এগিয়ে চলছে ঢাকা পোস্ট
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আজ গোটা সাংবাদিকতায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সংবাদমাধ্যম কনটেন্ট প্রচারের জন্য সবার আগে ডিজিটাল কৌশল প্রয়োগে প্রাধান্য দিচ্ছে। সংবাদ জানতে পাঠক সবার আগে এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে একদিন প্রাধান্য দেবে— এই ধারণা ২০১৩ সালে দিয়েছিলেন ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার সম্পাদক লিওনেল বারবার। প্রিন্ট পত্রিকার সম্পাদক হয়েও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে সংবাদ পরিবেশনের কাজে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। ছাপা কাগজকে রেখেছিলেন দ্বিতীয় স্থানে। আধুনিক যুগে কোনো সংবাদমাধ্যম ডিজিটাল মিডিয়াকে উপেক্ষা করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। সংবাদমাধ্যমের জন্য অপার সম্ভাবনা এনে দিয়েছে এই ডিজিটাল মাধ্যম।
সাংবাদিকতায় পরিবর্তনের ঢেউ পশ্চিমা বিশ্ব ছাপিয়ে আমাদের দেশেও এর ছোঁয়া লেগেছে। বিডিনিউজ২৪ডটকম-এর হাত ধরে বাংলাদেশে যে পূর্ণাঙ্গ অনলাইন সাংবাদিকতার যাত্রা শুরু হয়েছিল তাতে আজ যুক্ত হয়েছে জাতীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল। দ্রুত ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনেক নিউজ পোর্টালই বাংলাদেশের অনলাইন সাংবাদিকতাকে সমৃদ্ধ করে চলেছে। অনলাইন সাংবাদিকতার চাহিদা ও গুরুত্ব বাড়তে থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতোমধ্যে চালু করেছে অনলাইন সাংবাদিকতা কোর্স। এটি নিয়ে বাংলায় লেখা হচ্ছে বই-পুস্তক।
বিজ্ঞাপন
বিগত পাঁচ বছরের কথা যদি বলি তাহলে এ সময়ে দেশের অনলাইন সাংবাদিকতায় ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। নিউজ পোর্টালগুলোতে মাল্টিমিডিয়া তথা ইন্টার্যাক্টিভ কনটেন্টের ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। অনলাইনে খবর পড়া কিংবা দেখার ক্ষেত্রেও পাঠক-দর্শকের রুচির পরিবর্তন ঘটছে। নিউজ পোর্টালগুলো খবর প্রচারে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে।
নানাবিধ অনলাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ পরিবেশনে বৈচিত্র্য আনা, মাল্টিমিডিয়াকে নিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ, ঘটনা ঘটার দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্ভুল ব্রেকিং নিউজ সরবরাহ করা, আলোচিত ঘটনা নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশের পাশাপাশি একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে ঢাকা পোস্ট
নানাবিধ অনলাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ পরিবেশনে বৈচিত্র্য আনা, মাল্টিমিডিয়াকে নিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ, ঘটনা ঘটার দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্ভুল ব্রেকিং নিউজ সরবরাহ করা, আলোচিত ঘটনা নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশের পাশাপাশি একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে ঢাকা পোস্ট। ওয়েবসাইট চালুর প্রথম দিন থেকেই খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি ঢাকা পোস্টকে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে খবর প্রকাশের নয়া যে কৌশল তারা নিয়ে এসেছে তা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক কাজে প্রয়োগ করেছি।
ঢাকা পোস্টের মারফতেই জানতে পেরেছি, প্রতিদিন লক্ষাধিক পাঠক ঢাকা পোস্টের অনলাইনে খবর পড়েন। সত্যের সাথে সন্ধি— এই মর্মকে সামনে নিয়ে ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে ঢাকা পোস্ট। মাত্র এক বছর আগে চালু হওয়া নিউজ পোর্টালটি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অন্যতম অগ্রগামী অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলোর একটি। পেশাগত দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা চর্চা করে যাওয়া এই গণমাধ্যমের কেউ কেউ এরই মধ্যে অর্জন করেছেন মীনা পুরস্কার, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি পুরস্কার ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের বর্ষসেরা পুরস্কার। পাঠক ও দর্শকপ্রিয়তা পাওয়া ঢাকা পোস্ট বাংলাদেশের অনলাইন সাংবাদিকতা চর্চাকে অনন্য স্থানে নিয়ে গেছে।
শুরু থেকে ঢাকা পোস্টের অনলাইনে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে বেশকিছু কর্মতৎপরতা চোখে পড়েছে। সেখান থেকে আলাদা করে কয়েকটি বিষয়ে আজ এখানে উল্লেখ করলাম-
ওয়েব প্যাকেজ
ঢাকা পোস্টকে যদি আপনি অন্য আট-দশটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল থেকে আলাদা করে উল্লেখ করতে চান তাহলে অবশ্যই এর ‘ওয়েব প্যাকেজ’ কনটেন্টগুলোকে বিশেষভাবে উল্লেখ করেত হয়। ঘটনার গভীরে গিয়ে তা পাঠকের জন্য তুলে আনা এবং সাথে ছবি, ভিডিও ও অডিও যুক্ত করে পুরো সংবাদ পরিবেশনকে আরও ইন্টার্যাক্টিভ করে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা পোস্ট। তাদের বেশিরভাগ প্রতিবেদনের সঙ্গে ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এখানে বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয়, ২০২১ সালের জুনে প্রকাশ পাওয়া সাংবাদিক জসীম উদ্দিনের করা ‘সীমান্তে টাওয়ার বসিয়ে তথ্য নিচ্ছে মিয়ানমার’ শীর্ষক আলোচিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি।
ঢাকা পোস্টকে যদি আপনি অন্য আট-দশটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল থেকে আলাদা করে উল্লেখ করতে চান তাহলে অবশ্যই এর ‘ওয়েব প্যাকেজ’ কনটেন্টগুলোকে বিশেষভাবে উল্লেখ করেত হয়। ঘটনার গভীরে গিয়ে তা পাঠকের জন্য তুলে আনা এবং সাথে ছবি, ভিডিও ও অডিও যুক্ত করে পুরো সংবাদ পরিবেশনকে আরও ইন্টার্যাক্টিভ করে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা পোস্ট
অত্যন্ত তথ্যবহুল এই লেখায় ছবি-ভিডিও কনটেন্ট যুক্ত করে সেটি উপস্থাপনায় অনলাইন কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের চমৎকার ব্যবহার আমরা দেখতে পেয়েছি। রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হতে পারে এমন তথ্য, উপাত্ত ও প্রমাণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা প্রতিবেদনটি নিয়ে জাতীয় সংসদেও আলোচনা করেছিলেন সংসদ সদস্যরা।
ওয়েব ভিডিও
ওয়েব ভিডিও নিয়ে শুরু থেকেই ঢাকা পোস্টের বিশেষ পরিকল্পনা ছিল। এখানে নিয়োগ দেওয়া হয় একদল তরুণ সাংবাদিককে। তাদের বলা হয়, ঘটনার নানা দিক তুলে আনতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার। সংবাদ কনটেন্ট সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ এবং প্রচারের যাবতীয় কাজ মোবাইল ফোন দিয়ে করার মুনশিয়ানা অর্জন করতে হবে। নতুন কর্মীদের শুরুতে মোবাইল জার্নালিজমের ওপর ধারণা দিতে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। দেশজুড়ে ঢাকা পোস্টের সাংবাদিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয় মোবাইলবান্ধব মাইক্রোফোন ও ট্রাইপড। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকের লাইভ ফিচার ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সরাসরি ভিডিও প্রচার শুরু করে ঢাকা পোস্ট। ঘটনা ঘটার কিছু সময়ের মধ্যে ঢাকা পোস্টের ফেসবুক পেজে লাইভ দেখতে পাওয়ার বিষয়টি হয়তো অনেককে অবাক করেছে। তবে ভিডিও নিয়ে ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে আলাদা করে কোনো বিভাগ খুঁজে পেলাম না। ভিডিও নিয়ে আলাদা কোনো বিভাগ থাকলে সহজেই সাইট থেকে সেই কনটেন্ট দেখা যেত। বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে পারে ঢাকা পোস্ট কর্তৃপক্ষ।
ঘটনা ঘটার কিছু সময়ের মধ্যে ঢাকা পোস্টের ফেসবুক পেজে লাইভ দেখতে পাওয়ার বিষয়টি হয়তো অনেককে অবাক করেছে। তবে ভিডিও নিয়ে ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে আলাদা করে কোনো বিভাগ খুঁজে পেলাম না। ভিডিও নিয়ে আলাদা কোনো বিভাগ থাকলে সহজেই সাইট থেকে সেই কনটেন্ট দেখা যেত। বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে পারে ঢাকা পোস্ট কর্তৃপক্ষ
এখনও ভাবতে অবাক লাগে যে ২০১৪ সালে দেশের অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে খুবই সীমিত পরিসরে ওয়েব ভিডিওর আয়োজন ছিল। সময়ের পরিবর্তনে অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে ভিডিও নিয়ে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব ও বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এখন প্রায় সব নিউজ পোর্টালেই ভিডিও বিভাগ চালু হয়েছে। ওয়েব ভিডিওর জন্য প্রযোজক থেকে শুরু করে মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক, মোবাইল সাংবাদিক, কনটেন্ট নির্মাতা, ভিডিওগ্রাফার, গ্রাফিক্স ডিজাইনারসহ বিভিন্ন পেশায় লোকবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে অনলাইন সাংবাদিকতা চর্চার ইতিবাচক দিক বলব।
লাইভ ব্লগ
বড় ঘটনার ব্রেকিং নিউজ অথবা দিনের কোনো চলমান ঘটনা অনলাইন নিউজ পোর্টালে পরিবেশনের ক্ষেত্রে ‘লাইভ ব্লগ’ হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর ফিচার। ছোট-ছোট বাক্যে খবরের আপডেট জানানোর পাশাপাশি ছবি, ভিডিও, টুইট, ম্যাপসহ বিভিন্ন কনটেন্ট সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ধারাবাহিক উপস্থাপন হচ্ছে লাইভ ব্লগ। যদিও লাইভ ব্লগ অনলাইন নিউজ পোর্টালের জন্য একেবারে নতুন ধরনের ফিচার না হলেও বাংলাদেশের অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে এর ব্যবহার তেমন দেখা যায় না। গত ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে ওয়েবসাইটে লাইভ ব্লগ প্রচার করে ঢাকা পোস্ট। ছোট ছোট বাক্যে খবরের আপডেট, সাথে ভিডিও ও ছবি যুক্ত করে পুরো সংবাদ পরিবেশন অনেক বৈচিত্র্যময় করে উপস্থাপন করা হয়। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা এবং ওই অঞ্চলের ভোটাররা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে কী তথ্য জানাচ্ছেন বা ছবি প্রকাশ করছেন তার লিংক এমবেড করে ঢাকা পোস্টের লাইভ ব্লগের পাতায় আপলোড করে দেওয়া যেত। এতে সংবাদ পরিবেশনে পাঠকের সম্পৃক্ততা বাড়ত।
ওয়েব স্টোরিজ
বাংলাদেশের অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর জন্য ওয়েব স্টোরিজ-কে বলা চলে ওয়েবসাইটে ডিজিটাল কনটেন্ট পরিবেশনের সর্বশেষ সংস্করণ। দেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যমের পাঠকদের সামনে এই ওয়েব স্টোরিজ সর্বপ্রথম নিয়ে আসে ঢাকা পোস্ট। ৯ অনুপাত ১৬ অ্যাসপেক্ট রেশিওতে তৈরি ও প্রচার করা এক-একটি ওয়েব স্টোরিজ প্রযুক্তিনির্ভর সমসাময়িক অনলাইন সাংবাদিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কোনো একটি ঘটনার ওপর সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা, ছবির সঙ্গে ক্যাপশন, মোশন গ্রাফিক্স ব্যবহারের মাধ্যমে পাঠকের কাছে প্রতিবেদনটি একটি ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা করতে সক্ষম হয়। ঢাকা পোস্ট শুরু থেকেই ওয়েব স্টোরিজ নিয়ে কাজ করছে এবং এটি নিয়ে আলাদা ল্যান্ডিং পেজ আছে তাদের সাইটে। এখন পর্যন্ত প্রচার হওয়া ওয়েব স্টোরিজে তারা বিনোদন ও লাইফ স্টাইল কনটেন্টকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। দিনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়েও ওয়েব স্টোরিজ করা যেতে পারে। যেহেতু ওয়েব স্টোরিজ ফিচারটি বাংলাদেশের অনলাইন নিউজ পোর্টালের জন্য তেমন পরিচিত না, তাই ফিচারটি ঢাকা পোস্টের হোম পেজে পরিবেশন করলে হয়ত পাঠক সহজেই তা দেখার ও জানার সুযোগ পেত।
ঢাকা পোস্ট শুরু থেকেই ওয়েব স্টোরিজ নিয়ে কাজ করছে এবং এটি নিয়ে আলাদা ল্যান্ডিং পেজ আছে তাদের সাইটে। এখন পর্যন্ত প্রচার হওয়া ওয়েব স্টোরিজে তারা বিনোদন ও লাইফ স্টাইল কনটেন্টকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। দিনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়েও ওয়েব স্টোরিজ করা যেতে পারে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢাকা পোস্ট
পাঠক-দর্শক সংবাদের জন্য এখন বেশি নির্ভর করছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর। পাঠক খবর জানতে সংবাদমাধ্যমের জন্য অপেক্ষা করবে বা তার কাছে যাবে– এই ধারণা নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে কাজ করলে চলবে না। সংবাদমাধ্যমকে পাঠকের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং পাঠককে খুঁজে পেতে হলে প্রয়োজনে একাধিক প্ল্যাটফর্মে আসতে হবে। ঢাকা পোস্ট শুরু থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সবকটি প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় রয়েছে। বিশেষ করে ফেসবুকে তাদের সাইটে আপলোড হওয়া নিয়মিত খবরের আপডেট দেওয়া এবং ফেসবুক লাইভ ভিডিও আলাদা করে উল্লেখ করতে হয়। ফেসবুকে খবরের লিংক শেয়ার করার পাশাপাশি আরও নানাভাবে এখানে কনটেন্ট প্রচারের সুযোগ রয়েছে। যেহেতু বেশির ভাগ ট্রাফিক আসে মোবাইল থেকে তাই মোবাইল উপযোগী কনটেন্ট বেশি বেশি করে প্রচার করতে হবে। বিভিন্ন অ্যাসপেক্ট রেশিও ব্যবহার করে পোস্ট তৈরি করা যেতে পারে। স্টোরিজ ফিচারের জন্য স্থির ছবির পাশাপাশি ভিডিও আপলোড করা যেতে পারে।
যেহেতু সাধারণ নাগরিকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে দিতে পারছেন এবং অনেক ঘটনা তারাই সবার আগে শেয়ার করছেন এবং মূলধারার গণমাধ্যম তা প্রচার করছে; তাই আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন পেশাদার সাংবাদিকতায় নাগরিক সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। ঢাকা পোস্টের উচিত হবে ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট নিয়ে নিয়মিত কাজ করা। ‘নাগরিক সাংবাদিকতা’ নামে তাদের মূল ওয়েবসাইটে আলাদা বিভাগ চালু করা যেতে পারে
ঢাকা পোস্টকে জানতে হবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের কোথায়, কোন কনটেন্টের পেছনে তাদের পাঠক-দর্শক বেশি সময় দিচ্ছে এবং সেই অনুযায়ী প্ল্যাটফর্মভিত্তিক কনটেন্ট প্রচারের কৌশল তৈরি করতে হবে।
ওয়েবসাইটের মোবাইল ভার্সন ও মোবাইল অ্যাপ
সংবাদ জানা ও পাওয়ার ক্ষেত্রে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে চলেছে মোবাইল ডিভাইস। নতুন কনটেন্ট তৈরির আগে পরীক্ষামূলকভাবে দেখে নেওয়া উচিত তা মোবাইলের ছোট স্ক্রিনের জন্য উপযোগী কি-না। ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটের মোবাইল ভার্সন ও মোবাইল অ্যাপ উভয়কেই মোবাইল উপযোগী হিসেবে রাখতে হবে। যেমন- নিউজগুলো ফ্রন্ট লোডেড (সোয়াইপ করে পড়ার ব্যবস্থা) হিসেবে দেখতে পাওয়ার ফিচার চালু রাখতে হবে। এতে করে প্রেস বা চাপ দিয়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরি বা মেন্যুতে না গিয়ে স্ক্রিনের ওপরে সোয়াইপ করে একের পর এক সব নিউজ পড়ে নেওয়া যাবে। সেই সাথে ওয়েবসাইটের থ্রি ডট মেন্যু বা থ্রি ভার্টিক্যাল মেন্যু অপশনকে মোবাইলের জন্য ডান দিকে নিয়ে যেতে হবে। কারণ, বেশিরভাগ মানুষই ফোন ডান হাতে রেখে কাজ করে। এক হাতে রেখে ফোন ধরলে তখন থ্রি ডট মেন্যুতে প্রেস করা বা চাপ দেওয়া সহজ হবে। আপাতত ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটের মোবাইল ভার্সন বা অ্যাপে কোথাও সেটি দেখছি না। পাঠক-দর্শকের জন্য সহজ নেভিগেশন, রেসপন্সিভ ওয়েব সাইট, রং ও ফন্ট এবং কাস্টমাইজড ফিচার সংবলিত ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ থাকতে হবে। ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটের মতো তাদের অ্যাপেও যদি ট্রেন্ডিং খবরের বিষয়গুলো উল্লেখ করে দেওয়া হতো তাহলে অ্যাপের পাঠকরা ওই সংক্রান্ত খবর জানতে আগ্রহী হবেন। ওয়েবসাইটের মতো অ্যাপেও কোনো মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট নিয়ে আলাদা আয়োজন রাখা হয়নি। বিষয়টি সংযুক্ত করলে পাঠকের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বলে মনে করি।
ঢাকা পোস্ট তাদের অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড-এর জন্য অবমুক্ত করলেও আইওএস-এর জন্য এখনও কোনো ব্যবস্থা রাখেনি। ফলে আইফোন ব্যবহারকারীরা ঢাকা পোস্টের অ্যাপ ব্যবহার করতে পারছেন না।
ঢাকা পোস্ট আরও যা করতে পারে
বদলে যাওয়া যে সাংবাদিকতার কথা আমরা বলছি, সেখানে পাঠক-দর্শকের ভূমিকার পরিবর্তন আসাটাও দারুণভাবে আধুনিক সাংবাদিকতায় প্রভাব ফেলেছে। যেহেতু সাধারণ নাগরিকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে দিতে পারছেন এবং অনেক ঘটনা তারাই সবার আগে শেয়ার করছেন এবং মূলধারার গণমাধ্যম তা প্রচার করছে; তাই আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন পেশাদার সাংবাদিকতায় নাগরিক সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। ঢাকা পোস্টের উচিত হবে ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট নিয়ে নিয়মিত কাজ করা। ‘নাগরিক সাংবাদিকতা’ নামে তাদের মূল ওয়েবসাইটে আলাদা বিভাগ চালু করা যেতে পারে। তবে ঢাকা পোস্টকে শুরুতেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে সংশ্লিষ্ট কনটেন্ট খবর হওয়ার উপযোগী কি-না। কারণ, সব ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট খবর হয় না।
আমাদের দেশে ইউজার জেনারেটেড কনটেন্টের বিশাল এক ভাণ্ডার তৈরি হয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলোর উচিত যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নির্বাচিত কনটেন্ট প্রচার করা। এখনও আমাদের দেশের প্রথম সারির অনেক গণমাধ্যম সাংবাদিকতার কাজে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেনি। এই কাজ করার দক্ষ জনবল ও টিম তৈরির জন্য আমাদের যথেষ্ট লোকবল তৈরি হয়নি এখনও।
একটি লং-রিড স্টোরিতে সাধারণত একাধিক ছবি, ছবির অ্যালবাম, ইন্টার্যাক্টিভ ম্যাপ, ভিডিও, গ্রাফিক্স, কখনও ৩৬০ ডিগ্রি ছবি, ভিআর (ভার্চুয়াল রিয়ালিটি), ডিজিটাল স্টোরি ইত্যাদির ব্যবহার হয়ে থাকে। ঢাকা পোস্ট অ্যাডভান্সড মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে লং-রিড প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে
সবধরনের মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট নিয়ে ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কোনো লং-রিড বা লং-ফর্ম প্রতিবেদন দেখা যায়নি। ওয়েবসাইটে মাঝে মাঝে ইন-ডেপথ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় কিন্তু সেখানে নানাবিধ মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টের উপস্থিতি তেমন থাকে না। একটি লং-রিড স্টোরিতে সাধারণত একাধিক ছবি, ছবির অ্যালবাম, ইন্টার্যাক্টিভ ম্যাপ, ভিডিও, গ্রাফিক্স, কখনও ৩৬০ ডিগ্রি ছবি, ভিআর (ভার্চুয়াল রিয়ালিটি), ডিজিটাল স্টোরি ইত্যাদির ব্যবহার হয়ে থাকে। ঢাকা পোস্ট অ্যাডভান্সড মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে লং-রিড প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে।
আমাদের দেশীয় অনলাইন নিউজ পোর্টালে এখনও ইমেরসিভ কনটেন্ট যেমন ৩৬০ ডিগ্রি ছবি বা ভিডিও নিয়ে চর্চা হয় না বললেই চলে। প্রযুক্তিনির্ভর গল্প বলার এই নয়া কৌশল অবলম্বন করে ঢাকা পোস্ট অনলাইন সাংবাদিকতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। প্রিমিয়াম কনটেন্ট হিসেবে তা দেখার জন্য সাবস্ক্রিপশন সুবিধা চালুর সুযোগও রয়েছে।
ছোট দৈর্ঘ্যের ভিডিও দেখার জন্য টিকটক এখন অনেক বেশি জনপ্রিয়। ঢাকা পোস্ট টিকটক ব্যবহার করলেও সেখানে নিয়মিত কনটেন্ট আপলোড হচ্ছে না। এখনকার তরুণদের মাঝে পত্রিকা পড়া বা টেলিভিশনে খবর দেখার হার ক্রমশই কমছে। তাই খবর নিয়ে তরুণ পাঠক-দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে টিকটিক হতে পারে চমৎকার একটি মাধ্যম। টিকটকের জন্য আলাদা কনটেন্ট পরিকল্পনা সাজাতে পারে ঢাকা পোস্ট
বাংলাদেশে অনলাইন নিউজ পোর্টালে ডেটা-ভিত্তিক প্রতিবেদন খুব কমই দেখা যায়। সারা বিশ্বেই ডেটা সাংবাদিকতা আধুনিক সাংবাদিকতার অন্যতম বিকাশমান খাত হিসেবে ধরা হয়। আমাদের দেশে আপাতত দৈনিক পত্রিকা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড নিয়মিত ডেটা-নির্ভর সাংবাদিকতার চর্চা করছে। তথ্যচিত্র, চার্ট, গ্রাফিক্স, ম্যাপ, সংখ্যা— ইত্যাদির সমন্বয়ে ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রতিবেদনকে আরও পাঠকপ্রিয় করে তোলা যায়। ঢাকা পোস্ট আশা করি আগামীতে ডেটা-নির্ভর বা ইনফোগ্রাফিক্স তৈরির দিকে নজর দেবে।
ছোট দৈর্ঘ্যের ভিডিও দেখার জন্য টিকটক এখন অনেক বেশি জনপ্রিয়। ঢাকা পোস্ট টিকটক ব্যবহার করলেও সেখানে নিয়মিত কনটেন্ট আপলোড হচ্ছে না। এখনকার তরুণদের মাঝে পত্রিকা পড়া বা টেলিভিশনে খবর দেখার হার ক্রমশই কমছে। তাই খবর নিয়ে তরুণ পাঠক-দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে টিকটিক হতে পারে চমৎকার একটি মাধ্যম। টিকটকের জন্য আলাদা কনটেন্ট পরিকল্পনা সাজাতে পারে ঢাকা পোস্ট।
দক্ষ ও যোগ্য কনটেন্ট নির্মাতাদের সৃজনশীলতা তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের জন্য আয়ের নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে নিউজ পোর্টালগুলো। ঢাকা পোস্ট তাদের বিশেষ কনটেন্ট তৈরির কাজে আউটসোর্সিং শুরু করতে পারে। এটিও আমাদের অনলাইন সাংবাদিকতায় কাজের পরিধি আরও সম্প্রসারণ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি
বিবিসি, সিএনএন কিংবা আলজাজিরার মতো বিশ্বগণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিশেষ বিশেষ কনটেন্ট তৈরিতে নিয়মিত আউটসোর্সিং করে থাকে। বিশেষ করে করোনাকালীন অনেক গণমাধ্যমকেই আউটসোর্সিং উপায়ে কনটেন্ট বানাতে দেখা গেছে। দক্ষ ও যোগ্য কনটেন্ট নির্মাতাদের সৃজনশীলতা তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের জন্য আয়ের নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে নিউজ পোর্টালগুলো। ঢাকা পোস্ট তাদের বিশেষ কনটেন্ট তৈরির কাজে আউটসোর্সিং শুরু করতে পারে। এটিও আমাদের অনলাইন সাংবাদিকতায় কাজের পরিধি আরও সম্প্রসারণ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
পরিশেষে বলতে চাই, ঢাকা পোস্টের হাত ধরে বাংলাদেশের অনলাইন সাংবাদিকতা আরও বহু দূর এগিয়ে যাক, সমৃদ্ধ হোক আমাদের অনলাইন সাংবাদিকতা; তৈরি হোক দক্ষ ও প্রযুক্তিমনা সাংবাদিক। জয় হোক নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার।
ড. জামিল খান ।। সহকারী অধ্যাপক, গণমাধ্যম অধ্যয়ন ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ইউল্যাব