বিএনপি রাজনৈতিক দল নয়, সন্ত্রাসী সংগঠন দাবি করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, এদের বিচার করতে হবে। 

শনিবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এরা খুনি ও ষড়যন্ত্রকারীদের সংগঠন। এরা দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উসকে দিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চায়। এরা সিরিজ বোমা হামলা ও জঙ্গিবাদের উত্থানে জড়িত। এরাই একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা করেছে। এই খুনি ও সাম্প্রদায়িক দলকে কানাডার আদালত সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে রায় দিয়েছিল। এদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মাস্টার মাইন্ড। আদালতের রায়ে তা প্রমাণিত এবং এই মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। 

তিনি বলেন, ২১ আগস্টের হামলায় জড়িত ছিল বিএনপি। এই মামলায় আদালতের রায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, হরকাতুল জিহাদের মুফতি হান্নান, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির টিকিটে কুমিল্লা থেকে সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, বিএনপি সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তাজুল ইসলাম যাকে ভুয়া পাসপোর্টে বিএনপি বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। এ থেকেই প্রমাণিত হয় বিএনপি এ ঘটনায় জড়িত।  

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, হত্যাকারী ও স্বাধীনতা বিরোধীদের দল বিএনপির লক্ষ্য জাতির পিতার আদর্শকে ধ্বংস করা এবং বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানানো। এখন তারা দেশের বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র করে এবং স্লোগান দেয় টেক ব্যাক বাংলাদেশ। দেশকে ধ্বংস করতে এরা এমন স্লোগান দেয়। আমরা তাদের বলতে চাই, গো ব্যাক পাকিস্তান। আপনারা পাকিস্তান, আফগানিস্তান যেখানে খুশি ঘাঁটি গাড়তে পারেন, বাংলাদেশে নয়। এই বিএনপি জামায়াতের শাসন আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে প্রথম হয়েছিল। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ১০ ট্রাক অস্ত্র নিয়ে দেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। এদের প্রত্যক্ষ মদদে আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই এর মতো জঙ্গিরা দেশে সিরিজ বোমা হামলা করেছিল। 

তিনি বলেন, বিএনপি এখন এতটাই দেউলিয়া হয়ে গেছে যে তারা যাদের কোনো জনসমর্থন নেই এমন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিটিং করে। তাদের সাথে প্রতিদিন আলোচনা করে। তাদের নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে হটানোর চিন্তা করে। দেশের মানুষ এখন এদের চিনে গেছে। এদের কোনো জনসমর্থন নেই। দেশের মানুষ এখন আর বিএনপিকে সমর্থন করে না। বিএনপির মত সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক আছে এদেরকেও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো দরকার। এরাও সন্ত্রাসী সংগঠন। এদের বিচারের জন্য আইন হওয়া প্রয়োজন। এসব সংগঠন বিএনপির সাথে মিলে দেশকে ধ্বংস করতে চায়। 

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচানোর সকল চেষ্টাই করেছেন জিয়া। তাদের রক্ষায় জিয়া ইনডেমনিটি আইন জারি করেছিলেন। জিয়া দেশের সংবিধানকে কলঙ্কিত করেছেন। 

তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা আজ আমাদের মাঝে নেই। তার আদর্শ আমাদের মাঝে রয়েছে। তিনি শুধু মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ১৩ বছর জেলে কাটিয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন দেশের মানুষ ভালো থাকুক। দেশের মানুষের কথা ভেবে তিনি কখনোই ঘাতকদের সাথে আপোষ করেননি। আজ তার আদর্শে এগিয়ে যাচ্ছে তার কন্যা শেখ হাসিনা। এখনো তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। তাকে ২১ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট তিনি ও তার বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন। ঘাতকরা চেয়েছিল বঙ্গবন্ধু পরিবারের একজন সদস্যও যাতে বেঁচে না থাকে। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে কিন্তু পরাজিত করতে পারেনি। তার আদর্শ নিয়ে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমরাও প্রয়োজনে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করব কিন্তু পরাজিত হব না, এটাই হোক আমাদের অঙ্গিকার। 

আহমদ হোসেন বলেন, যে গাড়িতে চালক নেই, সেই গাড়িতে কেউ উঠে না। বিএনপির কোনো চালক নেই। বিএনপির সঙ্গে মানুষও নেই। তারা এখন আরেকটি এক এগারোর স্বপ্ন দেখে। ষড়যন্ত্রকারীদের সেই স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন হতে দেব না। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৪ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। বাঙালির জন্য তিনি জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছেন। তিনি চিরদিন বাঙালির হৃদয়ে অম্লান হয়ে থাকবেন। 

আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, এদেশে ফ্রিডম পার্টি করা হয়েছিল, যার সভাপতি ছিল বঙ্গবন্ধুর খুনি। খুনিদের দলকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল জিয়া ও খালেদা জিয়ার বিএনপি। সেই খুনির দোসররা পালিয়ে যায়নি, এখনো সক্রিয় ও ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এদের বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। 

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু। 

আরও উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি কাজী শহীদুল্লাহ লিটন, দেবাশীষ বিশ্বাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী, একেএম আজিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল সায়েম, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান রানা প্রমুখ।

এইউএ/এসকেডি