‘ছাত্রদল সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার দায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২৪ ও ২৬ মে ছাত্রদলের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। এ বিষয়টি সবাই জানে বলে জানিয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেছেন, ‘অথচ এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো হামলার শিকার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৪০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এর সম্পূর্ণ দায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। নিঃসন্দেহে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশেই ছাত্রলীগ এই তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে।’
মঙ্গলবার (৩১ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ডাকসু’র সাবেক নেতাদের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
মান্না বলেন, ‘বিগত ১৩ বছর ধরে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার চেষ্টা করে যাচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার। নিজেদের ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রাখতে তারা দেশকে মেধাহীন করার সব ব্যবস্থা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এসব ঘটনায় ক্ষমতাসীন দল এবং এর সহযোগী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাম প্রমাণসহ উঠে আসার পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। উপরন্তু প্রমাণিত সত্যকে অস্বীকার করা হয়েছে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকারের আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত হয়েছে। জাতির মনন গঠনের কারিগর শিক্ষকদের দলদাসে পরিণত করা হয়েছে। যেসব সম্মানিত শিক্ষক নিরপেক্ষভাবে সত্যিকারের শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি এবং শিক্ষাদানের চেষ্টা করছেন তাদের বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে সরকারি দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠনকে একটি সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত করেছে। ১৩ বছর ধরে ভিন্ন রাজনৈতিক মতের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে অবস্থান তো দূরের কথা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাঠ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এমনকি পরীক্ষা পর্যন্ত দেওয়ার সুযোগ পায় না। সরকারি দলের সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন চর দখলের মতো করে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে রেখেছে। ভিন্ন মত পোষণ এমনকি কেবলমাত্র সরকারি দল বা তাদের সহযোগী সংগঠনের কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ায় নির্মম শারীরিক নির্যাতন, হল থেকে বের করে দেওয়া এমনকি পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা ঘটেছে বারংবার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের দলদাস নির্লজ্জ প্রশাসন বরাবরই নির্লিপ্ত থেকেছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ১৩ বছর ধরে বিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠনের হামলার শিকার হয়েছে।’
ডাকসুর এই সাবেক ভিপি বলেন, ‘সর্বশেষ গত ২৪ এবং ২৬ মে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে সরকারি দলের সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় নিষ্ঠুরভাবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে। এমনকি তারা কাপুরুষোচিতভাবে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর হামলা চালিয়েছে। নারী শিক্ষার্থীদের ওপর এমন নির্মম হামলার ঘটনা পাকিস্তান আমলেও কখনো ঘটেনি। হামলার শিকার এসব বিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে রয়েছেন। নারী শিক্ষার্থীদের হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ হামলায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ছবি এবং ভিডিওসহ উঠে এসেছে। এ হামলায় জড়িতদের নাম-পরিচয়, হামলা এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ছবি, ভিডিও সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলেও দলদাস বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমনকি ঘটনার বিষয়ে জানেন না বলেও মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অযোগ্য উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ ঘটনায় হামলার শিকার ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলকে দায়ী করেছেন, এমনকি মামলাও করেছেন।’
মান্না বলেন, ‘অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে এই হামলার ঘটনার সত্যতা নেই বলে মন্তব্য করেছিলেন। পরে তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের মতো ছাত্রদলকে দায়ী করেন এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন। যেখানে সারা দেশের মানুষ এ ঘটনার বিস্তারিত জানে, সংবাদ মাধ্যমে ছবি, ভিডিওসহ হামলাকারীদের নাম পরিচয় উঠে এসেছে, সেখানে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনার বিস্তারিত জানেন না। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা লাঠি, রড, হকিস্টিক, রামদা নিয়ে ছাত্রদলের কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে তারা গুলি ছোড়ে যা ছবি-ভিডিওসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।’
তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দেশের সব শিক্ষাঙ্গন আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষাঙ্গনকে বাঁচানো শুধুমাত্র ছাত্র সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নয়। এই দায়িত্ব সবার। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষাঙ্গনকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে আমরা ডাকসুর সাবেক নেতারা দেশের সব ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, পেশাজীবী, ডাকসুসহ দেশের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান ছাত্র সংসদ নেতৃবৃন্দ, সাবেক-বর্তমান ছাত্র নেতৃবৃন্দসহ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— ডাকসুর সাবেক ভিপি আ স ম আব্দুর রব, আমানউল্লাহ আমান, নুরুল হক নূর, সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন এবং সাবেক এজিএস নাজিমউদ্দিন আলম।
এমএইচএন/এসএসএইচ