সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা

তৃণমূলকে নির্বাচনমুখী ও উজ্জীবিত করতে নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা সাংগঠনিক সম্পাদকদের জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বৈঠকের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও সেপ্টেম্বরের থেকে সুবিধাজনক সময়ে বসবেন বলে মনে করছেন নেতারা। সভায় উপস্থিত নেতারা মনে করেন, জেলা-উপজেলার নেতাদের নিয়ে বিভাগওয়ারী বসবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

রোববার (১৪ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে সভায় দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা এমন আলোচনা করেছেন বলে সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, বৈঠকে তারা দলীয় সভাপতির কাছে প্রতিবেদন পেশ করেন। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক শাখাগুলোর বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করেন। পরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন দ্রুত সময়ে শেষ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। সম্মেলন হওয়ার শাখাগুলোর দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বলেছেন। এ ছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে দলকে গোছানোর জন্য বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন। 

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, আগামী ডিসেম্বরে দলের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেই সম্মেলনের আগে জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডের সম্মেলন শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে যেসব জায়গায় সম্মেলন হয়েছে সে সব জায়গায় দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন মানুষের কাছে তুলে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন : মানুষের কষ্ট আমরা উপলব্ধি করতে পারছি : প্রধানমন্ত্রী

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, তৃণমূলের কমিটি গঠনের সময় ত্যাগী–পুরোনো আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মূল্যায়ন করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন ‘চক চক করা এবং সো কলড স্মার্ট লোকদের দলে নেওয়া ও পদ দেওয়া যাবে না। কাউকে দলের পদ দেওয়ার আগে তার শিকড় কোথায়, কোন জায়গা থেকে এসেছে তা জানতে হবে। তিনি আমাদের বলেছেন, শিকড় উচ্ছেদ করা যাবে না। 

তৃণমূলের যেসব প্রবীণ ও ত্যাগী নেতা অভিমান করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরে আছেন তাদের মূল্যায়ন করে সক্রিয় করতে দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি নেতাদের বলেছেন, ‘ত্যাগী ও প্রবীণ নেতাদের রাগ, ক্ষোভ ভাঙাতে হবে। মনে রাখতে হবে তারাই আওয়ামী লীগ।’

এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে তিনি বলেছেন যে সব শাখাগুলো সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করেছে তাদের সঙ্গেই তিনি বসবেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি যাদের নেই তাদের সঙ্গে তিনি বসবেন না। তাই সম্মেলন করে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বলেছেন তিনি। 

নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদ্রোহীদের বিষয়ে অনড় অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দিয়েছেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান। তারা বলেন, তিনি আমাদের বলেছেন বিগত নির্বাচনগুলোতে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন তাদের বিষয়ে সম্পূর্ণ খোঁজ-খবর ও যাচাই-বাছাই করতে। জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পথ চলতে দলীয় সভাপতি নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান। 

জনপ্রতিনিধি ও তৃণমূল নেতাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য জরিপ নিয়মিত চলছে বলে বৈঠকে নেতাদের জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, এমপি ও নেতা কর্মীরা সমন্বয় করে কাজ করার জন্য বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। না হলে তারা ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। 

পদ বাণিজ্যের অভিযোগগুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। জানা গেছে, তিনি দায়িত্বপ্রাপ্তদের দ্রুত এ প্রতিবেদন তৈরি করে তার কাছে জমা দিতে বলেছেন। এ সময় শেখ হাসিনা নেতাদের বলেন, পদ বেচা যাবে না। 

সভায় নেতাদের সাংগঠনিক সফর পুরোদমে শুরু করার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এসব সফরে করা সভা-সমাবেশে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ত করতেও বলেছেন তিনি। প্রচার, প্রচারণা ও বক্তব্যে তিনটি বিষয়ে জোর দেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বিষয়গুলো হলো- গুজব ও অপপ্রচারের জবাব, উন্নয়নের প্রচার এবং ভূমি ও গৃহহীনদের তথ্য সংগ্রহ। পাশাপাশি দলের সদস্য সংগ্রহ কাযক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

এইউএ/এসএম