সের গণ্ডি পার হতে পারেননি ছাত্রলীগ নেত্রী তিলোত্তমা

এ ঘটনার প্রায় তিন বছর পর ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর তিন মাসের জন্য নুর আলম ভূইয়া রাজুকে আহ্বায়ক করে একটি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। এরপর ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় সেই আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়কসহ মোট ১৯ জন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সেই তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি পরে আর কোনোদিন আলোর মুখ দেখেনি।

জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে ২৮ জন যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৯০ জন সদস্য রয়েছেন। তবে এর মধ্যে অনেকেই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়েছেন। কেউ আবার মনে কষ্ট নিয়ে রাজনীতিবিমুখ হয়ে চাকরিজীবী কিংবা সংসারী হয়েছেন।

বর্তমান সময়ে জাতীয় রাজনীতিবিদের মধ্যে অনেকের রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছিল ঢাকা কলেজ থেকে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে ভূমিকা রাখতেও দেখা যায় ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগকে। তবে এত ত্যাগ-তিতিক্ষার পরও বরাবরই বঞ্চিত হয়েছেন এখানকার নেতাকর্মীরা

দীর্ঘদিনেও কমিটি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বর্তমানে রাজনীতিতে জড়িত কর্মীরাও। তারা জানান, দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় মানসিক হতাশায় ভুগছেন সবাই। অনেকে রাজনীতিতে সময় দিয়ে এখন আর চাকরিতে ঢুকতে পারছেন না। দীর্ঘদিনের রাজনীতিতে প্রাপ্তির খাতা যেন শুধুই শূন্য। তবে ঠিক কী কারণে কলেজের কমিটি আলোর মুখ দেখছে না সে বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারছেন না কেউ।

আরও পড়ুন : প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ জয়-লেখক!

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতাকর্মীরা জানান, আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও প্রাপ্তির খাতা শূন্য। অজানা ইশারায় দীর্ঘদিন ধরে থমকে আছে কলেজ ছাত্রলীগের কমিটির কার্যক্রম। বিভিন্ন সময় বঞ্চনার শিকারও হতে হচ্ছে অনেককে। অথচ দলের যেকোনো প্রয়োজনে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগই সবার আগে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

কমিটি না থাকার বিষয়ে হতাশ ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দও। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০২ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলনের আগ পর্যন্ত ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ফিরোজ আল আমিন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক।

আরও পড়ুন : দুধ দিয়ে গোসল করে রাজনীতির ইতি টানলেন ছাত্রলীগ নেতা

তিনি বলেন, ঢাকা কলেজের দীর্ঘদিনের ছাত্র রাজনীতির ঐতিহ্য আছে। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সবার আগে ভূমিকা পালন করেছে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ। এখান থেকে অনেক জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে। আমাদের সময়েও কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনের আগে কলেজে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হয়ে যেত। পরপর তিনবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ দলীয় মিটিং-মিছিলে সরব ছিল। তবে কমিটি দিতে কেন এই বিলম্ব তা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকই ভালো বলতে পারবেন।

এদিকে কমিটি নিয়ে বহুবার আশার বাণী শুনিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু গতি ফেরাতে পারলেন না তারাও। যদিও ‘শিগগিরই কমিটির ঘোষণা আসছে’, ‘সামনের মাসেই কমিটি’, ‘নেতৃবৃন্দ যাচাই-বাছাই চলছে’, ‘কমিটি দেওয়ার মাধ্যমে নেতৃত্বশূন্যতা দূর করা হবে’ অসংখ্যবার এমন আশার বাণী শুনিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। কমিটির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যও।

কিন্তু শেষ বেলায় তারাও নাম লেখালেন ব্যর্থদের কাতারে। কলেজ ছাত্রলীগের সিনিয়র-জুনিয়র অসংখ্য নেতাকর্মীকে কমিটির আশ্বাস দিয়েও এখন পিছু হটেছেন তারা।

এসব বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি।

তবে চাইলেই কলেজের কমিটি দেওয়া যায় না বলে দাবি করেছেন ঢাকা কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজীর হোসেন নিশী।

ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছিল ২০১৩ সালে। ওই বছর ২৯ নভেম্বর রাতে কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়। এ ঘটনার জেরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ৩০ নভেম্বর স্থগিত করা হয় ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের তৎকালীন কমিটি। তখন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন ফুয়াদ হাসান পল্লব ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাকিব হাসান সুইম।

তিনি বলেন, কমিটি দেওয়ার জন্য বেশ কিছু প্রক্রিয়া আছে, চাইলেই দেওয়া যায় না। কিছু বিষয় মাথায় রেখে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কমিটি দিতে হয়। আমরা কমিটি দেওয়ার জন্য আন্তরিক ছিলাম, এখনও আছি। তবে ঢাকা কলেজের কমিটি দেওয়া হবে এমন সময়ই আমাদের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।

তাহলে এতদিন কেন কমিটি দেওয়া হয়নি, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

তবে এই কমিটির অধীনে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, আগামী ৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে। নতুন নেতৃত্ব এসে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করবে। এই মুহূর্তে আর কমিটি দেওয়ার সুযোগ নেই।

আরএইচটি/এসকেডি