ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরে নেতাকর্মীদের প্রতি মির্জা ফখরুল
‘আসুন শপথ করি, সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে ঘরে ফিরব না’
আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘরে না ফিরে যাওয়ার শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (৭ নভেম্বর) ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানান তিনি। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে ছেলে-মেয়ে হত্যা, গুম এবং মা-বোনদের নির্যাতন ও অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আজকে আবার বাংলাদেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে চায় তারা। তাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য আজকে সেই পতাকা তুলে ধরেছে জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে আমাদের নেতা তারেক রহমান।’
তিনি আরও বলেন, ‘৭ নভেম্বর দেশের মানুষের কাছে আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা করার অঙ্গীকার। সেই আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনে ইতোমধ্যে ৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে। বিভিন্ন বিভাগীয় সমাবেশে ৩ থেকে ৪ দিন আগে হেঁটে গিয়ে অংশ নিচ্ছে নেতাকর্মীরা। তাদের একটাই দাবি, সেটা হচ্ছে শেখ হাসিনা কবে যাবি।’
এসময় মির্জা ফখরুল স্লোগান ধরেন, ‘এক দফা, এক দাবি, শেখ হাসিনা কবে যাবি। দফা এক, দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’
সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলছি, পদত্যাগ করুন আপনারা। সংসদ বিলুপ্ত করুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকাররের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে নতুন একটা নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন করুন। সেই নির্বাচনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যাচ্ছে, নিহত হচ্ছেন। আমাদের আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। গণতন্ত্র পেতে হলে, স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হলে ত্যাগের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে গিয়ে পতাকা ওপরে তুলে ধরতে হবে। আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার করার পতাকা তুলে ধরতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাই আসুন আজ ৭ নভেম্বর এই শপথ গ্রহণ করি, সেই লক্ষ্যকে অর্জন না করে, এই সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে, গণতন্ত্র ফিরিয়ে না এনে, অধিকার ফিরিয়ে না এনে ঘরে ফিরে যাব না।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে অলিখিত বাকশাল চলছে। এই সরকারের পতনের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৭১ সালে রাজনৈতিক নেতারা যখন ব্যর্থ হয়েছিলেন, তখন স্বাধীনতা আনতে মেজর জিয়া সফল হয়েছিলেন। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। ৭৫ সালেও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ব্যর্থতায় জিয়াউর রহমান সফল হয়ে ৭ নভেম্বরের স্বাধীনতা রক্ষা করেছিলেন। আজকে আমাদের সেই চেতনায় দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।’
চলমান আন্দোলনে নেতাকর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়ে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এই লুটেরা সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘রাজধানীতে ১০ তারিখের সমাবেশের আগেই ঢাকার আশপাশে মামলা হামলা হচ্ছে। এভাবে জনগণের আন্দোলন স্তব্ধ করা যায় না। কাউকে স্তব্ধ করার এখতিয়ার সরকারি সংস্থার নাই।
খুব তাড়াতাড়ি ব্যাংকগুলো দেউলিয়া ঘোষণা করবে দাবি করে গয়েশ্বর বলেন, তখন আমানতকারীরা রাস্তায় নামবে।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ। এছাড়া কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. ইবরাহিমও বক্তব্য রাখেন।
এএইচআর/এসএম