সরকার পতনের জন্য চলমান আন্দোলন যথেষ্ট না : গয়েশ্বর
সরকার পতনের জন্য চলমান আন্দোলন যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
শুক্রবার (১৩ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন-সংকটের একমাত্র সমাধান শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে এলডিপি।
বিজ্ঞাপন
বিএনপির আন্দোলন কবে আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের এ বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর বলেন, ‘আমরা তো আন্দোলনেই আছি। আজকে কি করছি, গতকালও তো করেছি। প্রতিদিন তো রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রোগ্রাম করছি, এগুলো তো আন্দোলনের অংশ। এখন প্রশ্ন রইল, আন্দোলনের গতি নিয়ে? তা হলো এ সরকার পতনের জন্য যথেষ্ট না। আন্দোলনের গতি বাড়াতে হবে। শক্তিটা বাড়তে হবে। পরবর্তী আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। সুতরাং আন্দোলনের কৌশল এটাই- কখনো আলোচনা হবে, কখনো কথা হবে, আবার কখনো রাজনৈতিক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মানুষকে একত্রিত করা হবে। এটাই তো ছিল এক সময়।’
তিনি বলেন, ‘আজকে সাংস্কৃতিক কর্মীরা গান গেয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারছে? ঘরে-ঘরে লিফলেট বিলি করে উদ্বুদ্ধ করতে পারছে? পারছে না। সেই কারণে ফ্যাসিবাদকে হটাতে শুদ্ধ ভাষায় কথা বললে হবে না। ফ্যাসিবাদের জবাব তাদেরকে যথাযথভাবে দিতে হবে। আঘাত আসলে পাল্টা আঘাত করতে হবে।’
বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করে তার প্রমাণ নেই বলে দাবি করে গয়েশ্বর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় যখন গুলশানে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিল, ওই খবর তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কানে যাওয়ামাত্র তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, তাকে পৌঁছে দাও। এই খবর কেউ যে না জানে। তারপরও দু-একটি পত্রিকা জেনে গেছে। ১/১১ সময় বেগম খালেদা জিয়া তখনো গ্রেফতার হন নাই, যখন শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলেন। তাকে আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশ কর্তৃক অপমানিত হতে হয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়ার এর তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। এই রকম উদাহরণ অনেক আছে। বেগম খালেদা জিয়া শপথ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করেছেন। তারেক রহমান রাজনীতিতে অভিষিক্ত হলেন, টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে শেখ মুজিবের মাজারে গিয়ে ফুল দিয়ে দোয়া করেছেন। আর তারা আছে জিয়াউর রহমানের কবর তুলে দেওয়া নিয়ে। সুতরাং আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির রাজনীতির অনেক তফাৎ আছে।’
নির্বাচনকালীন সরকারের নাম নিয়ে এতো ব্যস্ততা কেন প্রশ্ন রেখের বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নাম ঠিক করা ১ ঘণ্টার ব্যাপার। আমরা যখন লক্ষ্য অর্জন করতে পারব তখন কি নাম রাখতে পারবো না? যারা যারা বলেন পারবে কিনা? না পারার তো কিছু নেই। ৯ বছর ক্ষমতায় ছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, তারপর শাহাবদ্দিন সাহেব এলেন, কিছু অচেনা মানুষ বঙ্গভবনে এসে নির্বাচনের দায়িত্ব নিল। তখন তেমন লোকবলও ছিল না, তারা কি নির্বাচন করতে পারে নাই? আমাদের এই আশঙ্কা কেন? শেখ হাসিনা থাকলে পুলিশকে নিয়ে কি করব? আরে পুলিশ, এটা-সেটা খুঁজে পাওয়া যাবে কি? খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেদিন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় নেই, সেদিনই মানুষের হাতে শক্তি আসবে। সেদিন পুলিশ হাসিনার পক্ষে ব্যালট বাক্স ছিনতাই তো দূরের কথা, সিল মারা তো দূরের কথা, তখন জনগণকে স্যালুট দিয়ে বলবে, আমরা কিন্তু আপনাদেরকে যথেষ্ট সহযোগিতা করছি। এটাই হলো বাস্তব চিত্র।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটা জায়গায় স্থির হয়েছি যে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাব না। তার মানে কি ছেড়ে দেব? না ছেড়ে দেব না। নির্বাচনে যাব না, যেন তেন নির্বাচনও করতে দেব না। যেন তেন নির্বাচন করার শক্তিও শেখ হাসিনার হাতে নেই। এটাও আপনাকে বোঝতে হবে। বিদেশি শক্তিও আর পাশে থাকবে না। তাদেরকেও হিসাব-নিকাশ করে চলতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখতে গেলে, এক ব্যক্তি বা একটি দলের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখলে দেশে সঙ্গে বন্ধুত্ব থাকে না, এই উপলব্ধি তাদের আশা করি হবে। তাদের এ উপলব্ধি হয়েছে বলেও বিশ্বাস করি। সে কারণে জনতার শক্তির কাছে কোনো শক্তি টিকে না। কোনো কালেই টিকে নাই।’
গয়েশ্বর বলেন, ‘গণতান্ত্রিক উপায়ে আমরা শেখ হাসিনাকে বিদায় দিতে পারব, তাকে লাল সালাম দিতে পারব।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন এলডিপির একাংশের সভাপতি আবদুল করিম আব্বাসী, মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বিএনপির নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, এনপিপির সভাপতি ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রমুখ।
এএইচআর/ওএফ