দীর্ঘদিন ধরে চোখ-হাঁটুর সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন খালেদা জিয়া

করোনাভাইরাসের টিকা নেবেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে, তার শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় তিনি টিকা নেওয়ার জন্য উপযোগী কি-না বা টিকা নেওয়ার পর কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে তা নিয়েও আছে সংশয়। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড সভা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

চিকিৎসক ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারছেন না। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চোখ-হাঁটুর সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। এসব রোগের মধ্যে টিকা নেওয়ার জন্য তার শরীর কতটুকু উপযুক্ত সেটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।

আবার তার বয়স এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বিবেচনায় টিকা নেওয়াও জরুরি। ফলে, সবকিছু সামনে রেখে তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে, আপাতত তার টিকা নেওয়ার বিষয়ে পরামর্শের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ইতিবাচক মতামত দেওয়ার চিন্তা রয়েছে।

খালেদা জিয়ার বড় বোন সেলিমা ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, খালেদা জিয়া টিকা নেবেন। তবে কবে এবং কোথায় গিয়ে নেবেন তা এখনি বলা যাচ্ছে না। টিকা নেওয়ার আগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। কারণ তার বয়স অনেক বেশি এবং তিনি অনেক রোগে আক্রান্ত।

তিনি আরও বলেন, তার (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা চলছে বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের তত্ত্বাবধানে। এখন তারা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেবেন। আবার দেশের যে চিকিৎসকরা আছেন, তারাও টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন।

সেলিমা ইসলাম নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়ে বলেন, আমি নিজেও গত কয়েকদিন অসুস্থ। এ কারণে তাকে (খালেদা জিয়াকে) দেখতে যাইনি। আমার ছেলে ও তার স্ত্রী করোনার টিকা নিয়েছেন। এখন তাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কি-না সেটাও পর্যবেক্ষণ করছি। তারপরে আমরা টিকা নেব।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, উনার (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা চলছে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের নেতৃত্বে। এখনও খালেদা জিয়ার টিকার বিষয়টি তার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। আর এ বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে, টিকা নেওয়ার ব্যাপারে কোনো নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নেই। তিনিও এ বিষয়ে ইতিবাচক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক বলেন, সাধারণত বয়স্কদের ক্ষেত্রে টিকা নেওয়ার পরে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, ব্যথাসহ বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আর খালেদা জিয়া যেমন বয়স্ক, তেমনি তার শরীরে নানা ধরনের রোগ রয়েছে। ফলে, টিকা নেওয়ার পরে তার শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়াটাই একদম স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু সে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাত্রা কতটা বেশি হবে সেটাই এখন বিবেচ্য বিষয়। এজন্য টিকা নেওয়ার বিষয়ে খালেদা জিয়ার নিজের ইচ্ছা এবং তার পরিবারের মতামতকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে।

বিএনপির সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বিএনপির যে নেতারা করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাদের শরীরে কী ধরনের রোগ রয়েছে এবং সেক্ষেত্রে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে সেগুলো দেখা হচ্ছে। এরপর তারা দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর তাদের শরীরে অবস্থা কী দাঁড়ায় সেটাও দেখা হবে। তখন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী টিকা নিতে কতটুকু উপযুক্ত তারও একটা ধারণা পাওয়া যাবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, খালেদা জিয়ার টিকা নেওয়ার বিষয়ে পরিবার ও তার চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেবেন। কারণ চিকিৎসকরা তার শরীরের অবস্থা সম্পর্কে ভালো জানেন।

খালেদা জিয়ার টিকা নেওয়ার বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটিতে কোনো আলোচনা হয়নি উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এটা তো দলীয় ফোরামে আলোচনা হওয়ার বিষয় না। তবে, আমরা তার উন্নত চিকিৎসা চাই। কিন্তু সরকার তাকে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে রাখছে। তিনি এখনও গৃহবন্দি হয়ে আছেন।

এএইচআর/এমএইচএস