বিভিন্ন বিষয়ে পাঁচটি প্রশ্ন তুলে তার একটি উত্তর দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেছেন, যদি প্রশ্ন করি বাংলার সবচেয়ে হিংসুক মহিলা কে? বাংলার শ্রেষ্ঠ মিথ্যাবাদী কে? বাংলার শ্রেষ্ঠ প্রতারক কে? বাংলাদেশকে পর পর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে কে? বাংলাদেশের কোন সরকারপ্রধান এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে সাজা ভোগ করছেন? এই পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর একটি। তা হলো খালেদা জিয়া।

রোববার একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ সব কথা বলেন।

শাজাহান খান বলেন, বিএনপির নেতারা এখানে আছেন। দয়া করে আপনারা পদ্মা সেতু পার হবেন না। আপনাদের নেত্রীর নির্দেশ অমান্য করবেন না। আপনাদের জন্য আমরা নদীর পাড়ে নৌকা রেখে দেব। সেই নৌকা দিয়ে আপনাদের পার করব। এই নৌকা বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনেছে। আজ বাংলাদেশের উন্নয়ন সাধন করেছে নৌকা। এ নৌকায় আপনাদের আসতে হবে।

তিনি বলেন, বিএনপি একটি ষড়যন্ত্রকারী দল। তাদের ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। বঙ্গবন্ধুর মতো তারা আবার শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চায়। তারা স্লোগান দিয়েছে পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। আমি প্রস্তাব করবো, এ স্লোগান যারা দিয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক। বিচার এবং শাস্তির বিধান করা হোক।

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, কিছু রাজনৈতিক নেতা আছেন যারা পথহারা পাখির মতো নিজেরা আবোল-তাবোল বলছেন। তারা শেখ হাসিনাকে উৎখাত করে খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় বসিয়ে জামায়াত-শিবির স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চান। এ সব পথহারা রাজনীতিকদের একজন মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি প্রথমে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ করেছেন। স্বাধীনতার পর জাসদ ছাত্রলীগ করেছেন। পরবর্তী সময়ে জাসদ করেছেন, বাসদ করেছেন, বাসদ মাহমুদ করেছেন। জাতীয় মুক্তি পার্টি গঠন করেছেন। আওয়ামী লীগ করেছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বগুড়া থেকে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে হেরে গেছেন। গণতান্ত্রিক জোট করেছেন। এখন নাগরিক ঐক্য করেছেন। তার রাজনৈতিক আদর্শ কী? তিনি শেখ হাসিনাকে উৎখাত করতে চান।

তিনি বলেন, আ স ম রব বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ করেছেন। জাসদ করেছেন, জেএসডি করছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন। শেখ হাসিনাকে উৎখাতের জন্য বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। ড. কামাল হোসেন ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিপরিষদে ছিলেন। পরে গণফোরাম করে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন।

শাজাহান খান বলেন, কাদের সিদ্দিকী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে পিতা হিসেবে মানেন। স্বাধীনতার পর তিনি লোক দেখানোর জন্য বঙ্গবন্ধুর বাড়ি পর্যন্ত ঝাড়ু দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে টাঙ্গাইলের গভর্নর নিয়োগ করেছিলেন। তাকে স্বাগত জানানোর জন্য টঙ্গী থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত ১০১টি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছিলো। তার মধ্যে একটি ছিলো বঙ্গবন্ধুর ছবিওয়ালা আর সব তার নিজের ছবি। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাকে মন্ত্রী না করায় তিনি নাখোশ হলেন। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করলেন। পরবর্তীতে উপ নির্বাচনে তিনি আবার দাঁড়ালেন। তিনি হেরে গেলেন।

পদ্মা সেতু শুভ উদ্বোধনের পর তিনি কাদের সিদ্দিকী কী মন্তব্য করেছেন? বলেছেন, পদ্মা সেতু হয়েছে এ জন্য অহংকার করার কিছু নেই। দুঃখিত হবারও কিছু নেই। যারা এর সমালোচনা করেছেন, তারাও ঠিক করেছেন। যারা আশান্বিত হয়েছেন- তারাও ঠিক করেছেন। এই কথা বলার পর আরেকটি কথা বলেছেন। পদ্মা সেতু উদ্বোধনে এত বড় আয়োজন না করলেও চলতো। পদ্মা সেতু হওয়ায় তিনি কি খুশি হয়েছেন? না নাখোশ হয়েছেন? খালেদা জিয়ার মতো দুঃখ পেয়েছেন? একেই বলে পাগলে কী না বলে, ছাগলে কী না খায়।

শাজাহান খান বলেন, বিএনপি মহাসচিব বলেছেন এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে মানুষ না খেয়ে মারা যাবে- আমি যদি তাকে প্রশ্ন করি যখন আপনারা ক্ষমতায় ছিলেন তখন উত্তরবঙ্গ ছিলো মঙ্গার দেশ। এখন আর মঙ্গা নেই। অভাবের তাড়নায় মানুষ না খেয়ে থাকত। তার মুখ থেকে আজকে এই কথা শুনতে হচ্ছে। তিনি উন্মাদের মতো কথা বলেছেন। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন কী করেছিলো, না করেছিল— সেই ইতিহাস তার জানা আছে।

এইউএ/আরএইচ