যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেছেন, আমি প্রকাশ্যে কথা দিচ্ছি, আমাদের কাছ থেকে পদ-পদবি পাওয়ার জন্য কোনো উপঢৌকন দিতে হবে না। কোনো আর্থিক সহায়তা লাগবে না।

রোববার (২৯ মে) চট্টগ্রামের হাটহাজারী মডেল সরকারি পার্বতীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার আওয়ামী যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন।

যুবলীগের চেয়ারম্যান বলেন, নিজের জন্য না, সমাজের জন্য রাজনীতি করি। আত্মকেন্দ্রিক রাজনীতিকে ভুলে গিয়ে সময় এসেছে সমাজকে কিছু দেওয়ার। আমাদের উচিত দুর্দিনের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা। দলের মধ্যে ভুঁইফোড়দের রাজত্ব বন্ধ করতে হবে। আশা করি ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করবেন। যারা দলের খারাপ সময়ে ত্যাগ স্বীকার করেছে, জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন তাদের মূল্যায়ন করবেন।

তিনি বলেন, পদের জন্য আমাদের কোনো আর্থিক সহায়তা লাগবে না। আমাদের প্রত্যাশা এ পবিত্র পদ-পদবি আপনারা কোন টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি বা অবৈধ উপায়ে উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন না। নিজের কথা ভাবার আগে দলের কথা ভাবতে হবে। ভুলে যাবেন না ব্যক্তির থেকে দল বড়, দলের থেকে দেশ বড়। ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে রাজনীতি করতে হবে।

দুর্নীতি প্রসঙ্গে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ আপনারা দয়া করে দুর্নীতিগ্রস্ত হবেন না। দুর্নীতি আমাদের এই প্রাণের বাংলাদেশকে ভিতর থেকে খেয়ে ফেলেছে। বর্তমানে দুর্নীতি থেকে সমাজকে মুক্ত করা হয়তো কঠিন। কিন্তু দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা কিন্তু সম্ভব এবং এটা আমাদের সবাইকে মিলে করতে হবে। যুবলীগকেই করতে হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আইন করে দুর্নীতি রোধ করা যায় না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ব্যক্তিগত আর্থিক স্বার্থ পরিহার করতে হবে। শুধু আইন করে কোন রাজনৈতিক সরকারের পক্ষে দুর্নীতি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা কঠিন কাজ।

যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, যুবলীগের স্বাস্থ্য সম্পাদক হবেন অথচ নেতাকর্মীদের স্বাস্থ্যের খবর নেবেন না। মহিলা সম্পাদিকা হবেন আর নির্যাতিত, নিপীড়িত মহিলাদের খোঁজখবর রাখবেন না। আইন সম্পাদক হবেন আর নেতাকর্মীদের আইনি সাহায্য দেবেন না। এই রকম নেতা আমাদের সংগঠনে দরকার নেই।

তিনি বলেন, সাংগঠনিক পদ শুধু সাংগঠনিক কাজেই ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখবেন সাংগঠনিক পদ নিজের ব্যক্তিগত পকেট ভারী করার জন্য না। আর সাংগঠনিক পদ বাজার থেকে কিনে আনা কোনো পণ্য না।শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, অন্যান্য সরকারের সময় এদেশের মেহনতি মানুষের অধিকার লুণ্ঠন করা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন কিভাবে কৃষকরা সারের জন্য গুলি খেয়েছে, বিদ্যুতের জন্য গুলি খেয়েছে। সুতরাং গণমানুষের অধিকার রক্ষার্থে আগামী নির্বাচনে যে কোন মূল্য দিয়ে প্রস্তুত থাকবেন। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ক্ষমতায় আনতে হবে।

ভবিষ্যতে যুবলীগ বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যুবলীগের দুটি দায়িত্ব। প্রথমত যুবলীগকে যেকোনো মূল্যে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে সব ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করতে হবে। দ্বিতীয়ত রক্ষা করতে হবে বঙ্গবন্ধু কন্যার সব অর্জনসমূহকে। বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশকে সম্মান এনে দিয়েছেন, সফলতা এনে দিয়েছেন। এই সম্মান আমাদের ধরে রাখতে হবে। আমাদের নির্ণয় করতে হবে কিভাবে আমরা এই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। সেজন্য আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। 

সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। 

প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল। ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম আল মামুনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান। 

কেএম/আইএসএইচ