• বৃহস্পতিবারের কর্মসূচিতে জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো
• রাজনীতিতে চলছে নানা আলোচনা 
• বিএনপির নেতারা বলছেন এই মুহূর্তে দল অনেকটা সুসংগঠিত 
• ঢাকাসহ আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরাও অংশ নেন সমাবেশে 
• হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে এখনই যাওয়ার পরিকল্পনা নেই

বিগত কয়েক বছর ধরে মাঠের কর্মসূচিতে সুবিধাজনক অবস্থানে নেই বিএনপি। জনসমাগমের অভাবে জৌলুশ হারিয়েছে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সরকারবিরোধী কর্মসূচিগুলো।  

এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা নানান সময় টিপ্পনীও কাটেন বিএনপিকে নিয়ে। এ পরিস্থিতিতে বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলোতে লোক সমাগমের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। হঠাৎ করে দলটিকে কিছুটা চাঙা দেখা যাচ্ছে। সবশেষ গত বৃহস্পতিবারের কর্মসূচিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। 

বিএনপির সাংগঠনিকভাবে এ শক্ত হওয়া নিয়ে রাজনীতিতে চলছে নানা আলোচনা। আর বিএনপি মনে করছে জনসমাগমের এই ধারা বজায় রাখাটাই এখন চ্যালেঞ্জ।   

বিএনপির নেতারা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে বিএনপির সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। একইসঙ্গে দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়া দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন করে কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। যার ফলে এই মুহূর্তে দল অনেকটা সুসংগঠিত। যার ফলাফল দেখা দিচ্ছে মাঠের কর্মসূচিতে। 

এছাড়া দীর্ঘদিন পর বৃহস্পতিবারের সমাবেশে ঢাকা ও আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরাও অংশ নিয়েছেন। যার ফলে পুরো পল্টন, ফকিরেরপুল ও নাইটিঙ্গেল মোড় এলাকা ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। দলীয় কর্মী ছাড়াও অনেক সাধারণ মানুষও এই সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে বিএনপির তরফ থেকে।   

আরও পড়ুন : দেশের মানুষ বেহেশতে আছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা পোস্টকে বলেন, হঠাৎ করে বিএনপির সমাবেশে জনসমাগম বৃদ্ধি পেয়েছে এটা আমি মনে করি না। আমাদের ধারাবাহিক কর্মসূচি চলছে। ছাত্রদল, কৃষক দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মসূচি পালন করেছে। তাদের কর্মসূচি আলাদা হওয়ার কারণে জনসমাগম কিছুটা কম হয়েছে। আর বৃহস্পতিবারের কর্মসূচি ছিল মহানগর বিএনপির। সেখানে ছাত্রদল-যুবদল, কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন।  

তিনি আরও বলেন, সরকারের দুর্নীতির কারণে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এসবের প্রতিবাদে বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি কর্মসূচি পালন করছে। ফলে সেখানে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশ নিয়েছে। তাই সমাবেশ বেশি ভালো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের ব্যর্থতা যত বাড়বে সাধারণ মানুষ তত রাস্তায় নেমে আসবে। আর যদি সরকার পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে, মানুষ ভোট দেওয়ার নিশ্চয়তা পায়, তাহলে তারা স্বস্তি পাবে। তখন মানুষ আর রাস্তায় নামবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগের চাইতে দল ও অঙ্গ-সংগঠনগুলো অনেক সুসংগঠিত। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন চেষ্টা করে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কারণে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, আমাদের অঙ্গ-সংগঠনগুলোর ওপর সরকারের যে নির্যাতনের চিত্র, তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সমাবেশে। এখন মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিচ্ছে।    

আরও পড়ুন : আ.লীগ রাজপথে পরাজিত : বিএনপি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান / ফাইল ছবি

তিনি আরও বলেন, সরকারের যে দুর্নীতি, লুণ্ঠন, সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন, যদি এই অবস্থা চলতে থাকে তাহলে সামনে বিএনপির কর্মসূচি আরও বেগবান হবে। মানুষের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, একদিনের সমাবেশে লাখ লোকের সমাগম করিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে লাভ হবে না। আগামীতে ঠিক একইভাবে কর্মসূচিতে যাতে নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে সেটা ধরে রাখাই এখন আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ। একইসঙ্গে এখন দলের অভ্যন্তরে যে বিভেদ-দ্বন্দ্ব রয়েছে সেটাকে দূর করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। তাহলে সামনে সরকারবিরোধী বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারব এবং আন্দোলনে সফলতা আসবে।    

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর এত দীর্ঘ সময় জুলুম নিপীড়ন গুম করার মধ্যেও হতাশা তৈরি করতে পারেনি। বিএনপি এখন আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ। তারই প্রতিফলন ঘটেছে বৃহস্পতিবারের স্বল্প সময়ের ঘোষণায় বিশাল সমাবেশ। 

বিএনপি নেতারা বলছেন, জনসমাগম বাড়লেও আগামী দিনের কর্মসূচি ও তার ধরন নিয়ে সতর্ক বিএনপি। এই মুহূর্তে বড় ধরনের কোনো কর্মসূচিতে যাবে না দল। কারণ, আগামী নির্বাচনের এখনও প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় আছে। ফলে, এই মুহূর্তে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে দীর্ঘ সময় টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আর এ ধরনের কর্মসূচি দিলে সরকারের দমন-নিপীড়নও বাড়বে। তাই চলতি বছর জনবান্ধব সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, লিফলেট বিলি এই ধরনের কর্মসূচি দিয়ে বছর পার করবে। তারপর আগামী বছরের শুরু থেকে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবিতে অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি।    

আরও পড়ুন : সেপ্টেম্বর থেকে রাজপথ দখলে নেবে আ.লীগ : হাছান মাহমুদ

সামনের দিনে আন্দোলনের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমাদের আন্দোলন চলছে। আগামীতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আন্দোলন মানেই শুধু হরতাল, অবরোধ তা নয়। যখন যেটা প্রয়োজন সেটা আমরা করব।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, আন্দোলন ও কর্মসূচির ধরন নিয়ে বিএনপি এখন আগের চাইতে অনেক বেশি সতর্ক। এই মুহূর্তে হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মাঠে টিকে থাকতে পারবে না বিএনপি। কারণ প্রথমে শুরু হবে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা ও নির্যাতন। অন্যদিকে এসব কর্মসূচিকে ভিন্ন দিকে নিয়ে ২০১৪ সালের মতো বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠবে সরকারি দল। তাই এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ধীরে চলো নীতি।  

এএইচআর/এনএফ