আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ শুরু করবে বিএনপি। মঙ্গলবার (২৪ মে) থেকে এই সংলাপ শুরু হবে।

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে আজ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে দলের স্থায়ী কমিটির সভায়।

তবে আজ কোন দলের সঙ্গে প্রথম সংলাপ শুরু হবে তা জানাননি মির্জা ফখরুল।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলব। তাদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্ত যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের রূপরেখা, সেই রূপরেখা তৈরি করা হবে। 

আলোচনা কি ২০ দলীয় জোটের দলগুলোর সঙ্গে হবে নাকি অন্যান্য দলের সঙ্গেও হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সবার সঙ্গেই হবে, অল দ্যা পলিটিক্যাল পার্টিস-এর সঙ্গে।

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কথা তো বলতে হবে। অবশ্যই, তাদের সঙ্গে কথা না বললে কেমন করে হবে। সবার সঙ্গেই তো কথা বলতে হবে।

২০ দলীয় জোট থাকবে কি না জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০ দলীয় জোট তো আমরা এখন পর্যন্ত বিলুপ্ত করিনি। এই জোটের কী হবে সেটা এই আলোচনার মধ্য দিয়ে ফাইনালাইজ করব।

সংলাপের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এই আলোচনার মূল্য উদ্দেশ্য হচ্ছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং এই ফ্যাসিবাদী সরকার যারা মানুষের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে, মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং আজকে অর্থনীতি, দেশের যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেগুলোকে ধ্বংস করে ফেলেছে সেই সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা-এটাই হচ্ছে মূল্য লক্ষ্যে। এজন্য আন্দোলন করতে হবে। এই আন্দোলন তৈরি করতে ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে এই আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছি। 

তিনি আর বলেন, আমাদের মূল যে দাবিগুলো আছে, প্রথম. খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি, দুই. এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, তারা পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, তিন. সংসদ বাতিল করতে হবে এবং তারপরে পুনগঠিত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংসদ গঠন হবে, সরকার গঠন হবে। এগুলো হচ্ছে আমাদের পক্ষ থেকে দাবিগুলো থাকবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এখন অন্যান্যগুলোর সঙ্গে এই আলোচনা করব এবং এই আলোচনার মধ্য দিয়ে তাদের অন্যান্য দাবি নিয়ে একক দাবিনামা তৈরি করা হবে। একক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করব।

এই একক ঐক্যের জোটের কী নামকরণ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা একে জোট বলছি না, অন্যকোনো কিছুও বলছি না। আলোচনা করার মধ্য দিয়ে ফরমেট, ফ্রম নির্ধারিত হবে।

২৬ মে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২৬ মে ঢাকা ছাড়া সব মহানগর ও জেলা সদরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো যৌথভাবে বিভোক্ষ সমাবেশ করবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে সিনিয়র সিটিজেনদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসম্মানজনক বক্তব্যের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল।

বন্যায় দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান

মির্জা ফখরুল বলেন, স্থায়ী কমিটির সভায় দুর্গত এলাকায় সরকারি ত্রাণ তৎপরতার একেবারেই অপ্রতুল হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। একদিকে যখন বন্যাদুর্গতরা ত্রাণের জন্য আহাজারি করছে সেই সময়ে জনৈক মন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণের সময় সাহায্য প্রার্থী হাজার মানুষের ওপর পুলিশি লাঠিচার্জের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বন্যার্তদের ওপর এই আক্রমণ আওয়ামী লীগের স্বভাবজাত অমানবিক ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রতিফলন।

সিলেটের বন্যা উপদ্রুত এলাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং ত্রাণ কাজ পরিচালনার জন্য জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, বৃহত্তর সিলেট জেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সব নেতা-কর্মীদের বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই।

সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।

এএইচআর/জেডএস