আগামী ২২ আগস্ট থেকে দেশের প্রতিটি থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছড়িয়ে পড়তে বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।   

তিনি বলেছেন, প্রথমে উপজেলা, এরপর প্রতিটি ইউনিয়ন-গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ব। পরে জেলা ও মহানগর গুলোতে বিক্ষোভ সমাবেশ করব। জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে এ অনির্বাচিত অবৈধ সরকারকে পতনে বাধ্য করব।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং এবং সব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।
 
মির্জা ফখরুল তার বক্তব্যে বলেন, শেখ হাসিনা সরকারকে বলতে চাই, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। এই মুহূর্তে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নতুন নির্বাচন দিয়ে সংসদ গঠন করতে হবে। সরকার গঠন করতে হবে।

দলের নেতাকর্মীদের রাজপথ দখলের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমাদের রাজপথ দখল করতে হবে। রাজপথে দখলের মধ্য দিয়ে এ সরকারকে বিদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।

মির্জা ফখরুল বলেন, তরুণ সমাজই দেশকে স্বাধীন করেছে। আমরা যখন তরুণ ছিলাম, যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছি। আজ আবারও এ তরুণ সমাজকে জেগে উঠতে হবে। তরুণদের নতুন করে দেশ স্বাধীন করতে হবে। সেই স্বাধীনতা হবে আমাদের গণতন্ত্রের।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, সংগ্রাম শুরু হয়েছে, লড়াই শুরু হয়েছে। এ লড়াই আমাদের বেঁচে থাকার লড়াই। এ লড়াই বিএনপির নয়, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বাঁচা মরার লড়াই। আমাদের লড়াইয়ে শরিক হতে হবে, ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমরা ফ্যাসিস্ট, দানবীয়, মাফিয়া সরকারকে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব।

তিনি বলেন, আগামীকাল (শুক্রবার) উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ আছে। আগামী ২২ তারিখ থেকে আমরা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ব। প্রতিটি উপজেলায় শন্তিপূর্ণ সমাবেশের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এ সরকারকে পরাজিত করতে বাধ্য করব।

প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করারতেও সমাবেশ থেকে আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

এদিকে, সমাবেশ চলাকালে পল্টন পলওয়েল ও চায়না টাউন মার্কেট বরাবর আকাশে কয়েকটি ড্রোন উড়তে দেখা যায়। যদিও কে বা কারা এ ড্রোন ওড়ায়, তা জানা যায়নি।

ড্রোন ওড়ানোর প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা অনেকে ড্রোনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন আগে একটি খবর আমার চোখে পড়েছে, সরকার বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরান থেকে ২১টি ড্রোন আমদানি করেছে। তারা বলেছেন, এ ড্রোন নিয়েছে ভাসানচরে রাখা রোহিঙ্গাদের মনিটরিং করবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে গিয়ে ছিলেন, তিনি দেখেছেন ড্রোন দিয়ে কিভাবে কী করে। আসলে তারা এগুলো নিয়ে এসেছে এ দেশের মানুষকে মনিটরিং করার জন্য, যারা গণতন্ত্র চায় তাদের মনিটরিং করার জন্য। 

তিনি বলেন, ড্রোনের নাম শুনলেই আমরা ভয় পাই। ভয় পাই কারণ আমরা দেখেছি, ড্রোন দিয়ে কীভাবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে বিভিন্ন নেতাদের হত্যা করা হয়। আমরা দেখেছি এ ড্রোন দিয়ে কীভাবে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রামকারীদের হত্যা করা হয়।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রমুখ।

এএইচআর/আরএইচ