সিপিবিতে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের আধিপত্যে ‘বড় ধস’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে (সিপিবি) মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের নেতৃত্বাধীন বলয়ের আধিপত্যে এবার বড় ‘ধস’ নেমেছে। পার্টির সদ্য সমাপ্ত কংগ্রেসে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির জন্য বিদায়ী কমিটি যে ৪৩ জনের নাম প্রস্তাব করেছিল, তাদের আটজনই বড় ব্যবধানে হেরে গেছেন প্রতিনিধিদের গোপন ভোটে।
এছাড়া মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমকে আরও এক মেয়াদের জন্য যাতে সভাপতি করা যায় সেজন্য গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রস্তাবটিও নাকচ করে দিয়েছেন প্রতিনিধিরা। ফলে কোনো ধরনের অঘটন না ঘটলে এবার আর দলের সভাপতি হতে পারছেন না সেলিম। নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটি আগামী শুক্রবার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ দলের সভাপতিমণ্ডলী নির্বাচন করবে। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক দলীয় একটি সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জানতে চাইলে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম গ্রুপের সম্ভাব্য জিএস প্রার্থী সাজ্জাদ জহির চন্দন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামী শুক্রবার নতুন কর্মকর্তাদের নাম ঘোষণা করা হবে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ ঘোষণা দেওয়া হবে।
গত ২৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে সিপিবির দ্বাদশ কংগ্রেস। শেষ দিনে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ও কন্ট্রোল কমিশন নির্বাচন করা হয়েছে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একই ব্যক্তি টানা দুই মেয়াদের বেশি থাকতে পারেন না।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম দলের সভাপতি পদে পরপর দুই মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। তাকে আবার সভাপতি হতে হলে গঠনতন্ত্রের সংশ্লিষ্ট ধারায় সংশোধনী আনতে হতো। সিপিবির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য কংগ্রেসের কার্যসূচি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে এ বিষয়ে কোনো সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়নি।
প্রথা ভেঙে শেষ মুহূর্তে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচনের আগমুহূর্তে একজন প্রতিনিধিকে দিয়ে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমকে আরও এক মেয়াদের জন্য সভাপতি পদে রাখতে ‘বিশেষ বিবেচনা’ করার অনুরোধ জানানো হয়। সেই সঙ্গে গঠনতন্ত্রের সংশ্লিষ্ট ধারা এক মেয়াদের জন্য স্থগিত রাখা বা সংশোধন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে প্রতিনিধিদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। পরে প্রস্তাবটি ভোটে দেওয়া হলে সেটি নাকচ হয়ে যায়। এর আগে গোপন ব্যালটের পরিবর্তে হাত তুলে ভোট দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেটিও গ্রহণ করেনি কংগ্রেস।
সাজ্জাদ জহির চন্দন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশেষ প্রস্তাব করা হয়েছিল, কিন্তু তা পাস হয়নি। অল্পের জন্য এ বিশেষ প্রস্তাব প্রয়োজনীয় সংখ্যক সমর্থন পায়নি।
সিপিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানান, দেড় দশকেরও বেশি সময় আগে মনজুরুল আহসান খান সভাপতি হওয়ার পর থেকেই দলে একটি বলয় গড়ে তোলার প্রক্রিয়া জোরদার হয়ে ওঠেছিল। মনজু ও সেলিমের অপছন্দের নেতাদের ক্রমান্বয়ে কোনঠাসা করা হতে থাকে। সভাপতিমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে একের পর এক সরিয়ে দেওয়া হয় দলের অনেক ত্যাগী নেতাকে।
মনজু ও সেলিমের অনুসারীরা দিনে দিনে এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন যে, তারা কোনো কোনো প্রবীণ নেতাকে প্রকাশ্যে অপমান ও করতেও দ্বিধা বোধ করতেন না। অনেকে তাদের লাঞ্ছনার শিকার হন। এসব কারণে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বাড়তে থাকে ক্ষোভ-অসন্তোষ। এবার কংগ্রেসে সে অসন্তোষেরই প্রকাশ ঘটালেন তৃণমূল প্রতিনিধিরা।
জানা গেছে, বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির প্রস্তাবিত তালিকার বাইরে যারা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন— শামছুজ্জামান সেলিম (প্রাপ্ত ভোট ২৩৯), এ এন রাশেদা (২২০), কাবেরী গায়েন (২২০), হাসান তারিক চৌধুরী (২৩৪), লুনা নূর (২৪৮), লাকী আক্তার (২৫৬), আসলাম খান (২১৭) ও মানবেন্দ্র দেব (২২৬)।
এদের মধ্যে শামছুজ্জামান সেলিম এক সময় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির প্রস্তাবিত তালিকায় নাম তাকা সত্ত্বেও যারা ভোটে হেরে গেছেন তারা হলেন— সাদেকুর রহমান শামিম (২১), আমিনুর ফরিদ (২০৪), শাহরিয়ার ফিরোজ (১৯১), আনোয়ার হোসেন সুমন (২০৭), সিরাজুম মুনীর (১৯৫), আবু সায়েম (১৮৯), মঞ্জুর মঈন (২০৩) ও শ ম কামাল হোসেন (১৭৩)। নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়েছেন এম এম আকাশ (৩২৪)। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন ডা. দিবালোক সিংহ (৩২০)। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ৩১৫।
পিএসডি/আরএইচ