ভালোবাসা কারে কয়!
ভালোবাসা কতদূর এগুলো? খবর নেওয়া হয় না ইদানীং। ভুল বললাম, দীর্ঘদিন বলা ঠিক হবে। সেই কতদিন আগে শহরের সুন্দরতম ছাদে, তাকে দেখে কাককেও আমার বুলবুলি মনে হয়েছিল। তারপর কতদিন তার সঙ্গে বসেছি আমতলায়।
এমন দিনে গাছ ভরে যেত মুকুলে। আমার তখন ইচ্ছে হতো তার চুলে শিমুল গুঁজে দেই। আমের মুকুলকে শিমুল ভেবে গুঁজেও দিয়েছিলাম একবার। এ নিয়ে তার কোনো অভিযোগ, অভিমান ছিল না।
বিজ্ঞাপন
শহরে এসময়টায় কেমন এক হাওয়া বয়ে যেত। সেই হাওয়ার সৌরভ কি মুকুলের, পলাশের, পারিজাতের নাকি তার? এমন দিন এলেই বিভ্রমে পড়ে যেতাম।
বিভ্রম এমন যেন, আমি তাকে নাকি অন্য কোথাও মন দিয়ে বসে আছি। নাকি সেও আমাকে মন না দিয়ে অন্য কোথাও উড়ছে। সময়টা যখন এমন তখন কেমন বিহ্বলতায় পেয়ে বসতো আমাদের।
তখন কি শহরে আমরা দুজনই ছিলাম? কত নদীই তো বয়ে যেতে দেখেছি। তখন প্রেমিক চাইলে প্রেমিকা নদীর মতো বয়ে যেত। প্রেমিকা চাইলে প্রেমিক নতজানু হতো, যেমন আকাশ হয় সাগরের ডাকে।
শহর পুরনো হয়েছে। পুরনো আমরাও। তাই ভালো একটা বাসার খোঁজে চন্দ্রমল্লিকার খোঁজ নেওয়া হয়নি। লোকমুখে শুনি ভালোবাসা এগিয়ে গেছে অনেকদূর। কতদূর?
মহাকাব্য কি কেবল লিখেছেন কায়কোবাদ? আমরা যে লিখে গেছি দিস্তা দিস্তা। এক চিরকুটে মহাকাব্য। শহরে বিলবোর্ড আসার আগেই সিনেমা হলগুলোতে কি কেউ দেখেনি আমাদের জুটির সুপারহিট আলিঙ্গন?
শহর পুরনো হয়েছে। পুরনো আমরাও। তাই ভালো একটা বাসার খোঁজে চন্দ্রমল্লিকার খোঁজ নেওয়া হয়নি। লোকমুখে শুনি ভালোবাসা এগিয়ে গেছে অনেকদূর। কতদূর?
শহরে ভালো একটা বাসা পেতে নাকি আজকাল আকাশের দিকে তাকাতে হয়। অট্টালিকা ছুঁতে চায় আকাশ। ভালোবাসা পেতেও নাকি আসমানের কাছাকাছি ঘর থাকা চাই। তার মানে ভালোবাসা এখন আর হাতের হাওয়াই মিঠাই নেই। শুয়োপোকা নয়, সম্পর্কে নাকি ঘুণপোকা ধরেছে।
তাই এখন আর প্রেমিক-প্রেমিকাকে ঘিরে প্রজাপতি ওড়ে না। ক্যাফেতে মৃদু আলোয় সম্পর্কের যাওয়া আসা। শহরের পথে পথে পাতা ঝরে পড়ে। কিন্তু কোনো জুটি সেখানে ভালোবাসায় স্নাত হয়ে দাঁড়ায় না। মান্দার- অশোকের উদাস হওয়ার এমন অপচয় দেখে নিঃশ্বাস দীর্ঘ হয় আমার।
ফেসবুকের অন্দরে লিখেও পিপাসা মিটে না। খুদে বার্তার দিনেও মন এক মহাকাব্য লেখার ব্যাকুলতা নিয়ে বসে থাকে। আজকের দিনটা কোনো এক তুমির জন্য নিবেদিত। তাকে দিলাম ডাবের মতো এক চাঁদ।
আমি যে এখনো নারীর হুইসেল শুনি। আসছে এগিয়ে সে আমার করতলের সরোবরে ভেসে যেতে। নারীও নিশ্চিত জানে ধূলির ভাঁজে ভাঁজে আমি তাকে নিয়ে হতে চাই নিরুদ্দেশ।
পাই না পাই তাকে আলিঙ্গনে, মনের ভাঁজে তাকে তো রেখে দেওয়া আছে গাঁদা পাপড়ির মতো। ফুটপাতের বেঞ্চের প্রেমিক-প্রেমিকারা যারা ক্যাফের নিয়ন আলোয় ঢুকে পড়েছে। ওরাও এগিয়ে যেতে পারেনি বেশিদূর।
এখনো পথের প্রতিটি মুখকে তার প্রিয়তমের অবয়বের মতোই মনে হয়। হুটহাট ভুলে যায় প্রিয়তমের নাম। ভালোবাসা যদি বেশিদূর এগিয়েই যেত, তাহলে এমন বসন্ত দিনে কেন, আমার চোখ কেন আজও কারো মুখ মনে পড়ে হয়ে যায় নায়াগ্রা জলপ্রপাত।
আমার মতো করেই কাককে এখনো প্রেমিকারা বুলবুলি কিংবা ফিঙে ভেবে বসে। নাহ, ভালোবাসা বেশি দূর এগোতে পারেনি। ফেসবুকের অন্দরে লিখেও পিপাসা মিটে না। খুদে বার্তার দিনেও মন এক মহাকাব্য লেখার ব্যাকুলতা নিয়ে বসে থাকে। আজকের দিনটা কোনো এক তুমির জন্য নিবেদিত। তাকে দিলাম ডাবের মতো এক চাঁদ।
সেও বুঝি খালি কুলো নিয়ে আসবে আমার কাছে? না হয় রক্তকরবী ঝরে পড়েছে এবার আগেই। তাই বলে রাজার কাছে আসবে সে রিক্ত হয়ে, আজকাল নন্দিনীরা বুঝি এভাবেই আসে?
আমার নন্দিনী আসবে জানি আজ, আমার জন্যে, কী ভাবছেন চকলেট নিয়ে? মোটেও না। ভালোবাসায় আমার নন্দিনীও বেশিদূর এগোতে পারেনি, তার টোলে ডুবেছে নরম ভোর। সেই ভোর আজ আমার।
তুষার আবদুল্লাহ ।। গণমাধ্যমকর্মী