প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের মহাসচিব হারুন আল রশিদ খান বলেছেন, গত নভেম্বরে যখন তেলের দাম বাড়ানো হয় তার ২০ দিনের মধ্যে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করে। গত আট বছরে ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধের পরও বিপিসি নিট মুনাফা করে ৪৮ হাজার ১২২ কোটি টাকা। বিপিসি প্রতিদিন লোকসানের যে হিসাব দেয় তাতেও রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি এবং লুটপাট।

বুধবার (২০ জুলাই) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন তিনি।

হারুন আল রশিদ খান বলেন, লুটপাটের কথা শুধু আমরা বলছি না, আইএমএফও সরকারকে বারবার চাপ দিচ্ছে বিদেশি প্রতিষ্ঠান দিয়ে বিপিসির অডিট করানোর জন্য। বিশ্ববাজারে তেলের দাম যখন কমে তখন মন্ত্রীরা তেলের দাম কমানোর কি ইঙ্গিত দেন? বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লেই তারা পাগল হয়ে যান তেলের দাম বাড়ানোর জন্য, এটা ঠিক নয়। গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেলসহ কোনো ধরনের জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করা চলবে না।

তিনি আরও বলেন, গত এক যুগে সরকার শিল্প, বাণিজ্য ও আবাসিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছে ১৮ বার। মূল্য বৃদ্ধির যুক্তি ছিল উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, আমদানি শুল্ক-কর কার্যকর, কয়লা ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি। আমাদের বিকল্প প্রস্তাব, গত এক দশকে কুইক রেন্টালের নামে ৭০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এই লুটপাট বন্ধ করুন। কয়লায় ভ্যাট প্রত্যাহার করুন, বেসরকারি খাতের বদলে সরকারিভাবে তেল আমদানি করুন, দেশীয় উৎস থেকে প্রতিদিন ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়, দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস সংগ্রহ করুন।

তিনি বলেন, আমরা মাঝে মাঝে শুনি পেট্রোবাংলা বলে, আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজি গ্যাসের মূল্য বেড়ে গেছে তাই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করতে হবে, মূল্য বৃদ্ধি ছাড়া বিকল্প নেই। কিন্তু এই কথা সঠিক নয়। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিদিন ৩ হাজার ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে কোম্পানিগুলো, তার মধ্যে ২ হাজার ৩০০ ঘনফুট গ্যাস দেশীয় উৎস থেকে সরবরাহ করা হয়। বাকি ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলপিজি গ্যাস আমদানি করা হয়। বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রত্যেকটি মুনাফায় রয়েছে এবং গ্যাস খাতের সব সংস্থার কাছে ১২ হাজার কোটি টাকা জমা আছে। তাই আমরা মনে করি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধ করা উচিত।

বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই উল্লেখ করে উপস্থিত বক্তারা বলেন, মানুষের আয় যে হারে বেড়েছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য। কারণ একটাই, তা হচ্ছে বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নিয়ন্ত্রণ যে নেই তা আরও সুস্পষ্টভাবে বোঝা গেল চাল, ডাল, তেল, লবণ, পেঁয়াজ নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড দেখে। ২০২১ সালে ৪৯ দিনে চালের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট থেকে চাল সিন্ডিকেট লোপাট করেছে প্রায় ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে পেঁয়াজের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে জনগণের কাছ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। 

আইবি/এসকেডি