ছাত্রদলের অপকর্ম নিয়ে কথা নেই, ছাত্রলীগের কিছু হলেই বড় নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের পেছনে লোক লেগেই আছে এবং লেগেও থাকবে। ছাত্রদল কত অপকর্ম করে গেছে সেটা নিয়ে কথা নেই। কিন্তু ছাত্রলীগের একটা কিছু হলেই বড় নিউজ হয়।
বুধবার (৩১ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘আমি জানি ছাত্রলীগ সম্পর্কে অনেক কথা লেখা হয়। আমরা ক্ষমতায় আছি বলে অনেকে ভেতরে ঢুকে যায় এবং নিজেরা গোলমাল করে। বদনামটা পড়ে ছাত্রলীগের ওপর।’
শেখ হাসিনা অনুপ্রবেশকারী সম্পর্কে সাবধান করে দিয়ে বলেন, ‘ছাত্রলীগকে সংগঠন করার সময় গ্রুপ ভারী করতে আলতু-ফালতু লোক দলে ঢোকালে চলবে না। তাতে নিজেদের, দলের এবং দেশের বদনাম হয়। ’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মানবতার সেবার পাশাপাশি লেখাপড়া করতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি আমি চাই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আসবে এবং সেজন্য আমাদের আজকের প্রজন্ম বা প্রজন্মের পর প্রজন্ম নিজেদের প্রস্তুত করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের যুগ। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা-দীক্ষায় উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। কেননা দেশ চালাতে গেলে শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রয়োজন রয়েছে। সবাইকে ইতিহাস জানতে হবে এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হতে হবে।’
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত স্বার্থ ও লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে ত্যাগ স্বীকার করে এগিয়ে গেলেই নিজেদের প্রকৃত নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে। চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে ত্যাগ স্বীকার করে এগোতে পারলে সঠিক নেতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা যায়। কিন্তু গড্ডালিকা প্রবাহে অর্থ-সম্পদের পেছনে ছুটলে ওই অর্থ সম্পদেই ভেসে যেতে হয়। তখন নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতাও থাকে না, দেশ ও মানুষকেও কিছু দেওয়া যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতিহাস না জানলে শিক্ষা নেওয়া যায় না, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হয়। আগামী দিনে চলার পথ তৈরি করতে হয়। যদিও ইতিহাসের একইরকম পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, তবে সময়ের বিবর্তনে সেটা আসবে। আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি বলেই আমরা সেটা জানি।’
প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রকৃত ইতিহাস জানার পাশাপাশি জ্ঞান আহরণে জাতির পিতার লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা,’ এবং ‘আমার দেখা নয়া চীন’সহ জাতির পিতাকে নিয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার যে রিপোর্ট তাকে ভিত্তি করে লেখা সিক্রেট ডকুমেন্ট সিরিজের বইগুলো পড়তে ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে তাদের সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। কেননা বিশ্ব আরও গভীর খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হতে পারে। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজন হলে ছাত্রলীগকে ধানের চারা রোপণে সাহায্য করতে হবে যেভাবে তারা কোভিড-১৯ সময়কালে ধান কাটার সময় সাহায্য করেছিল।’
বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানি ব্যবহারে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সাশ্রয়ী হবার আহ্বান জানান তিনি।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। মহানগর উত্তরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন এবং সাইদুর রহমান হৃদয়, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান ও জুবায়ের আহমেদ এবং ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন সভায় বক্তৃতা করেন। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সভা সঞ্চালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের দুটি প্রকাশনা ‘মাতৃভূমি’ ও ‘জয় বাংলার’ মোড়ক উন্মোচন করেন।
আরএইচ