হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল আছে। তার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খালেদা জিয়ার হার্টে রিং বসানোর পর ২৪ ঘণ্টা এখনো পার হয়নি। এসব ক্ষেত্রে ৭২ ঘণ্টার আগ পর্যন্ত রোগীর প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায় না। তাই ম্যাডামের বর্তমান যে শারীরিক অবস্থা, একে ‘আপাতত স্থিতিশীল’ বলা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন চিকিৎসক নেতা বলেন, ম্যাডামের মতো ভিভিআইপি মানুষদের চিকিৎসা করা খুব সহজ কাজ নয়। তাদের মতো মানুষদের অনেকে হার্টে রিং পরাতে অনুমতি দেন না। সেখানে ম্যাডাম তার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছেন।

তিনি আরও বলেন, ম্যাডামের মেইন আর্টারিতে ৯৯ শতাংশ ব্লক পাওয়া যায়। সেখানে রিং বসানো হয়েছে। বাকি ব্লকগুলো ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। কারণ ওনার শরীরে অন্য রোগ রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে অপারেশন করতে গেলে কখন কী হয়ে যায় বলা যায় না। যেমন কাল (শনিবার) রিং বসানোর অপারেশনের সময় ওনার ডায়াবেটিস অনেক হাই ছিল। তবে ম্যাডামের বর্তমান শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল, এটা বলা যায়।

রোববার (১২ জুন) সকাল সোয়া ৯টার দিকে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যাডামের এনজিওগ্রাম করা হয়েছে, হার্টে রিং বসানো হয়েছে। উনি এখনো সিসিইউতে আছেন। তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা এখন তাকে অবজারভেশনে রেখেছেন। এটি শেষ হলে পরবর্তী করণীয় কী তা মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। ম্যাডামের অবস্থা সম্পর্কে এর বেশি কিছু বলার নেই।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার নিয়মিত খোঁজ রাখছেন পরিবারের সদস্যারা। ছেলে তারেক রহমান লন্ডন থেকে সরাসরি চিকিৎসকদের কাছ থেকে মায়ের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তার স্ত্রী ডা. জুবায়দা রহমানও চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। অন্যদিকে ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি বিএনপির চিকিৎসক ও খালেদা জিয়ার ভাই-বোনদের কাছ থেকে শাশুড়ির শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিচ্ছেন। তবে তিনি শাশুড়িকে দেখতে দেশে আসবেন কি না, সেটি এখনো ঠিক হয়নি।

শনিবার (১১ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, তার মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, শ্বাসকষ্টও আছে। হার্ট অ্যাটাকের পর রিং বসানো হয়েছে। চিকিৎসকরা আশা করছেন, আপাতত হার্টের সমস্যা থেকে ম্যাডাম রিলিফ পেয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

৭৬ বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পান। এরপর থেকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় আছেন তিনি। এরমধ্যে দুই দফায় খালেদা জিয়া কয়েক মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার চিকিৎসকরা বলে আসছেন, তিনি লিভার সিরোসিস, ডায়াবেটিস, ফুসফুস জটিলতা, চোখের সমস্যাসহ নানা রোগে আক্রান্ত। এজন্য বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বারবার তাকে বিদেশে নেওয়ার দাবি জানানো হলেও সরকারের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে তা সম্ভব নয়।

এএইচআর/এসএসএইচ/জেএস