আমি দেখে নেব উনি কীভাবে রাজনীতি করেন, জি এম কাদেরকে রাঙ্গা
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের কীভাবে রাজনীতি করেন তা দেখে নেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া মশিউর রহমান রাঙ্গা।
তিনি বলেন, ‘আমাকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়ে জি এম কাদের কীভাবে রংপুরে রাজনীতি করেন, আমিও তা দেখে নেব। আমি সংসদের বিরোধী দলীয় চিপ হুইপ। আমাকে রওশন এরশাদ হুইপ বানিয়েছেন, তিনি (জি এম কাদের) চাইলেও আমার এই পদ খাইতে পারবেন না। আমি দেখে নেব, উনি কীভাবে রাজনীতি করেন।’
বিজ্ঞাপন
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে প্রেসিডিয়াম সদস্য থেকে অব্যাহতির খবর পাওয়ার পর ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন রাঙ্গা।
তিনি বলেন, ‘হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও জি এম কাদেরকে অনেকবার বহিষ্কার করেছিলেন। এখন তিনি কথায় কথায় অন্যদের বহিষ্কার করেন। এবার এটার শেষ দেখে নেব।’
জাপার সাবেক এই মহাসচিব বলেন, ‘এরশাদ সাহেবের মৃত্যুর পর দলের নবম কাউন্সিলে জি এম কাদের চেয়ারম্যান আর আমি মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। আমি যেহেতু দলে ঠিকমতো সময় দিতে পারতাম না, তাই এটা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন তিনি এটা কী করলেন? অন্যের কথা শুনে তিনি এটা করেছেন তো, তারা ওনাকে রক্ষা করতে পারবে কি না দেখা যাবে।’
>> জিএম কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা করতে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সমর্থন
কেন আপনাকে বহিষ্কার করা হয়েছে- জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, ‘রওশন এরশাদকে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে দিতে স্পিকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই চিঠি দেওয়া নিয়ে অনেক সংসদ সদস্যের দ্বিমত ছিল। অনেক সংসদ সদস্যকে মিথ্যা বলে জি এম কাদের সেই চিঠিতে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন। তাদর সেই চিঠি আমাকে দেওয়া হয়েছিল স্পিকারকে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি বলেছিলাম, এই চিঠি আপনি দেন। কিন্তু তিনি বললেন- এটা চিপ হুইপের দেওয়ার নিময়। তারপর আমি স্পিকারকে চিঠি দিয়েছি। বিষয়টা নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কথা বলেছিলাম। তার কারণে হয়তো আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জি এম কাদের অনেক আবোল-তাবোল কথা বলেন। অনেক মিথ্যা কথা বলেন। তিনি পার্টিকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। আমি জি এম কাদেরকে বলেছিলাম, জাতীয় পার্টি এমনিতে ৯ বার ভেঙেছে, আর পার্টিকে ভাঙবেন না। সবাই মিলে মিশে রাজনীতি করেন। প্রয়োজন হলে আমি জাতীয় পার্টি থেকে সরে যাব। আগামী সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেব না। তারপরও আপনারা সবাই মিলে পার্টিকে রক্ষা করেন। কিন্তু তিনি এখন আমাকে অব্যাহতি দিলেন। এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করলাম। আমি দেখে নেব, তিনি কীভাবে রাজনীতি করেন, কীভাবে রংপুরে যান। আমাকে বাদ দিয়ে কীভাবে সেখানে রাজনীতি করেন।’
রওশন এরশাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়েছে কি না জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, ‘না এখনো ওনার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। দেখি কী করা যায়।’
নাম না প্রকাশ করার শর্তে জাপার একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মশিউর রহমান রাঙ্গা গতকাল একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যেভাবে কথা বলেছেন, সেটা ঠিক হয়নি। কারণ, পার্টির অভ্যন্তরে অনেক বিষয়ে আলোচনা হবে, অনেক বিষয়ে দ্বিমতও থাকতে পারে। কিন্তু সেটা তো প্রকাশ্যে মিডিয়াতে বলা যাবে না।’
>> কাউন্সিল ডাকলেন রওশন, জানেন না জি এম কাদের
তিনি আরও বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে সংসদের বিরোধী দলের নেতা করতে জাপার সাংসদরা স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন। যদিও এই চিঠি দেওয়া নিয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের কেউ কেউ আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু সেটা দলের অভ্যন্তরে হয়েছে। প্রকাশ্যে সবাই বলেছেন, আমরা একমত হয়ে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা থেকে রওশন এরশাদকে সরিয়ে জি এম কাদেরকে মনোনয়ন দিতে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু রাঙ্গা সাহেব একটি টেলিভিশনে বলেছেন- স্পিকারকে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে অনেক সংসদ সদস্যের আপত্তি ছিল। সেই কারণে ওনাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে মনে হয়।’
এ প্রসঙ্গে রাঙ্গা বলেন, ‘দলের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, রওশনকে সরিয়ে জি এম কাদের যদি সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হয়, তাহলে আমাকে উপনেতা করতে হবে, না হলে আমি চিঠিতে সই করব না। শুধু তাই নয়, অনেক সংসদ সদস্য আপাকে (রওশন এরশাদ) বলেছেন- তারা আগে জানলে সেই বৈঠকেই আসতেন না।’
উল্লেখ্য, বুধবার জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সকল পদ থেকে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলীয় গঠনতন্ত্র প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সকল পদ-পদবি থেকে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি প্রদান করেছেন। ইতোমধ্যে এ আদেশ কার্যকর হয়েছে।
এএইচআর/ওএফ