প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের কোনো সংসদ সদস্যকে জেতানোর দায়িত্ব নেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তিনি এমনটাই জানিয়েছেন বলে সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন। 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হয় সভা। দীর্ঘ বৈঠক শেষে রাত ১১টা ৫ মিনিটের দিকে একের পর নেতা বেরিয়ে আসেন সভাস্থল থেকে। 

রুদ্ধদ্বার সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সারাদেশে ইভিএমে হবে। ফলে বিকল্প উপায়ে ভোটে জিতে যাওয়ার চিন্তা কেউ করার সুযোগ নেই। 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে দলটির একাধিক নেতা এসব কথা জানান। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত নির্বাচন নিয়ে এখনো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাকে জবাব দিতে হয়। আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও কঠিন হবে। যোগ্য প্রার্থী বেছে নিতে সারাদেশে জরিপ চলছে। 

দলের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি বৈঠকে পরিষ্কার হতে চাইলে জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবকিছুই কঠিন থেকে কঠিনতর হবে এবার। বিএনপির নেতা তারেক রহমান এবার রমজানে ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গেও ভার্চুয়ালি সভা করেছে। পশ্চিমাদেশে অন্তত ৫০টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে। তারা কিন্তু চুপ করে বসে নেই। 

শেখ হাসিনা বলেন, দল গোছাতে হবে। সর্বস্তরে সম্মেলন করে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। সম্মেলন যথাসময়েই হবে।

সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য ১৪ দলীয় জোটে থাকা ছোটদলগুলো যারা অনেকটাই অস্তিত্বহীন তাদের আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে শেখ হাসিনা বলেন জোট থাকবে। ওই নেতা সহযোগী সংগঠনর ব্যাপারটি আলোচনায় টেনে আনলেও দলীয় সভাপতি এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেননি। 

বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ নিজ বিভাগের প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে গেলে কিছুটা হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল তার সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময়ে প্রয়োজনের বাইরে গিয়ে বক্তব্য দেন আগে যখন বিমানে সফর করতাম তখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাতে অন্ধকার দেখাত। এখন বিমান ভ্রমণে যখন যাই নীচে সবই আলোয় পরিপূর্ণ দেখতে পাই। 

ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কী সাংগঠনিক প্রতিবেদনের অংশ? এরপর অপর সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, আমার বিভাগে দায়িত্বে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ অনেক নেতা। আমরা ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি, আপনার বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী অনেকটা রসাত্মক ভঙ্গিতে তার কাছেও জানতে চান এটাও কি সাংগঠনিক প্রতিবেদন?

আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় সংক্ষিপ্ত করলে দলীয় সভাপতি বলেন, তোমার বিভাগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে শুরু করে কক্সবাজার পর্যন্ত। তোমার সময় এত কম কেন? অবশ্য স্বপন এরপর বক্তব্য খানিকটা দীর্ঘায়িত করেন। 

আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমার প্রতিবেদন তো রমেশ চন্দ্র সেন দাদা বলেই দিয়েছে। তুমি বস।

জানা গেছে, বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের রিপোর্ট পেশ করেন। সেখানে তারা তৃণমূলের সম্মেলন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতাদের বিষয়টি উপস্থাপন করেন। 

এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্ধান্ত দেন, যে সব সাংগঠনিক শাখায় এখনো সম্মেলনে হয়নি, সেই শাখার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যারা বিরোধিতা করেছেন তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য। তবে তার আগে তাদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, যদি কোনো সাংগঠনিক শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার অভিযোগ উঠে, তাদের সম্মেলনে কার্যক্রম থেকে সরিয়ে দিতে নির্দেশনা দেন। এ ক্ষেত্রে প্রস্তুতি কমিটি করে করে সম্মেলনে শেষ করার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। 

সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য সচিবালয়ের ভেতরে শ্রম মন্ত্রণালয়ে শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক একটি সংগঠনের অফিস রয়েছে জানিয়ে বলেন, এটা ঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কেন সচিবালয়ে থাকবে? শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই শ্রমিক নেতা বলেন, আমি কিছুই জানি না। আমি তো দাওয়াতই পাই না।

সূত্রে জানা গেছে, দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে তৃণমূলের আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সমন্বয়ের কথা বলেন। 

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে হচ্ছে, কিন্তু সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন হচ্ছে না, এতে আমাদের তৃণমূলের সব সংগঠনকে নিয়ে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে। 

এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিভাগওয়ারি আটটি কমিটি রয়েছে। তৃণমূল আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনের বিষয়েও তারা দেখভাল করবেন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, দলীয় সভাপতি তার বক্তব্যে নির্ধারিত সময়ে জাতীয় সম্মেলনের কথা বললেও, সম্মেলনের তারিখ কিংবা সম্মেলনকে ঘিরে উপকমিটির বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা দেননি। এতে করে কেন্দ্রীয় নেতারা অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

এইউএ/ওএফ