নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো আলোচনা নয়
‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া এই অবৈধ সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) বিকেলে নাসিমন ভবনে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ের মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সময় এসেছে। আগামী ছয় মাস থেকে একবছর গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রম করব। এ সময়ের মধ্যে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। একটি অবৈধ অনির্বাচিত সরকারকে আর সময় দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ আবারও ষড়যন্ত্র করছে। আবার এদেশের মানুষের ভোট কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করে ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র করছে। সরকারের কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র করছে। আগামী নির্বাচনে ভোটচুরির ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সব ভোট চোররা আজ একজায়গায় যুক্ত হয়েছে। কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের নিয়ে সরকার একটা রেজিম তৈরি করেছে। এরা সরকার নয়, এরা দখলদার। এই সরকারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।
গুম, খুন, হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আজ আন্তর্জাতিকভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে দেশে ও দেশের বাইরে কেউ নেই। বাংলাদেশের জনগণ নেই। আর বাইরে গণতন্ত্রকামী কেউও নেই। কিছু দুর্নীতিবাজ লোককে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে আছে আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, দেশে দিন দিন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে যারা ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছে তাদেরও কোনো ভিত্তি নেই। দেশের মানুষ আজ কঠিন সময় পার করছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, কিন্তু আমরা থেমে নেই।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দিনের পর দিন জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। বিল্ডিংয়ে ফাউন্ডেশন না থাকলে যেভাবে ভেঙে যায়, সেভাবে এ অবৈধ সরকারও ভেঙে যাবে। তারা ভেঙে যাবার আগেই আমাদের ভেঙে ফেলতে হবে।
নেতাকর্মীদের নতুন স্লোগান হিসেবে ‘তুই চোর, তুই চোর, ভোট চোর, ভোট চোর’ বলার জন্য আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনার বদলে কেয়ারটেকার, ইভিএমের বদলে ব্যালট পেপার’, ‘বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে’— স্লোগানের মাধ্যমে জনগণকে উদ্ধৃত করতে হবে। প্রতিটি আন্দোলনে নতুন নতুন স্লোগান সৃষ্টি হয়। আমরা আন্দোলনে নেমে গেছি, শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন বন্ধ হবে না। এ আন্দোলনের জন্য মহিলাদের তৈরি হতে হবে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে মহিলাদেরকে ভূমিকা রাখতে হবে। আগামী দিনে আরো কঠিনভাবে রাজপথে থাকতে হবে। এক জায়গায় আন্দোলন হবে না, দেশের প্রতিটি কোনায় কোনায় জায়গায় জায়গায় আন্দোলন হবে। জনগণও আন্দোলনে জন্য প্রস্তুত আছে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস বলেন, এই দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার একমাত্র পথ বর্তমান সরকারের পদত্যাগ। নির্দলীয় সরকারের অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তর, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন। তিনি চট্টগ্রামের মহিলা দলকে রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য। ক্রমাগত এই দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিতে এমনিতেই দিশেহারা মানুষ। অন্যদিকে, জ্বালানি তেল, পানি, গ্যাস ও ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুই মূল্য বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের। সরকার জনগণের কথা চিন্তা করছে না। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকার মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে মেগা দুর্নীতি করছে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে একটি লুটপাটের দলে পরিণত হয়েছে। লুটপাটের টাকা বিদেশে পাচার করছে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করে বিরোধী শক্তিকে দমন-পীড়ন করে দাবিয়ে রেখেছে। বিনাভোটের এই সরকারের কারসাজিতে তেল, চালসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে দেশের মানুষ আজ দিশেহারা। খেটে খাওয়া মানুষ আজ অসহায়।
কেন্দ্রীয় মহিলাদলের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাড. শাহানা আক্তার শানুর সভাপতিত্বে এবং চট্টগ্রাম মহানগর মহিলাদলের সাবেক সভাপতি মনোয়ারা বেগম মনি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জেলী চৌধুরীর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক ফাতেমা বাদশা।
কেএম/এইচকে