বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আমরা নির্বাচন কমিশন নিয়ে কথা বলতে চাই না। এ কারণে চাই না যে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচন করবে না। আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। একমাত্র নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। যখন নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, সেদিনই বাংলার জনগণ ভোট দিতে পারবে। 

সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে নগরীর পলোগ্রাউন্ড স্কুল সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির চোরাপথে ক্ষমতায় আসার অভ্যাস নেই। তাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।

তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন জনগণের ভোটের মাধ্যমে। আর আজকের প্রধানমন্ত্রী তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন জনগণের ভোটচুরি করে। এই সরকারের জনগণের প্রতি কোনো মায়া-দয়া নেই। কারণ তাদের ভোটের প্রয়োজন নেই। যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে, আপনারা আর কোনোদিন ভোট দিতে পারবেন না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যখন নির্বাচন হবে, সেদিনই বাংলার জনগণ ভোট দিতে পারবে। ইনশাল্লাহ বিএনপি সেদিন সরকার গঠন করবে। বিএনপি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না।

বিএনপির এ নেতা বলেন, আমাদের বাংলাদেশ আজ অদ্ভূত এক দেশে পরিণত হয়েছে। এখানে ৪০ টাকা ডিমের হালি, তেলের লিটার ১৮০ টাকা, চালের কেজি ৭০ টাকা। সবকিছুর দাম বেড়েছে, শুধু বাড়েনি মানুষের দাম। একদিকে মানুষ দ্রব্যমূল্য নিয়ে দিশেহারা আর সরকারের নেতা, পাতি নেতারা ব্যস্ত লুটপাটে। মফস্বলের ছাত্রলীগ নেতার অ্যাকাউন্টে পাওয়া যায় দুই হাজার কোটি টাকা।

মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় গেছে তখনই তাদের নেতাকর্মীরা লুটপাট করেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। ১৯৭৩-৭৪ সালে তারা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছিল। গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলায় ৩৫ হাজার নেতাকর্মীকে খুন করেছিল। চারটি পত্রিকা ছাড়া সব পত্রিকা নিষিদ্ধ করেছিল। কোনো টেলিভিশন চ্যানেল ছিল না। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে গণতন্ত্র এনে দিয়েছিল। কিন্তু সেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আজকের আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো তফাৎ নেই। 

মির্জা আব্বাস আরও বলেন, দেশের মানুষ কথা বলতে পারে না। কথা বললে গুম হয়ে যায়, খুন হয়ে যায়। বিএনপির নেতাকর্মী সবার নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। এই প্রধানমন্ত্রী থাকলে দেশে কোনোদিন গণতন্ত্র ফিরে আসবে না। আর গণতন্ত্র ফিরে না এলে আমাদের দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব থাকবে না। 

বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির নেত্রীর অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তা, বিএনপির অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তা। এই জনপ্রিয়তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগ আর কোনোদিন রাজত্ব করতে পারবে না। এ কারণে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে, হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। 

প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, চট্টগ্রামবাসী শেখ হাসিনার সরকারকে এক মুহূর্তও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমবে না। তাই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। 

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সরকারের অনুগত লোক দিয়েই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এটা আরেকটি হুদা কমিশন। নতুন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা সরকারের পছন্দের লোক। তারা সবাই সরকারের অনুগত, সুবিধাভোগী ও তোষামোদকারী। এদের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। শেখ হাসিনার সরকার বা তাদের করা কমিশনের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। ওই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। তার অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে তাতে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, বীর চট্টলা আমাদের আবেগ-অনুভূতির জায়গা। এই চট্টগ্রাম থেকে এরশাদের পতন হয়েছে, শেখ হাসিনার পতন হবে। 

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দুর্নীতির কারণে এখন এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে যে, প্রতিটি ক্ষেত্রে ২০-২৮ শতাংশ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। বাজারের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়েছে। তারা কৃত্রিমভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। চরম দুর্নীতির প্রভাব বাজারে গিয়ে পড়ছে। লাগামহীনভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় জনগণকে তার মাশুল দিতে হচ্ছে। 

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, কৃষকদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রমুখ।

কেএম/জেডএস